২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আসন বণ্টনে প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখছে জোট-মহাজোট

৭০টি আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে ; জরিপে ইতিবাচক হলেই মনোনয়ন ; দুর্বল দলের কেউ মনোনয়ন পাচ্ছেন না
-

জোট-মহাজোটে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে জরিপ রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জোট-মহাজোটের পক্ষ থেকে দেয়া তালিকাও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী মনোনয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই আস্থা রাখছে জোট-মহাজোটের শীর্ষ নেতারা। তবে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ায় ক্ষমতাসীন জোটের অধিক দুর্বল দলের কোনো নেতা এবারো মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, জনপ্রিয় ও ইমেজ সম্পন্ন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হবে। এ জন্য ব্যক্তিগত সোর্সসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার জরিপ করিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনের আলোকে জোট-মহাজোটকে আগামী নির্বাচনে ৭০টি আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আসন সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার আগেই শেষবারের মতো নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার জন্য জোট-মহাজোটের নেতাদের সাথে দুয়েক দিনের মধ্যে গণভবনে অনানুষ্ঠিকভাবে জোট প্রধানের বসার কথা রয়েছে। ওই আলোচনায় বাদ পড়া অধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর নাম উঠে এলে চূড়ান্ত তালিকায় ওই প্রার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ১৪টি দল নিয়ে গঠিত হলেও এতে মূলত দল রয়েছে ১৩টি। জোট প্রধান আওয়ামী লীগ, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু), তরিকত ফেডারেশন, জাসদ (বাদল) ও ন্যাপ (মোজাফফর) এই সাতটি দল সরকারের অংশীদার। এর মধ্যে জোটের অন্যতম শরিক জাসদের দুই অংশে সংরক্ষিত আসনের এমপিসহ ছয়জন এমপি রয়েছে। অবিভক্ত জাসদ গত নির্বাচনে ১৫টি আসন দাবি করেছিল। এবার চূড়ান্তভাবে ১০ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-৫ আসন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোরালোভাবে দাবি জানানো হয়েছে। জোটের আরেক অংশীদার ওয়ার্কার্স পার্টির সংরক্ষিত আসনসহ ছয়জন এমপি রয়েছে। জোটের আরেক শরিক তরিকত ফেডারেশন গত নির্বাচনে ১২টি আসন দাবি করে দু’টি পেয়েছিল। বর্তমান সরকারে তাদের দুইজন এমপি আছে। আরেক শরিক জাতীয় পার্টি-জেপির (মঞ্জু) দুইজন এমপি আছে। জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে (মোজাফফর) একটি সংরক্ষিত আসনের এমপি পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
ক্ষমতাসীন জোটের বাইরে আছে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি। তারাও সরকারের অংশীদার। তবে জোটের অংশীদার সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, গণ-আজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ ও কমিউনিস্ট কেন্দ্র বর্তমান সরকারের অংশীদার হতে পারেনি। এবার তারাও দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২২০টি আসন রেখে ৮০টি আসন জোট মহাজোটের জন্য ছেড়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনা আছে আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে জোটের প্রার্থীদের ৩০ আসন এবং মহাজোটের প্রার্থীদের ৫০ আসন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে ইউনাইটেড ন্যাশনাল এলায়েন্স (ইউএনএ), ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিএনএ, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ও তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপির নেতৃত্বাধীন জোটের ১৮টি দল, সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট এবং মোস্তফা আমীর ফয়সালের নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টি এবং হেফাজতে ইসলামসহ মহাজোটের অন্যান্য দলের মধ্যে ওই ৫০ আসন বণ্টন করা হতে পারে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিকে ৩০টি, যুক্তফ্রন্টকে ১০টি, হেফাজতে ইসলামকে চারটি এবং অন্যদের ছয়টি আসন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গণ-আজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা সাতটি আসনের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। গতবার আমাদের কোনো আসনে মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চান। তার এ কথায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছি। আশা করি এবার আমাদের মূল্যায়ন করবেন। ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: ইসমাইল হোসেন বলেন, ১০টি আসনের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ঠিক আছে দেখি। আমরা মনে করি, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মূল্যায়ন করবেন।
জোটের শরিকদের কতগুলো আসন দেয়া হচ্ছে- সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে গতকাল রোববার সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ৬৫ থেকে ৭০টির মতো আসন দেয়া হবে। তবে এর মধ্যেও আলাপ-আলোচনা ও জরিপ অনুযায়ী জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী বেশি হলে তাদের আরো বেশি আসন দেয়া হবে। আর কম থাকলে তাও বিবেচনা করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement