২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রধানমন্ত্রী আর হতে চাই না : শেখ হাসিনা

ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শেষ মেয়াদ। তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হবেন না। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেছেন, নতুনদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে চান। বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে ডয়চে ভেলে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। ফলে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তিন দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী জার্মানিতে পৌঁছেছেন।
ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনার বিষয়ে। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা আমার তৃতীয় মেয়াদ। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছি (১৯৯৬-২০০১)। সব মিলিয়ে চতুর্থবার। আমি আর চাই না। একটা সময়ে এসে সবারই বিরতি নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি, যেন তরুণ প্রজন্মের জন্য জায়গা করে দেয়া যেতে পারে।’
তবে এই উন্নয়ন দিয়ে যেসব সমালোচকের মুখ বন্ধ করতে পারেননি শেখ হাসিনা, যাদের অভিযোগ, তিনি বা তার সরকার বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেন এবং মুক্তচিন্তা ও মুক্তচিন্তকদের ওপর আঘাত থামাতে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। কিন্তু শেখ হাসিনা তা অস্বীকার করে বলেন, মুক্তচিন্তাকে শতভাগ সমর্থন করেন তিনি। সমালোচনাও তাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘যত কাজ করবেন, তত সমালোচনা শুনবেন। আপনি আমার দেশের মানুষকে প্রশ্ন করুন, তারা সন্তুষ্ট কি না; তাদের যা যা প্রয়োজন, সব পাচ্ছে কি না, কিংবা আমি সব দিতে পারছি কি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি তা নিশ্চিতে পদক্ষেপও নিয়েছেন। বাংলাদেশ বহু বছর ধরে সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। তখন দেশ একটি মাত্র টেলিভিশন চ্যানেল চলত, যা ছিল রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চ্যানেল চালুর অনুমতি দেন।
সম্ভাব্য শেষ মেয়াদে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থানÑ এসব মৌলিক চাহিদা। প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়। আমাদের সেটাই নিশ্চিত করতে হবে।’
আওয়ামী লীগ বিরোধীদের জন্য রাজনীতির মাঠ সঙ্কুচিত করে রাখা এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের অভিযোগ অস্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটের মাধ্যমেই তো ক্ষমতায় আসা, সেটা একদলীয় হয় কী করে? আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, ২০০৮-এ যে নির্বাচন হয়েছিল, সে নির্বাচনেও ৮৪ ভাগ ভোট পড়েছিল। এবার তো ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট পেয়েছিল মাত্র ২৮টি সিট। এবার ইলেকশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৬০টি সিট (৩০০টির মধ্যে)। বাকি সব অন্য দলগুলো পেয়েছে। সেখানে দল তো আছেই।
বিরোধী দলকে দুর্বল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কোনো দল যদি তাদের কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে না যেতে পারে, জনগণের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে না পারে, আর যদি ভোট না পায়, সে দায়দায়িত্ব কার? সে তো ওই দলগুলোর দুর্বলতা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়াকে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যেতে চায় বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু মিয়ানমারের সাথে ঝগড়া করতে চাই না। আমাদের সাথে একটা চুক্তিও হয়েছে, তারা ফেরত নিয়ে যাবে। চীন ও ভারতের সাথেও আমরা কথা বলেছি এবং মিয়ানমারের সাথে যে পাঁচটি দেশের সীমান্ত আছে, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওস, আমরা সবার সাথে আলাপ-আলোচনা করেছি, কিভাবে এ সমস্যা সমাধানে তাদের কাজ করা উচিত।
জার্মানি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে তিন দিনের সরকারি সফরে গতকাল বিকেলে জার্মানির মিউনিখে পৌঁছেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর।
দেশে ফেরার পথে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফর করবেন। দুই দিনের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন গতকাল শুরু হয়েছে। এই সম্মেলন ছাড়াও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেখানে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও হেলথ ক্যাম্পেইনারদের সাথেও বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি বেলা ১টা ১০ মিনিটে (মিউনিখ সময়) মিউনিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও হেলথ ক্যাম্পেইনারদের সাথেও বৈঠক করবেন। শেখ হাসিনা ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবুধাবি সফর করবেন। সেখানে তিনি ১৪তম আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে (আইডিইএক্স-২০১৯) অংশ নেবেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ নিরাপত্তা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভাষণ দেবেন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর আলোচনায় অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) আয়োজিত ‘হেলথ ইন ক্রাইসিস-হু কেয়ার্স’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। তিনি ২০১৭ সালের নোবেল বিজয়ী পরমাণু অস্ত্র ধ্বংসবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রচারণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিয়াট্রিস ফিন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) শীর্ষ প্রসিকিউটর ড. ফাতৌ বেনসৌদার সাথে বৈঠক করবেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী সিমেন্স এজির প্রেসিডেন্ট ও সিইও জোয়ে কায়িজার এবং ভারিদোসের সিইও হ্যান্স উল্ফগং কুঞ্জের সাথে বৈঠক করবেন। তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জ ব্রেন্ডি এবং জিগসাওয়ের সিইও জারেড কোহেনের যৌথভাবে আয়োজিত এক নৈশভোজ সভায় অংশ নেবেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাজ এ সিকিউরিটি থ্রেট’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় যোগ দেবেন।
আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রধানমন্ত্রী মিউনিখ থেকে আবুধাবিতে পৌঁছাবেন এবং আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে (এডিএনইসি) ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স এক্সিবিশনের (আইডিইএক্স-২০১০) উদ্বোধনী সেশনে যোগ দেবেন। এ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ানের সাথে বৈঠক এবং ইউএইর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং আমিরাত অব দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুম ও অন্য নেতার সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা আল বাহার প্যালেসে ইউএইর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক মরহুম শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের স্ত্রী শেখা ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সেন্ট রেগিস আবুধাবি হোটেলে অনুষ্ঠেয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ সফর চলাকালে তিনি সেখানে অবস্থান করবেন। শেখ হাসিনা আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে দেশে ফিরবেন।
প্রধানমন্ত্রীকে এফএও, ডব্লিউএফপি ও আইএফএডির অভিনন্দন : রোমভিত্তিক জাতিসঙ্ঘের তিনটি সংস্থা (আরবিএ) এফএও, ডব্লিউএফপি ও আইএফএডি গত সাধারণ নির্বাচনে বিপুল বিজয় ও আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সংস্থা তিনটির প্রধানগণ বর্তমানে রোমে অবস্থানরত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠকে এ অভিনন্দন জানান। তারা মিয়ানমার থেকে জোর করে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন হিসেবে প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে মানবতার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক কৃষি ফান্ড ফর অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (আইএফএডি) গভর্নিং কাউন্সিলের ৪২তম অধিবেশনে যোগ দিতে এখন ইতালির রোমে রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement