১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অসত্য সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

অধিকারের ওপর হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে

বক্তব্য রাখছেন আদিলুর রহমান -

কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারকে নিয়ে প্রকাশিত অসত্য সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল গুলশানস্থ অধিকার এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধিকার-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান। সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আদিলুর রহমান খান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার রাষ্ট্রের হাতে সংঘটিত সব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তুলে ধরে দেশের জনগণকে সচেতন করা এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়ে প্রচারাভিযান চালানো, প্রতিবাদ জানানো এবং রাষ্ট্রকে মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বিরত রাখার জন্য সব সময়ই সচেষ্ট থেকেছে। জনগণের ভোটের অধিকার যাতে নিশ্চিত হয় সেই লক্ষ্যে মানবাধিকার কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি ১৯৯৬ সাল থেকে অধিকার নির্বাচন প্রক্রিয়াসহ নির্বাচনী সহিংসতা পর্যবেক্ষণ করে আসছে। বাংলাদেশের কোনো সরকারই মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অধিকার তার মানবাধিকার সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে সব সরকারের আমলেই বিভিন্নভাবে হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের আমলে অধিকারের ওপর আক্রমণ, নিপীড়ন ও হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে।
বিশেষ করে ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর থেকে অধিকার সরকারের ভয়াবহ রোষানলে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে নিহতদের নাম ঠিকানাসহ তালিকা চাইলে ভিকটিম পরিবারগুলোর নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অধিকার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানায় এবং সেই কমিটির কাছে তালিকা হস্তান্তর করবে বলে জানায়। কিন্তু তা না করে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অধিকারের সেক্রেটারিকে তুলে নিয়ে যায়। পর অধিকারের সেক্রেটারি ও পরিচালকের বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়। তারা উভয়ে ৬২ দিন এবং ২৫ দিন কারাগারে আটক থাকেন। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অধিকার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্টসহ ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার নিয়ে যায়। কম্পিউটার থেকে নিহতদের খসড়া তালিকা নিয়ে অধিকারকে হয়রানি ও এর সুনাম ক্ষুণœ করার জন্য তা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সরবরাহ ও প্রচার করার ব্যবস্থা করে। এখনো অধিকারকে ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার ফেরত দেয়া হয়নি।
২০১৩ সাল থেকে অধিকারের ওপর ধারাবাহিকভাবে হয়রানি ও নিপীড়ন চলছে এবং অধিকারের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরাও নজরদারিতে রয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অধিকারের সব প্রকল্পের অনুমোদন ও অর্থছাড় দেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে অনেক কর্মী নিরাপত্তার অভাবে এবং আর্থিক কারণে অধিকারের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সম্পৃক্ত থাকতে চেয়েও পারেননি। অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নারী মানবাধিকার কর্মীরাও হুমকি ও ভয়ভীতির শিকার হন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে অধিকারকে রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকারবিরোধী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে।
অধিকার লক্ষ্য করছে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে অধিকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। এর মধ্যে দু’টি পত্রিকা ও একটি চ্যানেল রয়েছে। পত্রিকা দুটির প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিপত্র লঙ্ঘন, ১০ অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক অর্থনৈতিক লেনদেন, প্রকল্প শেষ হওয়ায় ফান্ড বন্ধ থাকলেও দাতাসংস্থার নগদ অর্থ গ্রহণসহ বিতর্কিত তৎপরতার কারণে অবিলম্বে অধিকার-এর সব কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।
সে ক্ষেত্রে অধিকার-এর বক্তব্য হচ্ছে, অধিকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিপত্র কখনোই লঙ্ঘন করেনি। সংগঠনটি ১৯৯৫ সালে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিবন্ধিত হওয়ার পর থেকেই ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যুরোর অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেছে এবং বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর বার্ষিক অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে। অথচ ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অধিকার-এর সব মানবাধিকার বিষয়ক প্রকল্পের অর্থছাড় বন্ধ করে রেখেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অধিকার এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধন নবায়ন করার জন্য আবেদন করলেও তা এখন পর্যন্ত অপেক্ষমাণ রাখা রয়েছে। ফলে বিদেশী দাতা সংস্থার কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে প্রকল্প পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন স্থগিত থাকায় ১০ অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক অর্থনৈতিক লেনদেনের যে কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তা অসত্য ও ভিত্তিহীন।
চ্যানেলটি কোনো প্রকল্পের নাম উল্লেখ না করেই মনগড়াভাবে অর্থছাড়ের বিষয়ে রিপোর্ট করেছে যা প্রকৃত তথ্যের সঙ্গে কোনো রকম সঙ্গতি নেই। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে অধিকারের ৩টি প্রকল্প চলমান ছিল। অক্টোবর ২০১০ থেকে জুন ২০১৩ পর্যন্ত মেয়াদে ‘হিউম্যান রাইটস রিসার্চ অ্যান্ড এডভোকেসি’ শীর্ষক প্রকল্পের অর্থছাড় ছিল ১ কোটি ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৪১৯ টাকা। এপ্রিল ২০১২ থেকে মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত মেয়াদে ‘এডুকেশন অন দি কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার অ্যান্ড অপক্যাট অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পটির মোট অর্থছাড় ছিল ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার ৬০ টাকা ৮৫ পয়সা। জানুয়ারি ২০১৩ থেকে ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত মেয়াদে ‘এ্যামপাওয়ারিং উইমেন এজ কমিউনিটি হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস’ শীর্ষক প্রকল্পটির অর্থছাড় ছিল ৩৭ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩০ টাকা। ৩টি প্রকল্পের মোট অর্থছাড় ছিল ৩ কোটি ৩ লাখ ২৬ হাজার ৩০৯ টাকা ৮৫ পয়সা। উল্লিখিত ৩টি প্রকল্পেরই অডিট রিপোর্ট ও বার্ষিক প্রতিবেদন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে জমা দেয়া হয়েছে। অথচ চ্যানেলের প্রতিবেদনে ২০১২ ও ২০১৩ সালে অধিকার মোট ১৭৪ কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৮ টাকা অর্থছাড় পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছে যা অধিকারকে বিস্মিত করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’

সকল