১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
তারেক রহমানের জন্মদিনের আলোচনা

সরকার প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে

বিএনপির আলোচনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অতিথিরা : নয়া দিগন্ত -

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপির সামগ্রিক তৎপরতায় সরকার প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি গতকাল এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, সরকার ভয় পেয়ে তারেক রহমানকে (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে স্কাইপি বন্ধ করেছে। তফসিল ঘোষণার পরও চার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন চালাচ্ছে। এ থেকে আমাদের মুক্তি চাইলে সব অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। আর সে অস্ত্র হলো ভোটের অস্ত্র। সবাই মিলে ভোট দিয়ে এই দানব সরকারকে হটাতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট বার মিলনায়তনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৪তম জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে ও বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, জয়নাল আবেদীন, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ডিএলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি একটি কবিতা আবৃত্তি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী বেবী নাজনীন একটি গান পরিবেশন করেন। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, রেহানা আখতার রানু, হেলেন জেরিন খান, শায়রুল কবির খানসহ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পর দেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভোট যুদ্ধের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। অবশ্যই এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে চূড়ান্ত জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান গত তিন দিন ধরে দিনে কমপক্ষে ২০-২২ বার এই কথাই বলছেন নেতাকর্মীদের যারা মনোনয়নের জন্য আসছেন। তিনি এই ওয়াদা নিচ্ছেনÑ আমরা ভোটের দিনে এই আন্দোলনটা করব, সব মানুষকে নিয়ে আমরা ভোটকেন্দ্রে যাবো। আমার বয়স হয়ে গেছে, খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তারপরও আমি বলতে চাই, শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে আমরা সংগ্রাম করব, লড়াই করব বুকে বুক বেঁধে। ইনশা আল্লাহ ৩০ ডিসেম্বরের পরেই এ দেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে, ওদের পতাকা উড়বে না।
মামলা-মোকাদ্দমায় জর্জরিত দলের নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা যদি আজকে মুক্তি চাই, আমাদের সবগুলো অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে এবং সেই অস্ত্র হচ্ছে আমাদের ভোটের অস্ত্র। আমরা যদি আজকে জনগণের কাছে চলে যাই, জনগণকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে আসি, আমি যদি জনগণকে সাথে নিয়ে ভোট দিতে যাই তাহলে কোনো শক্তি নেই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে। এখানে অনেককে চিনতে পারছি। পালিয়ে পালিয়ে না বেড়িয়ে ভোটের জন্য যান, প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যান এবং ভোটের দিন সবাইকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসুন। ওইখানেই সব আন্দোলনকে নিবৃত্ত করুন। তাহলেই আমরা জয়যুক্ত হবো।
তারেক রহমানকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, এখন আমাদের নেতা এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক। তার এই জন্মদিনে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, তার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করব এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, নির্বাচনের পরেই তাকে আমাদের মধ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং আমাদের নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ করে দেন।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এক কঠিন সময়ে আছি। এই সময় অতিক্রম করতে হবে। আমাদের দেশনেত্রী মিথ্যা মামলায় কারাগারে, হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে, হাজার হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আজকে (গতকাল) আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়াকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধা, নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন। আমরা কী মুখ বুঝে বসে থাকব? আমরা কী এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করব না? ১০ বছর চেষ্টা করছি। এখন শেষ চেষ্টা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এই সুযোগ আজকে এসেছে। মান্না সাহেব ডা: জাফরুল্লাহ সাহেব বললেন, আমার হাত-পা বেঁধে রাখবে, এই রাখার মধ্য দিয়েও আমাদের যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা শৃঙ্খল মুক্ত হতে হলে ওই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার এত ভয় পেয়েছে যে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে কথা বলছেন স্কাইপিতে সেটা পর্যন্ত বন্ধ করে দিচ্ছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করবে না বলে আবারো গ্রেফতার করছে, আবার ভয়ও দেখাচ্ছে। ধানের শীষ সম্পর্কে একটা রিটও করিয়েছে কালকে। ধানের ছড়া ধানের শীষ বলা যাবে না। রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হলে কতটা ভীত সন্তস্ত্র হলে সরকার এসব করতে পারে। এসব কখন করে যখন তার জনসমর্থন থাকে না, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আপনাদের প্রতিরোধ ও জনগণের শক্তি দিয়ে জাল তৈরি করতে হবে, জনগণের শক্তি দিয়ে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটা আমাদের বাঁচা মরা অস্তিত্বের সংগ্রাম।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একটাই পথ আছেÑ জনগণের রায়ে এই সরকারকে বদলিয়ে দিতে হবে। ওরা সব ধরনের নির্যাতন করছে। একটা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার পৃথিবীর ইতিহাসে হয়নি। ওরা সেই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করার পর আবার টেলিভিশনে প্রচার করে- থ্যাংক ইউ পিএম। কিসের থ্যাংকস? আপনি একটা ফকিরকে ভিক্ষা দিয়েছেন কি না তা দেখিয়ে ও দিকে নিজেকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য উপস্থাপন করেন আর শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেন। তার জন্য আপনাকে ধিক্কার জানাতে হয়। বিএনপির লাখ লাখ কর্মীকে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে, যত মামলা থাকুক। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলতে হবেÑ একটাই সুযোগ আমরা যেভাবে স্লোগান দেই, আপনারা দেনÑ আসিতেছে শুভ দিন, ধানের শীষে ভোট দিন। এখন বলবেন দিন তো এসে গেছে, দিনক্ষণ ঠিকও হয়ে গেছে। কোন দিন কত তারিখ। ৩০ ডিসেম্বর। এটাই লড়াই। আমরা এই নির্বাচনেই এই জালেম সরকারের পতন ঘটাবো। তারেক রহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানান মান্না।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তারেক জিয়াকে কি আপনারা ভালো বাসেন? তাহলে তাকে আপনাদের ভালোবাসার একটা প্রমাণ দিতে হবে। তা হচ্ছে সামনে ৩০ ডিসেম্বর ভোট। আপনাদের সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তবেই জনগণ ভোট দিতে পারবে, তারেক জিয়াকে আপনারা দেশে আনতে পারবেন। আপনারা কোনোভাবে ভোটের ময়দান ছেড়ে যাবেন না। রাতে বেলা আপনাকে নিয়ে গেলে ভোটকেন্দ্রে মাকে নিয়ে আপনার ভাইবোনকে দাঁড়াতে হবে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকারের কাছে সবচেয়ে আতঙ্কিত যে ব্যক্তি, তিনি হলেন তারেক রহমান। ওই কারণেই তারা আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে নিয়ন্ত্রিত বিচারব্যবস্থা দিয়ে একের পর এক তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমাদের দুঃখ হয়, বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হতো না আর খালেদা জিয়াকেও কারাগারে থাকতে হতো না। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনকে একটি আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়ে পরিবর্তনের আগে আরেকটি পরিবর্তন এনে এই দানব সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement