২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাখাইনে আবারো সামরিক অভিযান

পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা; দুই মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ দেড় হাজার
-

মিয়ানমারে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গারা আবারো প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এই তথ্য জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাখাইনের মঘ অধ্যুষিত অঞ্চল পাল্লোয়া শহরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে বোমা হামলা চালিয়েছে। বৌদ্ধ বিদ্রোহীগোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে এ হামলা চালানো হয় বলে সূত্র জানায়। সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি হেলিকপ্টার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বোমা ফেলে। এতে বাড়িঘর পুড়ে যায়। এ দিকে গোলাগুলির শব্দে ভয় পেয়ে সংঘর্ষপ্রবণ এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাচ্ছে।
উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সর্দার (মাঝি) দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত হওয়া, নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়া এবং মূল জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার আশা নিয়ে আমরা এখানে আছি অথচ সেখানে আমাদের এখনো যারা আছে তাদেরকেও তাড়ানোর জন্য মিয়ানমার সরকার নতুন ফাঁদ পেতেছে।
রোহিঙ্গা আবুল হাশিম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী আমাদেরকে স্বদেশে না ফেরার জন্য নতুন করে ফাঁদ সৃষ্টি করছে।
গত ৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের স্বাধীনতা দিবসে মিয়ানমারবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করে আরাকান আর্মি। তারপর সরকারি নির্দেশে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। কিন্তু মিয়ানমার বাহিনীর অভিযানের শিকার হচ্ছে রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমান ও নিরীহ জনগণ। এর আগে রাখাইনের বুচিডং বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী, আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। গত শুক্রবার ও শনিবার দুই দিন লড়াই শেষে আরাকান আর্মির বেশ কিছু সদস্য হতাহত হয়।
চলতি মাসের ১২ তারিখ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে অভিযান চালাতে সেনা সমাবেশ বাড়ানো হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে হেলিকপ্টারে এসব সেনাসদস্যকে রাজ্যের রাজধানী সিটওয়েতে নামানো হয়। পরদিন তাদের মোতায়েন করা হয় মংডুতে। এরপর থেকেই ওই এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
এ দিকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণ শেষে ঢাকায় ফিরে গেছেন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার বিশেষ দূত ইয়াং হি লি। তিন দিনের সফর শেষে গতকাল বুধবার বিকেলে বিমানে তিনি কক্সবাজার ত্যাগ করেন।
চাকমারকূল ক্যাম্পে ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গারা : এ দিকে ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেছে। মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ভয় এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নানা সুযোগ-সুবিধার খবরে তারা ভারত থেকে পালিয়ে আসা শুরু করেছে। প্রায় দুই মাসে ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবারের ১৫০০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। কয়েক দিন ধরে ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টের আশ্রয়শিবিরে রাখা হলেও এদের একটি অংশকে অবশেষে টেকনাফ চাকমারকূলের অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জায়গা করে দিয়েছে প্রশাসন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইনদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের মুখে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। সবশেষ ২০১৭ সালের আগস্টের পর ওই রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। আগে পালিয়ে আসাসহ বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি।
এবার ভারত থেকে আতঙ্কে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ভয়ে ভারত ছাড়ছেন তারা। পালিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। প্রায় ১৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে ভারত থেকে পালিয়ে ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবারের ১৩০০ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসন বলছে এর আগে গত বছরের মে থেকে কিছু কিছু রোহিঙ্গা ভারত থেকে আসছিল। তাদেরকে কক্সবাজারের উখিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন ট্রানজিট পয়েন্টের আশ্রয়শিবিরে ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।
অবশেষে গতকাল বিকেলে ওই আশ্রয়শিবির থেকে তাদের একটি বড় অংশকে টেকনাফের অস্থায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে স্থানান্তর করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা বলছে ১০০ পরিবারের ৪৩৮ জন রোহিঙ্গাকে এই ক্যাম্পে আনা হয়েছে। তারা আসার আগে থেকে তাদের জন্য আবাসন সুবিধা তৈরি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।  


আরো সংবাদ



premium cement