২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঢিমেতালে দোহাজারী টু মিয়ানমার রেললাইন

আট বছরে ভৌত কাজের অগ্রগতি ১৩ শতাংশ

-

ঢিমেতালে চলছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার, রামু হয়ে মিয়ানমারের নিকটস্থ গুমদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি। প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তায় পাঁচ বছরে কোনো বিদেশী সংস্থা থেকে সাড়া মেলেনি। পরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ঋণসহায়তা দিতে সম্মত হয়। আট বছরে গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ১৩ শতাংশ, আর অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আর নতুন করে অনুমোদনের তিন বছর পর দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আগামী ২০২২ সালে প্রকল্পটি সমাপ্ত হওয়া নিয়ে খোদ সংশয় রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রস্তাবিত ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরে প্রবেশের পদক্ষেপ হিসেবে প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। পরে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ব্যয় ১৬ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে বাস্তবায়ন খরচ ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার এবং গুমদুম পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নতুন সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ করা হবে।
জানা যায়, ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর এই প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। চীন থেকে অর্থ সংগ্রহের কথা ছিল। কিন্তু তারাও সাড়া দেয়নি। পাঁচ বছর পর এডিবি এগিয়ে আসায় প্রকল্প নতুন করে অনুমোদন লাভ করে। চট্টগ্রাম থেকে মিয়ানমার হয়ে লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম পর্যন্ত মিটার গেজ লাইন বিস্তৃত হওয়ার কথা। ২০০১ সালের মার্চ মাসে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। ইরান-তুরস্কের ভেতর দিয়ে ইউরোপসহ দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে রেল যোগাযোগ বা ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে এই উপমহাদেশকে সংযুক্ত করা প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
প্রকল্পের জন্য চলতি বছরের এডিপিতে এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি ১৩ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবরের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের পদক্ষেপ নেয়ার কথা ছিল; এটা হবে সিঙ্গেল লাইন রেল ট্র্যাক। এর মধ্যে ২৬.১৪ কিমি. লুপ লাইন হবে। ১২৮ কিলোমিটার লাইন এলাকায় ৯টি নতুন রেলস্টেশন তৈরি করা হবে। আর এই এলাকাগুলো হলো : সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকোরিয়া, ডুলাহাজরা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও গুমদুম। এই স্টেশনগুলো কম্পিউটারাইজড সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং হবে, যেখানে ৪৭টি ব্রিজ নির্মিত হবে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মিয়ানমারের সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগ আরো শক্তিশালী করতে দুই দেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পর্যায়ে আলোচনা হয়। আর ২০০৭ সালের জুনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়ক বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর আগে মে মাসের শেষে সড়কের বাস্তব চিত্র তুলে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। একই সাথে দোহাজারী থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী গুমদুম পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের বিষয়টিও আলোচনা করা হয়। প্রসঙ্গত, ১৮৯০ সালে মিয়ানমার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চট্টগ্রাম থেকে রামু এবং কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার পর্যন্ত রেললাইনের সম্ভাব্যতার প্রথম সার্ভে করা হয়। এরপর ১৯০৮ ও ১৯০৯ সালে মিয়ানমার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আবার বিস্তারিত সার্ভে করে।

 


আরো সংবাদ



premium cement