১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আস্থাভোটে জিতে বিকল্প পরিকল্পনার খোঁজে থেরেসা

-

আস্থাভোটে কোনোরকম টিকে যাওয়ার পর ব্রেক্সিট পরিকল্পনা অনুমোদনের স্বার্থে সম্ভাব্য বিকল্প পথ নিয়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। আস্থাভোটের দিনের একটাপর্যায় পর্যন্ত তিনি অনড় ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে গত বছর নভেম্বরে তার স্বাক্ষরিত পুরনো ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে। তবে দিনশেষে থেরেসা মে বিকল্প পথ নিয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের দারস্থ হতে শুরু করেছেন। বিবিসি ও রয়টার্স।
নিজ স্বার্থ সরিয়ে রেখে গঠনমূলকভাবে একসাথে কাজ করতে এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন থেরেসা। বুধবার আস্থাভোটে টিকে যাওয়ার পর বিরোধী দলগুলোর সাথে বৈঠকে থেরেসা এ আহ্বান জানান। তবে তিনি পুরনো পরিকল্পনায় থাকা কোন কোন বিষয়ে ছাড় দিতে সম্মত, কিংবা আইনপ্রণেতাদের সাথে ঠিক কী কী ইস্যুতে আলোচনা করবেন, এখনো কেউ সুনর্দিষ্ট করে তা বলতে পারেনি।
২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাওয়ার কথা ব্রিটেনের। পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সাথে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সেই ব্রেক্সিট খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে মঙ্গলবার পার্লামেন্টে শোচনীয় পরাজয়ের পর আস্থাভোটের মুখে পড়েছিলেন থেরেসা। তার সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ব্রিটেনের পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হয়। এতে ৩২৫ জন আইনপ্রণেতা থেরেসার সরকারের পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩০৬ জন। ১৯ ভোটে জিতে যান থেরেসা মে।
আস্থাভোটে টিকে যাওয়ায় সরকারে বহাল থাকছেন থেরেসা মে। এর আগে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খায় থেরেসার সরকার। ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন তাৎক্ষণিকভাবে থেরেসা মের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। অন্যান্য বিরোধী দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি, প্লাইড কামরি ও গ্রিন পার্টি এই অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন করে। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে টিকে যান থেরেসা।
এতে সরকার নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা কেটে গেলেও ব্রেক্সিটসংক্রান্ত অচলাবস্থার এখনো সুরাহা হয়নি। এমন অবস্থায় আত্মস্বার্থে মগ্ন না থেকে জাতীয় স্বার্থের দিকে নজর দিতে আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। থেরেসা তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভবিষ্যতের স্বার্থে ‘সম্ভাব্য সমস্ত বিকল্প পথ’ নিয়ে আলোচনায় রাজি তিনি।
পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এখন চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এমন বাস্তবতায় আইনপ্রণেতাদের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে ‘সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্রেক্সিট পরিকল্পনা’ নিয়ে ইউরোপকে আলোচনার প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ আছে থেরেসা মে সরকারের। তবে ২১ জানুয়ারির মধ্যে সেই পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে। নতুন করে বেক্সিটের খসড়া হাজিরের ব্যাপারে শুরু থেকেই অসম্মত থাকলেও আস্থাভোটে জিতে যাওয়ার পর তিনি পুরনো অবস্থান থেকে পিছু হটেছেন। সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে আলোচনার স্বার্থে আইনপ্রণেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।
মঙ্গলবার বিরোধী দল লেবার পার্টি ছাড়াও নিজ দলের ব্রেক্সিটপন্থী টোরি সদস্য ও ডিইউপির এমপিরাও থেরেসার ব্রেক্সিট পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
বিভিন্ন দলের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ‘গঠনমূলক উদ্যম’ নিয়ে আলোচনা করতে চান। ‘নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে’ দূরে রেখে ব্রেক্সিটের জন্য কোনো উপায় খুঁজে বের করতে গঠনমূলকভাবে একসাথে কাজ করার জন্য এমপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। থেরেসা বলেন, ‘এটা কোনো সহজ কাজ নয়। তবে এমপিরা জানেন, জাতীয় স্বার্থে কাজ করা, ঐকমত্যে পৌঁছানো ও তা বাস্তবায়ন করাটা তাদের দায়িত্ব।’
নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সঙ্কট সমাধান করতে চাইলে তা নির্ধারিত ২৯ মার্চের মধ্যে সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ব্রেক্সিটসংক্রান্ত আইন ‘আর্টিকেল ৫০’-এর সংযোজনী (এক্সটেনশন) এনে তা বিলম্বিত করতে হবে। বিলম্বিত ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সফল করতে প্রথমত, সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ইইউর কাছে আবেদন জানাতে হবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলে আয়োজিত ভোটাভুটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সবগুলো দেশের সমর্থন পেলেই কেবল ব্রেক্সিট বিলম্বিত করা যাবে। দ্বিতীয়ত, ইইউ উইথড্রয়াল অ্যাক্টে ‘বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিনের সংজ্ঞা পরিবর্তনের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারবেন ব্রিটিশ এমপিরা। তবে নতুন আলোচনায় অংশ নিতে ইইউ রাজি না হলে ব্রিটিশ সরকারকে অন্য উপায় খুঁজতে হবে।
ব্রেক্সিটের সমর্থক ও বিরোধী এ দুই পক্ষের এমপিরাই থেরেসাকে সতর্ক করে বলেছেন, হাউজ অব কমন্সে যদি তিনি ব্রেক্সিট পরিকল্পনা পাস করাতে চান তবে তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। এ দিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন আলোচনার ব্যাপারে সম্মত হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। পার্লামেন্টে থেরেসার বিকল্প প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে হাঁটতে হবে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের (নো ডিল ব্রেক্সিট) পথে। তবে, পার্লামেন্টের ব্রেক্সিট বিরোধী অংশ খুব সহজে তা হতে দিতে চান না। নো ডিল ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য প্রাপ্তি নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের অনেকের মধ্যে হতাশা রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি পার্লামেন্টে উত্থাপিত সরকারের একটি কর বিল আটকে দিয়েছেন তারা। বিলটি পাস না হওয়ায় নো ডিল ব্রেক্সিটের পর নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে কর বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে। এ পদক্ষেপকে প্রতীকী হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, টাকা তুলতে অন্য পথ খুঁজে নিতে পারবে সরকার। তবে বিলটি পাস না করার মধ্য দিয়ে এ ইঙ্গিত মিলেছে যে, এমপিরা নো ডিল ব্রেক্সিটকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement