২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মার্কিন কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ কামনা

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ব্রিফিং
ইউএস কংগ্রেসের ব্রিফিং :নয়া দিগন্ত -

বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিভিন্ন থিংক ট্যাংক ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মকর্তারা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসকে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেন কেউ কেউ। সরকারকে বাংলাদেশ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে জোর আরোপ করেন বক্তারা। বাংলাদেশে অব্যাহত গুম ও খুনের ঘটনা অসহনীয় পর্যায়ে উপনীত হয়েছে বলেও মনে করেন তারা। গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের টম লেন্টুস হিউম্যান রাইটস কমিশনে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ উদ্বেগের কথা জানান অংশ নেয়া প্যানালিস্টরা। ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের টম লেন্টুস হিউম্যান রাইটস কমিশনের কো-চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান র্যান্ডি হিউল্টন ও কংগ্রেসম্যান জেমস পি ম্যাকগভার্ন। ন্যাশনাল এন্ডুমেন্ট ফর ডেমোক্র্যাসি এশিয়া অঞ্চলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনা দেবের সঞ্চালনায় ব্রিফিংয়ে প্যানালিস্ট বক্তব্য রাখেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডাইরেক্টর জন সিফটন, ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের পলিসি এনালিস্ট ওয়ারিস হোসাইন, ওয়ার্ল্ড ভিশন ইউএসএর সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার লরা বর্মণ। অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধান মাহবুব সালেহ যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের গোলাম দস্তগীর আওয়ামী লীগ নেতা অমর ইসলাম, যুবলীগ নেতা জাহিদ হোসেন প্রমুখ। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. জিয়াউদ্দিন।
জন সিফটন বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এক সঙ্কটময় মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। এবারের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হবে বলেও আশা করা কঠিন। কারণ বিরোধীদলের বহু নেতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। এ ছাড়াও ১৯ জন বিএনপি নেতা গুম হয়েছেন। প্রায় হাজারের মতো মানুষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক কতজন লোক রাজনৈতিক কারণে কারাগারে আছেন তা নিরূপণ করা কঠিন। তিনি আরো বলেন, সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এতই নাজুক যে তা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা কঠিন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। স্কুল ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে কথা বলায় সাংবাদিক শহিদুল আলমকে কারান্তরীণ করা হয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণে ইতোমধ্যেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসই পারে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে সরকারকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধ্য করতে। কারণ কংগ্রেসের এক-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখন ডেমোক্র্যাটদের রয়েছে। ওয়ারিশ হিউস্টন বলেন, নির্বাচন সামনে নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার আশঙ্কা রয়েছে যেমনটি আগের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও তিনি কওমি সনদের স্বীকৃতি ও হেফাজতে ইসলামের কাছ থেকে সংবর্ধনা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন। অবশ্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
এনআরবি নিউজ জানায়, জন সিফটন বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। সাংবাদিক শহিদুল ইসলামকে অবশেষে জামিন প্রদান করা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে হুমকি দেয়া হয়েছে উচ্চতর আদালতে আপিল করার- উল্লেখ করেন সিফটন। নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতির অবসানে মার্কিন কংগ্রেসকে ভূমিকা রাখার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে সিফটন বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে পরে যে সরকার ক্ষমতা নেবে তাদের বৈধতা থাকবে না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকর রাখতেই অবাধ-সুষ্ঠু পরিবেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন সিফটন। জন সিফটন জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের ট্রুপস নিষিদ্ধ করার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, যারা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত, তারা শান্তিরক্ষায় থাকা উচিত নয়।
ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করা হয় বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে র্যাব। সংবাদ সংস্থা রয়টারের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তারা বলেন, এ বছর মে থেকে আগস্টের মধ্যে ২০০ লোক নিহত হয়েছে র্যাবের হাতে। মাদক নির্মূলের আড়ালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির অভিযোগও করা হয়েছে।
সঞ্চালক মোনা বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষ করে গণমাধ্যম, শিক্ষার্থী, অ্যাক্টিভিস্ট এবং বিরোধীদের ওপর ক্র্যাকডাউন নেমে এসেছে।
আলোচনা শেষে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধান মাহবুব সালেহ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন সিফটনের একটি প্রসঙ্গের সংশোধনী দিয়ে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে বিদেশী পর্যটকদের সবসময় সাদর আমন্ত্রণের ঘোষণা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনের সময় কোনো বাধা প্রদানের প্রশ্নই ওঠে না। এ ছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। আরেকটি সংশোধনী দিয়ে মাহবুব সালেহ বলেন, সুনির্দিষ্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত। আদালতের ওপর বর্তমান সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে দণ্ড প্রদানের তথ্যও ঠিক নয়। মাহবুব সালেহ শুনানিতে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে আরো বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই সব দলের সাথে সংলাপে বসেছে সরকার। সবার মতামত নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে কিংবা মামলায় অভিযুক্ত করেছে তাদের তালিকা সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অন্যায়ভাবে কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে দিকে প্রধানমন্ত্রীর খেয়াল রয়েছে শতভাগ।


আরো সংবাদ



premium cement