২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহাজোটে মহাসঙ্কট

আসন বণ্টন নিয়ে জটিলতা : জাপার আলাদা প্রার্থী তালিকা
-

আসন বণ্টন নিয়ে শেষ সময়ে মহাসঙ্কটে পড়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে গতকাল রোববার ৩০০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও জাতীয় পার্টিসহ শরিক কয়েকটি দল আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা। শেষ পর্যন্ত এসব প্রার্থী মাঠে থাকলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের সূত্রগুলো জানায়, আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে জোট শরিকদের মতবিরোধ চলছিল। বিশেষ করে সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক জাতীয় পার্টি এবং শেষ দিকে জোটে ভেড়া বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সাথে এ বিরোধ চরমে ওঠে। এমন প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টন করে নৌকা প্রতীকের চিঠি হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে ওয়ার্কার্স পার্টিকে পাঁচটি, জাসদকে (ইনু) তিনটি, তরীকত ফেডারেশনকে দু’টি, জাতীয় পার্টিকে (জেপি) দু’টি, জাসদকে (আম্বিয়া) একটি এবং যুক্তফ্রন্টকে তিনটিসহ মোট ১৬টি আসন দেয়া হয়। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির জন্য ৪০ থেকে ৪২টি আসন রাখা হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তার হিসাব অনুযায়ী জোট শরিকেরা ৬০টি আসন পাওয়ার কথা। অন্য ২৪০টি আসন এককভাবে আওয়ামী লীগের। কিন্তু গত শনিবার নির্বাচন কমিশনে ১৬৪ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালিকা পাঠানো হয়। বাকি ৩৬টি আসন রাখা হয় জাতীয় পার্টির জন্য। এর আগে শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০টি আসন দেয়া হবে বলে একাধিকবার ঘোষণা দেন ওবায়দুল কাদের। আর গতকাল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে অবস্থান থেকে সরে গিয়ে জাতীয় পার্টিকে ২৯টি আসন দেয় আওয়ামী লীগ।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টি শুরুতে ৭০টি আসন দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত ৫০ থেকে ৫৫টিতে অটল থাকে; যা নিয়ে সরকারের সাথে বিরোধ বাড়তে থাকে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘অসুস্থতা’ এবং এক রকম ‘অদৃশ্য’ হওয়াকে আসন জটিলতার ফল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টিকে ৪০ থেকে ৪২টি আসন ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েও মাত্র ২৯টি আসন দিয়ে নির্বাচন কমিশনে তালিকা পাঠায় আওয়ামী লীগ। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় পার্টিও জোটের বাইরে আরো ১৩২ আসনসহ মোট ১৬১ আসনে দলের প্রার্থী রেখে তালিকা ঘোষণা করেছে। এই আসনগুলোতে জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করেনি। এ ছাড়া দলটির চেয়ারম্যানের সদ্য নিযুক্ত বিশেষ সহকারী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রার্থিতা ফিরে পেলে সমঝোতাভিত্তিক আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০টি। সে হিসাবে ১৬২ আসনে লড়বে দলটি। রুহুল আমিনের প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে শুনানি চলছে। শুনানি শেষে জানা যাবে তিনি নির্বাচনের মাঠে থাকবেন, কি না।
একই সাথে সরকারের আরেক শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) জোটের তিনটি আসনের বাইরে আরো চারটি আসনে দলীয় প্রার্থী বহাল রেখে নির্বাচন কমিশনে তালিকা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।
অন্য দিকে কাক্সিক্ষত আসন না পাওয়ায় নিজ দল ও জোটের মধ্যে বেশ চাপের মুখে পড়েন যুক্তফ্রন্ট নেতারা। আওয়ামী লীগ থেকে দেয়া মাত্র তিনটি আসন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা। যেখানে যুক্তফ্রন্টে অর্ধশতাধিক দল রয়েছে সেখানে মাত্র তিনটি আসন দিয়ে তাদের অপমান করা হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা। এমন প্রেক্ষাপটে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেও সরকারের চাপের মুখে তা স্থগিত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সাথেও বি. চৌধুরীর কথা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানায়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোটের প্রার্থী হিসেবে দু’টি আসন রংপুর-৩ (সদর) ও রাজধানীর অভিজাত এলাকা ঢাকা-১৭ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ রংপুর ছাড়লেও ঢাকায় চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে মনোনয়ন দেয়। এতে বেশ ক্ষুব্ধ হন এরশাদ। এখন এ আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও এরশাদ জোটগতভাবে ঢাকার এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন সংম্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যে ১৩২টি আসনে জাতীয় পার্টি তাদের প্রার্থী বহাল রেখেছে, তার ৭২টি আওয়ামী লীগের জন্য সম্ভাবনাময়। ফলে এই আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের এক জটিল সমীকরণে পড়তে হবে। নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেহেতু গত ১০ বছর আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি গাঁটছড়া বেঁধে আছে। ফলে ত্রিমুখী লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, প্রতিটি নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে অর্থাৎ আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। বৃহত্তর রংপুর, বৃহত্তর সিলেটে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকা মানেই আওয়ামী লীগের ঝুঁকি। ২০০১ সালে নৌকা প্রতীকে ভোট বাড়লেও ত্রিমুখী লড়াইয়ের কারণে আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২ আসন পেয়েছিল। আর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোটের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করেছিল। মহাজোটের বাইরে জাপা কোনো একক প্রার্থী দেয়নি। কিন্তু এখন ১৩২টি আসনে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করায় সেই আসনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেল।
অন্য দিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তিনটি আসন পেয়েছে হাসানুল হক ইনুর জাসদ। তবে এতে সন্তুষ্ট নন তিনি। আরো চারটি আসনে নিজ দলের মশাল প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছেন ইনু। আওয়ামী লীগের সাথে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন হাসানুল হক ইনু। এর মধ্যে তার দল দুই ভাগ হয়ে যায়। এক দিকে হাসানুল হক ইনু অন্য দিকে আম্বিয়া-বাদল। তার দলের সেই বিভক্তি মেনে নিয়ে ইনুকে তিনটি আসন এবং আম্বিয়াকে একটি আসন বরাদ্দ দেয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রতি কোনো সম্মান না দেখিয়ে নিজ দলের ব্যানারে আরো চারটি আসনে প্রার্থী দিচ্ছেন হাসানুল হক ইনু। বিষয়টি নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে আওয়ামী লীগ।


আরো সংবাদ



premium cement
ছোট দেশ কাতার অর্থনীতি ও কূটনীতিতে যেভাবে এত এগোল আশুলিয়ায় ছিনতাইকারীর হামলায় আহত নারীর মৃত্যু ‘মুসলিমদের সম্পদ পুনর্বণ্টন’ অভিযোগ মোদির, এফআইআর সিপিএমের প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বিখ্যাত চালকবিহীনবিমানের আবিষ্কারক কটিয়াদীতে আসছেন গাজার গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পেকুয়ায় জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১৪ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ : টিআইবি লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ইরান সমর্থিত যোদ্ধা নিহত জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ

সকল