২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়াকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ

-

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। খালেদা জিয়া যখনই চাইবেন তখনই তাকে মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদেশে খালেদা জিয়া যখনই যে চিকিৎসার কথা বলবেন মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে সেই চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদেশের সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মাদ আলী রিট আবেদন অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদানের আদেশ প্রার্থনা করলে আদালত বলেন, অপনারা চিকিৎসা চেয়েছেন, আমরা যথাযথ চিকিৎসা দিতে বলছি। আমরা বলছি প্রপার ট্রিটমেন্ট দিতে। খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে বলছি।
গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে ছিলেনÑ সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, আনিছুর রহমান খান, ফাইয়াজ জিবরান মঈন, সালমা সুলতানা প্রমুখ। অপর দিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
আদেশের পর জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা বলেছি খালেদা জিয়ার পূর্ণ চিকিৎসা ছাড়া তাকে জোর করে কারাগারে নেয়া হয়েছে। আমরা এর বিরুদ্ধে আবেদন করেছি, আদালত আবেদন নিষ্পত্তি করে বলেছেন, যখনই তিনি চিকিৎসা চাইবেন তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। তাকে যথাযথ চিকিৎসা দিতে বলেছেন। বেগম খালেদা জিয়া যখনই চাইবেন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে বলেছেন। তিনি যখনই চাইবেন তাকে প্রপার চিকিৎসা দেয়ার জন্য হাসপাতালে নিতে হবে।
আদেশের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, আউটডোর প্যাশেন্ট হিসেবে ইনজেকশন বা ফিজিওথেরাপি তিনি জেলে বসেই নিতে পারেন। তা ছাড়া, তিনি যখনই অসুস্থ হন, তার যদি ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হয়, তবে জেল অথরিটি মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ নিয়ে সাথে সাথে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ওই মেডিক্যাল বোর্ড অথরিটি যদি মনে করে তাকে (খালেদা জিয়া) চেকআপ করানো দরকার, সেটা জেলে গিয়েও করতে পারবেন। তিনি এখনো বোর্ডের আন্ডারে।
গত ১১ নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে কারাগারে নেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও হাসপাতালে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়ার রিট আবেদনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদেশের জন্য রাখা হয়। এরপর গত ১৮ নভেম্বর এক সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল ১৯ নভেম্বর আদেশের জন্য রাখা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ না করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, যা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। রিট আবেদনে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার আর্জি জানানো হয়। রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব, কারা কর্তৃপক্ষ ও বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষসহ ৯ জনকে বিবাদি করা হয়।
বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে এর আগে করা রিট আবেদনটি গত ৪ অক্টোবর নিষ্পত্তি করে কিছু নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের পর চিকিৎসার জন্য ৬ অক্টোবর তাকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর গত ৮ নভেম্বর বিএসএমএমইউ থেকে তাকে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়। ওই দিন নাইকো মামলায় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত আদালতে খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়। শুনানির একপর্যায়ে খালেদা জিয়া আদালতকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আমি অসুস্থ। আমি আর বসে থাকতে পারছি না। হাসপাতাল থেকে সরাসারি আমাকে এখানে আনা হয়েছে। হুইল চেয়ারে বসে থাকতে আমার কষ্ট হচ্ছে। এরপর গত ১৪ নভেম্বর নাইকো মামলায় খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হলে ওই দিনও তিনি আদালতে অসুস্থতার কথা বলেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে খালেদা জিয়ার আপিল : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজার রায় স্থগিত ও বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন। একই সাথে আবেদনে খালেদা জিয়ার জামিন চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আপিল বিভাগে আমরা হাইকোর্টের রায় স্থগিত ও বাতিল চেয়ে আবেদন করেছি। তিনি বলেন, হাইকোর্টে অবৈধভাবে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কেননা, দুদক সাজা বৃদ্ধি চেয়ে যে আবেদন করেছে ওই আবেদনের ওপর আমরা শুনানিই করতে পারেনি।
অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বলেন, ৩৫টি গ্রাউন্ডে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আমরা আপিল আবেদন করেছি। আমরা বলেছি, এই মামলার তদন্ত কখনোই সম্পন্ন হয়নি। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে কিছু করার জন্য এই অর্থ দেয়া হয়। কিন্তু এই অর্থ কে দিয়েছেন, কী উদ্দেশ্যে দিয়েছেন, তা নির্ণয় করা হয়নি।
আইনজীবীরা জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালাস চেয়ে প্রায় এক হাজার ৪০০ পৃষ্ঠার আপিল ফাইল করা হয়েছে। এখন যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে মামলা কার্যতালিকায় এলে শুনানি হবে। আপিল আবেদনে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত, বিচারিক আদালতের দেয়া পাঁচ বছরের সাজা বাতিল এবং এ মামলায় যেহেতু খালেদা জিয়া হাইকোর্ট বিভাগে (মামলা চলাকালে) জামিন ছিলেন, তাই তার জামিন চাওয়া হয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে নি¤œ আদালতের দেয়া পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। হাইকোর্টের রায়ে সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের রিভিশন আবেদনের রুল যথাযথ ঘোষণা করে খালেদার জিয়ার সাজা বৃদ্ধি করে ১০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া, ৫ বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আপিল খারিজ করে দেয়া হয়। এ ছাড়া ১০ বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করা হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো: আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। অপর দিকে, মামলায় অপর চার আসামিÑ মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া, আসামিদের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement