২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

থেরেসার প্রধানমন্ত্রিত্ব হুমকির মুখে

-

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে আসা তথা ব্রেক্সিট চুক্তিকে ব্রিটিশ এমপিরা বিপুল ভোটে প্রত্যাখ্যান করার পর প্রধানমন্ত্রী থেরেসাকে আস্থা ভোট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার গ্রিনিচ মান সময় রাত ১৯০০টার দিকে এই ভোট হওয়ার কথা। বিবিসি ও গার্ডিয়ান।
মঙ্গলবারের ভোটে শোচনীয় পরাজয়ের পর থেরেসা সুর নরম করেন। আগামী সোমবার তিনি নতুন পরিকল্পনার আগেই একটি গ্রহণযোগ্য ব্রেক্সিট চুক্তিতে উপনীত হতে সব দলের সাথে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দেন। আস্থা ভোটে জয়লাভ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। তবে বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন সাধারণ নির্বাচন চান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কনজারভেটিভ দলের এমপি এবং তার মিত্র নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) কোনোভাবেই লেবার দলের সরকার চায় না। ডিইউপি ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধী।
থেরেসার প্রস্তাবিত খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তিটি অনুমোদন না পাওয়ায় আগামী কয়েক দিনের জন্য অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে যুক্তরাজ্য ও ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। আস্থাভোটে পার্লামেন্টে নির্ধারিত হবে থেরেসার ভাগ্য। মীমাংসা হবে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন কি না। তিনি যদি আস্থা ভোটে হেরে যান, তবে নতুন করে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। তবে টিকে গেলেও পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেয়া তার জন্য কঠিনই হবে। অবশ্য আস্থা ভোটে থেরেসা টিকে যাওয়ারই সম্ভাবনা বেশি বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউজ অব কমন্সে থেরেসা মের বিরুদ্ধে আস্থা ভোটের আগে হবে বিতর্ক। হাউজ অব কমন্সের নেতা আন্দ্রিয়া লিডসোম বলেছিলেন, এ ক্ষেত্রে বুধবার সারাদিন লেগে যেতে পারে। বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নপর্ব শেষ হওয়ার পরপরই বিতর্ক শুরু হবে এবং তা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তও চলতে পারে। এরপর হবে ভোটাভুটি।
২০১১ সালে প্রণীত ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্টস অ্যাক্টের আওতায় এ ধরনের বিতর্ক এটাই প্রথম। ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্টস অ্যাক্টের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামতো নির্বাচনের ডাক দেয়ার ক্ষমতা বিলোপ করে পাঁচ বছরের মেয়াদে সরকারকে ক্ষমতায় রাখার কথা বলা হয়েছে। দুইটি ব্যতিক্রমও আছে। একটির প্রয়োগ ২০১৭ সালে দেখা গিয়েছিল। তখন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ এমপি ভোট দিয়েছিলেন। আরেকটি উপায় হলো আস্থা ভোট। ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্টস অ্যাক্টের ২.৪ ধারা অনুযায়ী আস্থা ভোটের প্রস্তাবে বলতে হবে : ‘তার সরকারের ওপর হাউজ অব কমন্সের কোনো আস্থা নেই।’
থেরেসা আস্থা ভোটে হেরে গেলে রাতারাতিই যে নির্বাচন হয়ে যাবে তা নয়। এ ক্ষেত্রে ১৪ দিনের একটি সময়সীমা দেয়া আছে। সরকার ১৪ দিনের মধ্যে এমপিদের আস্থা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে কিংবা নতুন আরেকটি সরকার গড়ে তুলতে পারে। যদি তা না হয়, তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া হবে। তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার পর নির্বাচন আয়োজন পর্যন্ত ২৫ দিন সময় রাখতে হয়। তবে ২৫ দিন সময়ের মধ্যে কী করা হবে ফিক্সড টার্ম পার্লামেন্টস অ্যাক্টে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা নেই। এখন পর্যন্ত এ বিধির ব্যবহার না হওয়ায় ভিন্ন একটি সরকার গড়তে এ সময়কে কিভাবে কাজে লাগানো যাবে সে ব্যাপারেও কেউ নিশ্চিত নয়।
আভাস অনুযায়ী থেরেসার বিরুদ্ধে আস্থা ভোটে লেবারদের জয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। থেরেসার কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি ব্রেক্সিট পরিকল্পনাকে সমর্থন না দিলেও তারা সাধারণ নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী নন। তা ছাড়া তারা চান না, নির্বাচনের মাধ্যমে লেবার পার্টিকে সরকার গড়ার সুযোগ করে দিতে। সেদিক থেকে লেবার নেতা করবিনের কনজারভেটিভদের সমর্থন পাওয়াটা দুরাশা। তা ছাড়াও থেরেসা মের ডিইউপি জোটের অংশীদার দলগুলো ব্রেক্সিট চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিলেও আস্থা ভোটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পাশেই থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ব্রেক্সিট সমর্থক এমপিদের মধ্যে যারা থেরেসার চুক্তিকে সমর্থন দেননি তারাও বলেছেন, আস্থা ভোটে তারা থেরেসাকেই সমর্থন দেবেন। সব মিলিয়ে থেরেসা অন্তত আস্থা ভোটের সম্ভাব্য ফল নিয়ে স্বস্তিতেই থাকতে পারেন।
এর আগে ১৯৭৯ সালে মাত্র এক ভোটে আস্থা ভোটে হেরেছিল লেবার সরকার। তখন নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হয়েছিল। ওই নির্বাচনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় এসেছিলেন মার্গারেট থ্যাচার।


আরো সংবাদ



premium cement