২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খেলাপিদের অযোগ্য ঘোষণায় ব্যর্থতার দায় ব্যাংকারদের বহন করতে হবে

জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন
-

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণ খেলাপিদের নির্ভুল তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে অথবা খেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ব্যর্থ হলে এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাকেই বহন করতে হবে। একই সাথে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেÑ এমন বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) সংশোধিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রার্থীদের ব্যাংকের ঋণ খেলাপ সংক্রান্ত তথ্য সঙ্কলন ও সরবরাহ নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে ব্যাংকারদের করণীয় বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সমাজে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেন না। একপর্যায়ে এ ঋণ খেলাপি হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংকের খাতায় তাদের নাম খেলাপির তালিকায় রয়েছে। বছরের পর বছর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করলেও নামীদামি গাড়ি হাকান। অভিজাত এলাকায় বসবাস করেন। নিজ সন্তানদের বিদেশে লেখাপড়া করান। তারা রাজনীতির ছত্রছায়ায় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যান। যেকোনো প্রকার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকাতে ১৯৯১ সালে ঋণ খেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই নির্বাচন এলেই ওই শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরা খেলাপি মুক্ত হওয়ার জন্য ব্যাংকে ব্যাংকে ধরনা দেন। যদিও এর আগে ব্যাংকারেরা প্রভাবশালী এসব ঋণ খেলাপিদের বাড়ির উঠানেও যেতে পারেন না।
বরাবরের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ঋণ খেলাপিরা এবারো ব্যাংকে আসছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন তাদের ঋণের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী ঋণ খেলাপিরা খেলাপি মুক্ত হতে মোট খেলাপি ঋণের ১৫ শতাংশ এককালীন পরিশোধ করতে হয়। তবে রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ঋণ খেলাপিরা ন্যূনতম ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ না করেই খেলাপি মুক্ত হতে চান। আবার কেউ কেউ আইনের ফাঁকফোঁকর খুঁজে উচ্চ আদালতে রিট করেন।
এ দিকে কোনো জাতীয় নির্বাচনে ঋণ খেলাপিরা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন সেজন্য তাদের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনার। এজন্য মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় নির্বাচন কমিশনের একটি টিম আগ্রহী প্রার্থীদের ঋণতথ্য ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যাচাই করে। ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঋণতথ্য সরবরাহ করা হয় নির্বাচন কমিশনারকে।
অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় ঋণ খেলাপিরা নানা উপায়ে নিজেদের খেলাপি মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। কোনো ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে নিজেকে খেলাপি মুক্ত হয়ে কোনো প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে না পারেন সেজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত ১৫ নভেম্বর এ সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
পরিপত্রে যেসব প্রার্থী নিজস্ব নির্বাচনী এলাকার পরিবর্তে অন্যত্র ব্যাংক হিসাব বা ঋণ হিসাব পরিচালনা করে আসছেন তাদের ঋণ খেলাপ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রার্থীদের তালিকা নির্বাচন কমিশন বা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের নিকট হতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা এমডির বিশেষ দূত মারফত সংগ্রহ করবেন। তালিকা প্রাপ্তির সাথে সাথে এমডি ইতোমধ্যে হালনাগাদকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের তালিকার সাথে মিলিয়ে দেখার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই সাথে পুনঃযাচাই করে ঋণ খেলাপির তথ্যসহ তালিকার এক কপি বিশেষ দূত মারফত অথবা ফ্যাক্স যোগে নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকে (সিআইবি) ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠাতে হবে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রার্থীদের ঋণ খেলাপি সম্পর্কিত তথ্যের নির্ভুলতার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপক বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর বর্তাবে। ভুল তথ্য পরিবেশন বা ঋণ খেলাপ সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপনে ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement