১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অস্তিত্বহীন ঋণের সন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংক

-

তৈরী পোশাক কারখানা সম্প্রসারণের জন্য দুই যুগ আগে তিন কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সোহাগ হোসেন (ছদ্মনাম)। প্রথম দিকে ব্যবসায় ভালোই চলছিল। বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ করতেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ১৯৯৫ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবির আন্দোলনে একটানা হরতালের ডাক দেয় আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন বিরোধী দলগুলো। রাজনৈতিক ওই কর্মসূচি চলাকালে সোহাগ হোসেন ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হন। নির্ধারিত সময়ের পর পণ্য বিদেশে পাঠানোর পর ক্রেতারা তা কিনতে অস্বীকৃতি জানান। অনেক অনুনয়-বিনয়ের পরে ক্রেতা পণ্য গ্রহণ করলেও বিল পরিশোধে টালবাহানা করতে থাকে, যা হোক ক্রেতার লোকসান সমন্বয় করে মোট মূল্যের মাত্র ৫০ শতাংশ অর্থ সোহাগ হোসেন পেলেও সময় অনেক দেরি হয়ে যায়। ইতোমধ্যে ব্যাংকের খাতায় ঋণখেলাপি হিসেবে তার নাম উঠে যায়। পরে তার অন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে লোকসান গুনতে থাকে। কারণ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কেউ ঋণখেলাপি হলে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক থেকে আর ঋণ নিতে পারেন না। সোহাগ হোসেন ঋণখেলাপি হওয়ায় নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে বাধার সম্মুখীন হন। এভাবে এক সময় তিনি বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েন। প্রথমে সম্প্রসারিত ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে তৈরী পোশাক কারখানাও বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে সোহাগ হোসেনের ব্যাংক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এক সময় পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়। তৈরী পোশাক কারখানাটি ভাড়া বাড়িতে ছিল। কারখানা বন্ধ হওয়ায় ব্যাংকের খাতায় এ ঋণ ঠিকানা বা অস্তিত্বহীন ঋণে পরিণত হয়। সোহাগ হোসেন ঋণ পরিশোধ না করলেও সুদে-আসলে তা বেড়ে ১৭ কোটি টাকায় পোঁছায়। মাঝখানে কয়েক দফা ঋণ নবায়নও করা হয়। ওই ঋণ আদায়ে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সোহাগ হোসেনের মতো এভাবে শত শত উদ্যোক্তা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যাংকের খাতায় অস্তিত্বহীন বা ঠিকানাহীন ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে অবলোপনসহ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই আদায় অযোগ্য। এর বাইরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মধ্যে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা মন্দ ঋণ রয়েছে। এরও বেশির ভাগ আদায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এসব ঋণ আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবত মামলা ঝুলে আছে। যেগুলো নিষ্পত্তি হয়েছে তার একটি বড় অংশই ঠিকানাহীন বা অস্তিত্বহীন ঋণ। এসব ঋণখেলাপিকে আইনগতভাবে আটকাতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ এসব ঋণের বিপরীতে যেসব জামানত রাখা হয়েছিল তার বেশির ভাগই জাল, খাস জমি বা অতিমূল্যায়িত করে দেখানো। যেমনÑ একটি জমির মূল্য ১০ লাখ টাকা। ব্যাংকারদের যোগসাজশে ঋণ নেয়ার সময় তা অতিমূল্যায়িত করে এক কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। ঋণখেলাপি হওয়ায় উচ্চ আদালত থেকে রায় নিয়ে যখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বিক্রি করতে গেছে তখন পাওনা অর্থের চেয়ে অনেক কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতায় যেসব ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে তার বেশির ভাগই দীর্ঘ দিনের পুরনো। নতুন যেসব বড় ঋণ নেয়া হচ্ছে তার বেশির ভাগই রাজনৈতিক বিবেচনায় বা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের ঋণ। তাদের বেশির ভাগই ঋণ পরিশোধ করছে না। আবার তাদের ঋণখেলাপি হিসেবেও দেখানো হচ্ছে না। নানাভাবে প্রভাববিস্তার করে ব্যাংকের খাতায় ওই সব ঋণ নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। কিন্তু যেসব ঋণ মন্দ বা আদায় অযোগ্য হয়েছে ওই সব ঋণ দীর্ঘদিনের পুরনো। এসব অবলোপন ছাড়া যেসব আদায় অযোগ্য ঋণ রয়েছে তা সুদে-আসলে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিনের পুরনো ঋণের মধ্যে কী পরিমাণ অস্তিত্ব বা ঠিকানাহীন ঋণ রয়েছে তার তালিকা করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিভাবে খেলাপি ঋণ কমানো যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে অস্তিত্বহীন ঋণ খোঁজা হচ্ছে। প্রত্যেক ব্যাংককে এ ধরনের ঋণের তালিকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি পাঠানো হবে। প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী ওই সব ঋণ অবলোপন করে বা এর বিপরীতে বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে। একই সাথে অস্তিত্বহীন ঋণগুলো ব্যাংকের খাতায় অবলোপনের মতো আলাদা করে রাখা যায় কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ব্যাংকগুলোকে দেয়ার জন্য চিঠির একটি খসড়া তৈরি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ খসড়ার ওপর মতামতের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তবে এসব কিছুই করা হচ্ছে ব্যাংকিং খাতে পাহাড় সমান খেলাপি ঋণের হিসাব কমানোর জন্য। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এটা করা হলে, নানাভাবে ব্যাংক উপকৃত হবে। প্রথমত, খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় থেকে। এভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে বছর শেষে ব্যাংকের নিট আয় কমে যাচ্ছে। অপর দিকে মন্দ ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ ব্যাংকগুলো আয় খাতে নিতে পারে না। স্থগিত করে রাখা হয়। সেপ্টেম্বর শেষে এমন প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার আয় ব্যাংকগুলো স্থগিত করে রেখেছে। এসব ঋণ যে কোনো উপায়ে কমানো হলে ব্যাংকের নিট আয় বেড়ে যাবে। পাশাপাশি এসব ঋণের বিপরীতে প্রতিটি ব্যাংকই মামলা করেছে। মামলা পরিচালনা করতে উকিলের ফিসহ প্রতি বছর বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এসব মন্দ ঋণ কোনোভাবে কমানো হলে মামলা পরিচালনা ব্যয় কমে যাবে। সবমিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্ভাব্য এ পরিকল্পনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন ব্যাংকাররা।


আরো সংবাদ



premium cement
জনগণের শক্তির কাছে আ'লীগকে পরাজয় বরণ করতেই হবে : মির্জা ফখরুল টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় মেরিনা তাবাসসুম বিএনপি নেতারা সন্ত্রাসীদের সুরক্ষা দেয়ার অপচেষ্টা করছে : ওবায়দুল কাদের ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের বাসভবনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইউক্রেনের ২০টি ড্রোন, ২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্কিৃয় করল রাশিয়া তালেবানকে আফগান মাটি অন্যদের ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের।

সকল