২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
তিনি বলেন, ‘একটি ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।’
সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেটা প্রয়োজন সেটাতো আমরা মিটাচ্ছি। তাহলে দুর্নীতি কেন হবে। মন মানসিকতাটা পরিবর্তন করতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আপনাদের দিতে হবে একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে এ নির্দেশনা দেন।
টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে থাকা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ দিন পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত সরকারের সময়ের মতো মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি বাড়াতে এবং সৃজনশীলতার বিকাশে এবারো পর্যায়ক্রমে সব মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রশাসন দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
শেখ হাসিনা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট একটি নির্দেশনা দিতে হবেÑ কেউ দুর্নীতি করলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ‘কারণ যে হারে বেতন আমরা বাড়িয়েছি। এ উদাহরণ মনে হয় পথিবীর কোনো দেশেই নেই।’
সন্ত্রাস-মাদক-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ‘লক্ষ্য বাস্তবায়নে তার সরকার সন্ত্রাস, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে,’ বলেন তিনি।
উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘যে লক্ষ্য আমরা নিয়েছি, তা আমরা পূরণ করতে পারব, তার জন্য প্রয়োজন সুশাসন, তার জন্য দরকার দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা।’
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের সততা-আন্তরিকতা নিয়ে জনসেবা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সরকার পরিচালনার মূল জায়গাটায় হলো আপনাদের এই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অনেক বিশাল কর্মযজ্ঞ এখানে। সে ক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্ব কিন্তু অনেক অনেক বেশি।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্র জনপ্রশাসন। আপনাদের সেভাবে কাজ করতে হবে, আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে অনুরোধ করব, একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, দেশটা আমাদের। আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। আজকে সারাবিশ্বে একটা সম্মানজনক জায়গায় আসতে পেরেছি।
তিনি জনপ্রশাসনে বিশেষ দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তার সরকারের জনপ্রশাসনর পদক প্রবর্তনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘কাজে কে কতটা দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখাতে পারছে, তার ওপর আমরা জনপ্রশাসন পদক প্রবর্তন করেছি।’
জনপ্রশাসনে পদোন্নতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসনসহ সবক্ষেত্রে শুধু জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, এখানে দক্ষতাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। কে কত বেশি কাজ করতে পারে, সততার সাথে কাজ করতে পারবে এবং নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলবে, সব কিছু বিবেচনা করে প্রমোশন হওয়া উচিত।’
যে যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে সেই বিষয়ে দায়িত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি পদ ফাঁকা থাকলেই পদায়ন না করে যার যে বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ রয়েছে, তাকে সেই জায়গায় পদায়ন করারও নির্দেশনা দেন।
সকাল ১০টায় দলের মরহুমে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আসেন শেখ হাসিনা।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার অনুজ প্রতিম ছিলেন উল্লেখ করে তিনি এ সময় তার পিতা (সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম) মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নামকরণ তিনি করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এ জন্য নামটি পরিবর্তন করে দিয়েছিলাম। কেননা জনগণের সেবা করা যে, এই মন্ত্রণালয়ের সব থেকে বড় দায়িত্ব, এখান থেকেই সেবাটা মানুষের কাজে পৌঁছে যাবে। সেটা সবসময় সকলে যেন মনে রাখতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমদ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেনÑ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো: আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম।
প্রধান মন্ত্রিত্বের পাশাপাশি শেখ হাসিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement