২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুরস্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের বিদায়

-

বরেণ্য সুরকার, গীতিকার, সঙ্গীত পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল (৬৩) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সুরের মায়া কাটিয়ে গতকাল সকালে বিদায় নিলেন এই সুরস্রষ্টা।
দীর্ঘ দিন ধরে তিনি হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আফতাবনগরের বাসায় হার্ট অ্যাটাক হলে বুলবুলকে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে গীতিকার কবীর বকুল জানান। এর আগে হার্টে ব্লক ধরা পড়ায় গত বছর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তার অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
দীর্ঘ চার দশকের ক্যারিয়ারে দুই শ’র বেশি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করে গেছেন তিনি। ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’র মত দেশাত্মবোধক গানে তার দেয়া সুর বাংলাদেশের মানুষের বুকে চিরদিন বাজবে।
হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তার মৃত্যুর খবর জানানোর পর মঙ্গলবার সকালে পরিবারের সদস্যরা বুলবুলের লাশ নিয়ে যান আফতাবনগরের বাসায়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এই গীতিকার- সুরকারের মৃত্যুতে পৃথক শোকবার্তা দিয়েছেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, বুলবুলের লাশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় তার কফিন নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরর মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে এই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি জানানো হবে রাষ্ট্রীয় সম্মান।
বুলবুলের ছেলে সমীর আহমেদ জানান, বুধবার জোহর নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে তার বাবার নামাজে জানাজা হবে। বাদ আসর মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেন। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে। তখন তিনি ঢাকার আজিমপুরের ওয়েস্টঅ্যান্ড হাইস্কুলের ছাত্র। ২৫ মার্চ রাতের নৃশংস ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন বুলবুল ও তার কয়েকজন বন্ধু। প্রথমে বিহারিদের বাসা থেকে অস্ত্র ছিনতাই করে ছোট একটি মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করেন তারা। পরে জিঞ্জিরায় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি তৈরি করেন।
গানের ভুবনে চার দশক : ১৯৭৮ সালে ‘মেঘ বিজলি বাদল’ সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন বুলবুল। এরপর আমৃত্যু তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন সঙ্গীতের সাধনায়। বেলাল আহমেদের পরিচালনায় ১৯৮৪ সালে নয়নের আলো চলচ্চিত্রের সঙ্গীতায়োজন করেন তিনি। ওই সিনেমার জন্য তার লেখা ‘আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যখানে’, ‘আমি তোমার দু’টি চোখের দুটি তারা হয়ে’ গানগুলো সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এর পরের চল্লিশ বছরে মরণের পরে, আম্মাজান, প্রেমের তাজমহল, অন্ধ প্রেম, রাঙ্গা বউ, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, পড়ে না চোখের পলক, তোমাকে চাই, লাভ স্টোরি, ভুলো না আমায়, আজ গায়ে হলুদ, লাভ ইন থাইল্যান্ড, আন্দোলন, মন মানে না, জীবন ধারা, সাথি তুমি কার, হুলিয়া, অবুঝ দু’টি মন, লক্ষ্মীর সংসার, মাতৃভূমি, মাটির ঠিকানাসহ দুই শতাধিক চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন বুলবুল। প্রেমের তাজমহল সিনেমার জন্য তিনি ২০০১ সালে এবং হাজার বছর ধরে সিনেমার জন্য ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে অবদানের জন্য ২০১০ সালে সরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত আয়োজনের পাশাপাশি দেশের সমকালীন শিল্পীদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেছেন বুলবুল। তার কথা আর সুরের গান নিয়ে সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, এন্ড্রু কিশোর, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনক চাঁপাসহ দেশের বহু জনপিয় শিল্পীর অ্যালবাম বের হয়েছে।
সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে শোক, শ্রদ্ধায় স্মরণ করছেন তার দীর্ঘকালের সহকর্মীরা। তার মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মঙ্গলবার সকালে এই শিল্পীর মৃত্যুর পরপরই তার আফতাবনগরের বাসায় ছুটে আসেন অনেকে। আসেন কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, এন্ড্রু কিশোর।
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, আজ চলে গেলেন আমাদের সঙ্গীতের মহাজন। সুরের জগতে তার আরো অনেক দেয়ার মতা ছিল। অথচ হুট করে চলে গেলেন। তিনি বলেন, বুলবুল কাউকে খুব বেশি অভিযোগ করতেন না। কিন্তু কাছের যে ক’জন মানুষকে তিনি মনের দুঃখগুলো শেয়ার করতেন, আমি তাদের একজন।
গীতিকবি ফরাজী বলেন, বাংলা গানকে অন্য এক উচ্চমাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দেশাত্মবোধক গানের আইকন ছিলেন বুলবুল।
গীতিকার কবির বকুল বলেন, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল একজন বড়মাপের মানুষ ছিলেন। সুর¯্রষ্টা ও গীতিকার এ মানুষটি দেশের জন্য কতটা নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তার দেশপ্রেমের গানগুলোই তা প্রমাণ করে।
কণ্ঠশিল্পী রিজিয়া পারভীন বলেন, তার শেষ জীবন ছিল ভীষণ কষ্টের। শারীরিক ও মানসিকভাবে তিনি শেষ জীবনে প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন। তিনি যেন আজ সব কিছু থেকে মুক্তি পেয়ে গেলেন।
আরেক শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী মরহুমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার অবদান রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরণের দাবি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত

সকল