২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

প্রচারণায় টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে বিএনপি

-

প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হয়ে গেছে দেশজুড়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। প্রচারণার এই পর্বে ‘গায়েবি মামলায়’ জর্জরিত বিএনপির টিকে থাকাই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। দলটিকে সাংগঠনিক শক্তিমত্তা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রতাপও সামলাতে হবে কৌশলে।
বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী নির্বাচনের পরিবেশ ‘সুষ্ঠু’ করার নামে বেশ কিছু দিন ধরে থেমে থেমে চলা গ্রেফতার অভিযান আরো জোরালো করা হয়েছে। এ অভিযান চলবে দেশজুড়ে গায়েবি মামলার আসামির তালিকা অনুসারে। এ অবস্থায় এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে মাঠে নামতে শুরু করেছেন ধানের শীষের প্রার্থী ও নেতাকর্মী-সমর্থকেরা।
ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব নয়া দিগন্তকে বলেন, ১১৫টি মামলায় জামিন নিয়েছি। আরো থাকতে পারে। পাইকারি হারে মামলা করা হয়েছে, ফলে সব ক’টি মামলা সম্পর্কে জানাও সম্ভব হচ্ছে না।
মামলার বোঝা কাঁধে নিয়ে নির্বাচনের প্রচারণায় নামা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রচারণা শুরু হয়েছে। গ্রেফতারও বেড়ে গেছে। ১২ ঘণ্টায় তার তেজগাঁও-আগারগাঁও এলাকা থেকে আটজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাত হলেই বাসায় বাসায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। না পেলে থানায় দেখা করার কথা বলা হচ্ছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবির্ষকীর কর্মসূচির আগে ও পরে দেশজুড়ে একযোগে মামলার হিড়িক শুরু হয়, যা এক মাস ধরে চলতে থাকে। এসব মামলার বেশির ভাগই ‘গায়েবি মামলা’ হিসেবে পরিচিত। আসামি সংখ্যা দুই লক্ষাধিক। এদের প্রায় সবাই বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলের নেতাকর্মী।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে দুই লাখ ৪০ হাজার জনের একটি তালিকা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ। নির্বাচনের আগে এদের আটক করে একটি ‘সঙ্ঘাতমুক্ত’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যেই এই অভিযান। প্রতিটি কেন্দ্র ধরে ধরে সম্ভাব্য হামলাকারীর নাম ঠিকানা, কোন দলের সমর্থক ও কার জন্য ভোট কেন্দ্রে হামলা করতে পারে, তা উল্লেখ রয়েছে এই তালিকায়। গড়ে দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বিপরীতে অন্তত ছয়জন করে নাম রয়েছে। এই তালিকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের কর্মীদের নাম রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির। বাকি সবাই বিএনপি, জামায়াতসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
জানা গেছে, আগামী ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে চিরুনী অভিযানের মাধ্যমে এসব তালিকাভুক্ত সবাইকে গ্রেফতারের টার্গেট নেয়া হয়েছে।
বিএনপির ৬০ জন প্রার্থীর ফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, অন্তত পাঁচজন নেতা এক শ’র ওপর মামলা মাথায় নিয়ে এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। দুই শ’র ওপরে মামলা রয়েছে তিনজনের বিরুদ্ধে, এক শ’র ওপর দুইজনের বিরুদ্ধে। আর ৫০টির ওপর মামলা আছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা চার। বেশির ভাগ মামলাই হয়েছে নাশকতা, সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ইত্যাদি অভিযোগে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৬টি মামলা। এর মধ্যে ১৬টি চলমান, ২০টির কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আদালত। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে সর্বাধিক ১৩টি এবং ২০১২ সালে ১২টি মামলা হয়েছে। নাশকতা, বিস্ফোরণ, ভাঙচুর, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে।
বিএনপির দাবি, এসব মামলা রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশে করা। পুলিশ ফৌজদারি মামলার আসামিদের গ্রেফতারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে একাধিক প্রার্থী গ্রেফতারও হয়েছেন। দলটির নেতারা বলছেন, মামলার ভয় আর বোঝা নিয়েই তারা নির্বাচনে নেমেছেন। কিন্তু এখন প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হলে ভোট করা কঠিন হয়ে পড়বে।
সর্বোচ্চ ২৬৭টি মামলা নিয়ে ঢাকা-১২ আসনে প্রার্থী হয়েছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম ওরফে নীরব। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়া তার ২২ পাতা হলফনামার ১৮ পাতাই মামলার তালিকা। সব ক’টি মামলাই হয়েছে ২০১০ সালের পরে।
ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী নবী উল্লাহ। তিনি ২২১টি মামলার আসামি। বেশির ভাগ মামলাতেই তিনি জামিনে রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায়। আবার অনেকগুলো মামলার কার্যক্রম স্থগিত আছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে আছে ২১২টি মামলা। তিনি কারাগারে আছেন। প্রার্থী হয়েছেন টাঙ্গাইল-২ আসনে।
ঢাকা-৪ এর প্রার্থী সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ৮০টি মামলা আছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে এখনো ৪২টি মামলা আছে। তিনি লড়ছেন ঢাকা-৮ আসন থেকে।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম-৯ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৪০টি। চট্টগ্রাম-১১ আসনে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে।
রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা আছে, সব ক’টিই বিচারাধীন। রাজশাহী-৫ আসনে নাদিম মোস্তফা ১৮টি মামলার আসামি। রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর নামে আছে ১৫টি মামলা।
ঝুঁকি নিয়েই প্রচারণায় নামছেন প্রার্থীরা : মামলার ভবিষ্যতের না তাকিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে শুরু করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। গতকাল দেশের বিভিন্ন আসনে ধানের শীষের প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামবেন প্রায় সবাই।
নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে আজ প্রচার শুরু করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বগুড়াতেও যাবেন তিনি। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনে কোনো সমতল ভূমি নেই। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভৌতিক মামলায় এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এ ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হচ্ছে। জামিনের জন্য তারা বারবার পিছিয়ে পিছিয়ে দিয়ে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে যে, আমাদের সব শীর্ষস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে আটক রয়েছেন। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান থাকবে, সবাই যাতে প্রচারণা চালাতে পারে, কাজ করতে পারে তার পরিবেশ তৈরি করুন।
প্রতীক পেয়েই গতকাল রূপনগর আবাসিক এলাকায় গণসংযোগ করেন ঢাকা ১৬ আসনের প্রার্থী আহসান উল্লাহ হাসান। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মীরপুর ৭ নম্বর চলন্তিকা ক্লাব থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন তিনি। হাসান জানান, নির্বাচনের দিনে শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মী নিয়ে ভোটের মাঠে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি।
ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তার বিজয় সুনিশ্চিত।
ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী নবী উল্লাহ নবী গতকালই যাত্রবাড়ীতে গণসংযোগ করেছেন। আজ ভাঙ্গাপ্রেস এলাকায় নবী টাওয়ারে মিলাদ মাহফিল করে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন। গতকাল প্রতীক পেয়েই গণসংযোগে নামেন ঢাকা-১১ আসনের প্রার্থী শামীম আরা। উত্তর বাড্ডার খানবাগ এলাকায় গণসংযোগ করেন। আর আর মধ্য বাড্ডার নিজ বাসভবন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন তিনি।
শামীম আর বলেন, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও মিথ্যা মামলায় দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হওয়া তার স্বামী এম এ কাইয়ুম যাতে দেশে ফিরে মানুষের কল্যাণে আবারো কাজ শুরু করতে পারেন সেজন্যই নির্বাচনে নেমেছেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement