১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেন্টমার্টিন আবারো দাবি মিয়ানমারের

রাষ্ট্রদূতকে তলব তীব্র প্রতিবাদ; দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ড
-

সরকারি ওয়েবসাইটের মানচিত্রে বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপকে আবারো নিজেদের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মিয়ানমার। প্রতিবাদে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (সিডিএ) অং খোয়াকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সিডিএ তাৎক্ষণিকভাবে ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত অক্টোবরেও একই দাবি করেছিল মিয়ানমার। উসকানিমূলক এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে তখন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ’কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। ঘটনাটিকে অনিচ্ছাকৃত মন্তব্য করে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন রাষ্ট্রদূত। এরপর মিয়ানমার মানচিত্র সংশোধন করে নেয়। কিন্তু আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায়।
সেন্টমার্টিন নিয়ে মিয়ানমারের কর্মকাণ্ডকে দুরভিসন্ধিমূলক আখ্যায়িত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অণুবিভাগের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে একটি প্রতিবাদপত্র দেন। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের একটি সরকারি ওয়েবসাইটে মানচিত্রের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার কিছু অংশ রয়েছে। বাংলাদেশ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। অবিলম্বে এই মানচিত্র সংশোধনের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানায় বাংলাদেশ।
দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর মিয়ানমার তাদের একটি সরকারি ওয়েবসাইটে একই ধরনের কাজ করেছিল। তখন আমরা প্রতিবাদ করে মানচিত্রের সংশোধনী আনার কথা বলি। বাংলাদেশের চাপের মুখে তারা সেটি সংশোধন করে। এরপর চলতি মাসে দেশটির আরেকটি ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার কিছু অংশকে নিজেদের মানচিত্রে দেখিয়েছে মিয়ানমার। আমরা মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং খোয়াকে তলব করে তার কাছে জানতে চেয়েছি তারা বারবার একই ভুল কেন করছে। অং খোয়া ভুল স্বীকার করে বলেছেন, এটি ঘটার কোনো কারণ ছিল না।
মহাপরিচালক বলেন, আমরা অবিলম্বে এই ভুল সংশোধন করতে বলেছি। এরপর মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত আমার অফিস থেকেই তাদের দেশে যোগাযোগ করেছেন। আজ শুক্রবার তাদের কর্মদিবস রয়েছে। এর মধ্যেই তারা মানচিত্রের ভুল সংশোধন করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, অক্টোবরের ঘটনার পর মিয়ানমার বলেছিল ওয়ান ম্যাপ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে এই ম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রতিবাদের মুখে মিয়ানমার সরকার ভুল স্বীকার করে বিনাশর্তে মানচিত্রটি সরিয়ে নিয়েছিল। আমরা জেনেছি সম্প্রতি মিয়নামারের সরকারি ওয়েবসাইটে এ ধরনের মানচিত্র আবারো ব্যবহার করা হয়েছে। তাই মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরাতে মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজটি করেছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনী নজিরবিহীন দমন-পীড়ন চালায়। এ সময় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। বিষয়টি থেকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সরাতে বাংলাদেশকে সঙ্ঘাতে জড়াতে উসকানি দিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ও ড্রোন বারবার সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে একাধিকবার তলব করে বাংলাদেশ এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তবে কোনো ধরনের সামরিক সঙ্ঘাতে জড়ায়নি বাংলাদেশ; বরং রোহিঙ্গা ইস্যুটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে উত্থাপন করে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়।
সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। মিয়ানমারকে দেয়া বাজার সুবিধা পুনর্বিবেচনা করার জন্য সেখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত করতে তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সুনির্দিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব পদক্ষেপে বেকায়দায় থাকা মিয়ানমার মানচিত্র নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চাইছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ১৯৩৭ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত থেকে মিয়ানমার বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ভারতের অংশ ছিল। তখনকার মানচিত্রে এই সীমারেখাটি পরিষ্কার। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর সেন্টমার্টিন পাকিস্তানের অংশ হয়। আর ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দ্বীপটি বাংলাদেশের মানচিত্রে আসে। এটি কখনোই মিয়ানমারের অংশ ছিল না। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সাথে সই হওয়া চুক্তিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশের অংশ ছিল। ২০১২ সালের মার্চে সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে করা মামলার রায়ে সেন্টমার্টিনকে বাংলাদেশের অংশ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে কোনো বিতর্ক থাকতে পারে না। এত বছর পর মিয়ানমার তাদের মানচিত্রে দ্বীপটিকে অন্তর্ভুক্ত করা দুরভিসন্ধিমূলক।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল