২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভুলভ্রান্তি ক্ষমা চেয়ে আবারো নৌকায় ভোট চাইলেন শেখ হাসিনা

আ’লীগের ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল; মেগা প্র
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা করছেন : বাসস -

একুশটি বিশেষ অঙ্গীকার দিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহার প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল মঙ্গলবার দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইশতেহার ঘোষণা করে অতীতে কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে সেগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আবারো নৌকায় ভোট চান।
তিনি বলেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। আমি নিজে এবং দলের পক্ষ থেকে আমাদের যদি কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কথা দিচ্ছি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরো সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাক্সিক্ষত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ। আপনারা নৌকায় ভোট দিন। আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করে দেব।’
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে রাজনীতিবিদ, শিল্পী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, বিদেশী কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার জনগণের উপস্থিতিতে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।
ইশতেহারে ঘোষিত বিশেষ অঙ্গীকার হলোÑ ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল, মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সর্বস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সবার জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষি-ব্যবস্থার লক্ষ্যে যান্ত্রিকীকরণ, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ব্লু-ইকোনমি তথা সমুদ্রসম্পদের উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ ইশতেহারে ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্লান তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালে এসডিজিতে উন্নয়ন জংশন, ২০৪১ সালে উন্নত দেশ সোনারবাংলা, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে সমৃদ্ধির সর্বোচ্চ শিখর এবং ২১০০ সালে ডেল্টা প্ল্যান নিরাপদ বদ্বীপের কথা বলা হয়।
৮০ পৃষ্ঠার ইশতেহার পুস্তিকার ৭টি অধ্যায়ে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, ২০০৯ থেকে ২০১৩, ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদ পর্যন্ত সরকারের গৃহীত নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি সমালোচনা করা হয় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।
বিগত দিনের উন্নয়ন চিত্র : ইশতেহারে বিগত দিনের নানা উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ৭৫১ ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি করে ৩৩ বিলিয়ন ডলার, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২১.৮ শতাংশ, জিডিপির আকার প্রায় ৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকায় উন্নীত, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সর্বমোট ২৬০ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার বই বিতরণ করা।
গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ : বিগত সংসদকে কার্যকর সংসদ উল্লেখ করে এবার নির্বাচিত হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের চলমান প্রক্রিয়া জোরদারের পাশাপাশি সংসদকে আরো কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা : মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, গণমাধ্যম, বিচার বিভাগকে আরো শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা লাভের সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন : প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং জনসেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষ দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক গণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জনবল নিয়োগ করা হবে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ : আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল : সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে।
স্থানীয় সরকার ও জনগণের ক্ষমতায়ন : ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা হবে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
সামষ্টিক অর্থনীতি, উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন : আগামী পাঁচ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ ও দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়।
আমার গ্রাম-আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ : শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া হবে। পাকা সড়কের মাধ্যমে সব গ্রামকে জেলা/উপজেলা শহরের সাথে সংযুক্ত করা হবে। ছেলেমেয়েদের উন্নত পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করা হবে। ইন্টারনেট/তথ্য প্রযুক্তি সর্বত্র পৌঁছে যাবে।
তরুণ যুবসমাজ ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’: এক কোটি ২৮ লাখ কর্মসৃজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি উপজেলা থেকে প্রতি বছর গড়ে এক হাজার যুব/যুব নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপন করা হবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চশিক্ষিত তরুণদের তথ্য সংবলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব বিনোদন কেন্দ্র’। প্রতিটি জেলায় ‘যুব স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলা হবে।
বিশেষ অঙ্গীকার নারীর ক্ষমতায়ন : নারীর প্রতি সব বৈষম্যমূলক আচরণ/প্রথা বিলোপ করা হবে। বাল্যবিয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আলাদা ব্যাংকিং ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস : প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করা হবে। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে এবং সবার ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। দারিদ্র্যের হার ১২.৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে।
কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি : খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের নিশ্চয়তা : কৃৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সফল ধারা অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি উপকরণের ওপর ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি সুলভ ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হবে। ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষিপণ্যের দক্ষ সাপ্লাই চেন/ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা হবে। কৃষি গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে। ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোলট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমতো ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি : ২০২০ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ৫,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হবে।
শিল্প উন্নয়ন : পাটজাত পণ্যের রফতানিতে আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে আধুনিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আইটি শিল্প পার্ক স্থাপন করা হবে।
শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রমনীতি : শিল্প শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা করা হবে। নারী শ্রমিকদের জন্য চার মাসের বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি বাস্তবায়ন করা হবে। শ্রমিক, হতদরিদ্র এবং গ্রামীণ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের জন্য রেশনিং প্রথা চালু করা হবে।
শিক্ষা : প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সব গ্রামে, আধা মফস্বল শহরে এবং শহরের নিম্নবিত্তের স্কুলগুলোয় পর্যায়ক্রমে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু করা হবে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত উপবৃত্তি প্রদান অব্যাহত থাকবে। নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়ে গেছে, তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসন করা হবে।
স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ : ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সব নাগরিককে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে। সব বিভাগীয় শহরে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সব সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হবে।
যোগাযোগ : যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আধুনিক বাস সার্ভিস চালু করা হবে। দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন করা হবে। আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। ঢাকার চারপাশের চারটি নদী-খালগুলোকে খননের মাধ্যমে নদী তীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে। একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন ত্বরান্বিত করা হবে। মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিরপত্তার জন্য আন্ডারপাস/ওভারপাস নির্মাণ করা হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি : ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ৫-জি চালু করা হবে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।
সমুদ্র বিজয় : ব্লু-ইকোনমি-সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করব।
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা : বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে। উৎপাদনশীল বনের আয়তন ২০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
শিশু কল্যাণ : শিশুশ্রম বন্ধ করতে কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ করা হবে। পথশিশু, হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন, নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, শিশুসদন প্রতিষ্ঠা এবং বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা উন্নত ও প্রসারিত করা হবে।
প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণ : প্রতিবন্ধী সব শিশুর সুস্বাস্থ্য, শিক্ষা, মর্যাদা ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাফেরা, যোগাযোগ, চিকিৎসা সহজ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রবীণদের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রবীণদের বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন : মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে নেয়া কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহীদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
ধর্ম ও সংস্কৃতি : সব নাগরিকের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে। কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা হবে। শিল্পের সব শাখার ক্রমাগত উৎকর্ষ সাধন ও চর্চার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো হবে।
ক্রীড়া : ক্রীড়া ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ সুবিধার সম্প্রসারণে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হবে। প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায় : পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির যেসব ধারা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভূমিতে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব প্রকার আইন ও ব্যবস্থার অবসান করা হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহ : জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন গঠন করে সব গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা রোধ ও জনগণের সত্য তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করা হবে। মিথ্যা তথ্য প্রচার ও অনাকাক্সিক্ষত গুজব নিরসনে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতাসমৃদ্ধ সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা হবে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহ প্রদান ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। গণমাধ্যম-বান্ধব আইন করা হবে। সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কোনো আইনের অপপ্রয়োগ হবে না।
প্রতিরক্ষা : নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সুরক্ষা : সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী আধুনিকায়নের চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
পররাষ্ট্র : বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় না দেয়ার নীতি অব্যাহত থাকবে।
এনজিও : সরকারি প্রতিষ্ঠান/বিভাগ স্থানীয় সরকারের সাথে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছামূলক সমন্বয় জোরদার করা হবে।
এমডিজি অর্জন এবং এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন) বাস্তবায়ন কৌশল (২০১৬-২০৩০) : সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত করে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করা হবে।
ব-দ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ : ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ সাল নাগাদ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর সমন্বয়ের যোগসূত্র সৃষ্টি করবে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল