২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

দৌরাত্ম্য কমছে না পরিবহন শ্রমিকদের

বিচারহীনতাই মূল কারণ ; শ্রমিকেরা মনে করেন প্রভাবশালী নেতারা আছেন নেপথ্যে
-

দৌরাত্ম্য কমছে না পরিবহন শ্রমিকদের। বরং দিনদিন তা বেড়েই চলছে। রাস্তায় পিষে তো মারছেই; এখন ধাক্কা মেরে যাত্রীদের রাস্তার ওপর ফেলে দিয়েও হত্যা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিচারহীনতার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ হত্যাকারীদের যথাযথ বিচার হলে অন্যরা এমন ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস পেতো না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। যার অধিকাংশই শ্রমিকদের বেপরোয়া আচরণের জন্য ঘটছে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয়েছে হযরত ওমর (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রকে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল সে। ওমর কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরছিল ওমর। পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা বাস স্টপেজ হতে ঢাকাগামী আজমেরী পরিবহনের একটি বাসে ওঠে সে। ওমরকে চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় ওই বাসের হেলপার। এতে মাটিতে পড়ে একই বাসের সাথে সজোরে ধাক্কা খেয়ে আহত হয় ওমর। আহত ওমরকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওমরের সহপাঠী, স্কুলশিক্ষক ও স্থানীয়রা এ ঘটনাকে একটি হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, হেলপার ইচ্ছে করে ওমরকে হত্যা করেছে।
কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার ও ঘাতক বাসটি আটক করে। তবে বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। দিদারুল আলম নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেছেন, চালক হেলপাররা আসলে যাত্রীদের মানুষ বলেই মনে করে না। কেননা তারা জানে তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। পেশিশক্তি তাদের সাথে রয়েছে। যে কারণে তারা এমন অপরাধ করতে পারে। তারা জানে এমন ঘটনা ঘটিয়েও তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না। কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার এসআই মজিবর রহমান বলেছেন, ১টা ২০ মিনিটে স্কুল ছুটির পর সব ছেলেমেয়ে একই সাথে রাস্তায় আসে। ওই বাসটিতে তিনজন ছাত্র ওঠার পর গাড়িতে আর ছাত্রদের উঠতে দেয়া হচ্ছিল না। ছাত্ররা যেহেতু কাছে যায় তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া পাওয়া যায় না। যে কারণে চালক-হেলপাররা গাড়িতে ছাত্র উঠাতে চায় না। এসআই মজিবর বলেন, এ কারণেই হয়তো হেলপার ধাক্কা মেরে ছাত্রটি ফেলে দিয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে থানায় মামলা হলেও গতকাল পর্যন্ত আজমেরী পরিবহনের চালক-হেলপারকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন শেষ হয় না। প্রতিদিনই নিহত হচ্ছে মানুষ। গত দুই দিনে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন সড়কে। রংপুরের পীরগঞ্জ, নোয়াখালী, যশোরের চৌগাছা, লাকসাম, বগুড়ার কাহালু, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহের ভালুকা, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ, রাজধানীর মিরপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ, সেনবাগ, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত দুই দিনে নিহতের ঘটনা ঘটে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এর মধ্যে অধিকাংশ ঘটনাই ঘটেছে পরিবহন শ্রমিকদের ব্যাপক দৌরাত্ম্যের কারণে।
রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান বলেছেন, বিচারহীনতার জন্যই পরিবহন শ্রমিকেরা এতটা বেপরোয়া। তিনি বলেন, স্কুলছাত্রকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড। অথচ পুলিশ দুই দিনেও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। পরিবহন শ্রমিকেরা নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে মনে করেন। তারা মনে করেন তাদের পেছনে শক্তিশালী নেতারা আছেন। তাদের কিছুই হবে না। সাইদুর রহমান বলেন, দেশে যদি আইনের শাসন থাকত তাহলে এমন ঘটনা ঘটত না। আইনের শাসন নেই বলেই শ্রমিকেরা এতটা বেপরোয়া।


আরো সংবাদ



premium cement