২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার মনোনয়নে হাইকোর্টের বিভক্ত আদেশ

-

তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রিটের ব্যাপারে বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং বিচারপতি মো: ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এই বিভক্ত আদেশ দেন।
এই ডিভিশন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ইসির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে বেগম জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলে ইসির সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করেন।
অন্য দিকে একই বেঞ্চর কনিষ্ঠ বিচারপতি মো: ইকবাল কবির জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বেগম জিয়ার রিট খারিজ করে দিয়েছেন। দুই বিচারকের বিভক্ত আদেশের বিষয়টি নিয়ম অনুযায়ী এখন প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে। এরপরই তিনি (প্রধান বিচারপতি) এটি নিষ্পত্তির জন্য তৃতীয় বেঞ্চে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এর আগে, গত সোমবার খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায়ের জন্য দিন ঠিক করেছিলেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ।
গতকাল আদালতে বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ওয়ালিউর রহমান খান, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ব্যারিস্টার ফাইয়াজ জিবরান, আনিছুর রহমান খান, সালমা সুলতানা সোমা, মামুন প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আদেশের পর বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই পক্ষপাতিত্ব করছে, ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে এসেছিলাম। প্রিজাইডিং জাজ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে তিনটি মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও বেঞ্চের অপর বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করেছেন।এখন নিয়ম অনুযায়ী এ মামলার নথিপত্র প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে জানিয়ে কায়সার কামাল বলেন, প্রধান বিচারপতি তৃতীয় একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন আবেদনটি নিষ্পত্তি করার জন্য। আমরা প্রত্যাশা করছি, তৃতীয় বেঞ্চে আমরা ন্যায়বিচার পাব, সঠিক সিদ্ধান্ত পাব।
অন্য দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে দেয়া হলে তা সংবিধান লঙ্ঘন হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে তিনটি রিট পিটিশন করা হয়েছিল। রিট আদেশে হাইকোর্ট দ্বিমত পোষণ করেছেন। যেহেতু দু’জন বিচারপতি ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি, সে জন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে তিনি পরবর্তী বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এটাতো পূর্ব নির্ধারিত বিষয় যেকোনো ব্যক্তি দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কাজেই আমি তো প্রথম থেকেই বলে আসছি কোনো আদালত এ রকম আদেশ দিতে পারে না। যে আদেশের ফলে সংবিধানের একটি বিধান অকার্যকর হয়ে যায়।
বিএনপি নেতা ইকবাল মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়ন গ্রহণে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি অনেক আগেই এই দণ্ড স্থগিত করতে আবেদন করেছিলেন। সেই পিটিশন হাইকোর্টে অ্যালাও করা আছে এই যুক্তিতে একটি বেঞ্চ তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আদেশ দিয়েছেন।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা কিভাবে নির্বাচন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাজমুল হুদার ব্যাপারে আমি জানি না কোন যুক্তিতে তাকে দেয়া হয়েছে। তার কাগজপত্র না দেখে আমি কোনো কথা বলতে পারব না। কিন্তু আমার সামনে খালেদা জিয়ার কাগজপত্র আছে। তিনি তো দণ্ডপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি। এখন দণ্ডভোগ করছেন। তার ব্যাপারে তর্কের কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু এখন বিচারাধীন আছে আমি এর বেশি কিছু বলব না।
উল্লেখ্য, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন বেগম খালেদা জিয়া।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খালেদার পক্ষে রিট আবেদন তিনটি গত রোববার দায়ের করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। গত সোমবার তা শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ।
বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু গত ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিলের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত দেন। প্রার্থিতা বাতিল করা নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে গত রোববার রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়েছিল।
এ দিকে নির্বাচন কমিশনের পুনঃতফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে অধিকাংশ প্রার্থী ও সমর্থক নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা শুরু করে।


আরো সংবাদ



premium cement