নির্বাচনে থাকবে ঐক্যফ্রন্ট

একাদশ সংসদ নির্বাচনে থাকবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ কথা জানিয়ে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সহযোগিতা চেয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের লেক শোর হোটেলে প্রায় দুই ঘণ্টা গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বৈঠকে অংশ নেয়া সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা। একই সাথে তারা ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের কাছে স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন, নির্বাচনে তারা থাকবেন কি না। এর উত্তরে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেছেন, তারা নির্বাচনে থাকবেন। কোনো কোনো সাংবাদিক বলেছেন, কারো পক্ষ নিয়ে নয়, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে গণমাধ্যম অবশ্যই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আপত্তি থাকলে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা নির্বাচন কমিশনের সাথে বারবার বৈঠক করারও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।
দুই ঘণ্টা মতবিনিময়ের পর ফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সম্পাদকদের সাথে আমরা মতবিনিময় করেছি। তারা বিভিন্ন ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন, আমাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, আমাদের কাছ থেকে তারা কী আশা করেন, যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হয়।
তিনি বলেন, এই মতবিনিময় আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান মনে করি। সরকারের যেসব জিনিস আমরা চিহ্নিত করেছি, আমরা আশা করব এসব ব্যাপারে গণমাধ্যম সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
আপনারা কী ধরনের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরনের সহযোগিতা চেয়েছি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, এডিটর সাহেবদের সাথে আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে কী কী জিনিস তারা অতীতে দেখেছেন। তারা মনে করেন এবার সেগুলো থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে এবং সক্রিয়ভাবে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে, জনগণ যাতে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়াগ করতে পারে এবং সত্যিকারার্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারের যেমন কর্তব্য আছে, আমরা যারা বিরোধী দল নির্বাচন করতে যাচ্ছি তাদেরও কর্তব্য আছে, নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা করা যাতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়।
মতবিনিময় সভা শেষ হওয়ার আগে বেরিয়ে এসে আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি সাম্প্রতিক সময়ে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাগুলো কুরআন তেলাওয়াত, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো তাদের ঐক্যবদ্ধ চিন্তার ফল কি না? এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নির্বাচনের আগে আমাদের সামনে তুলে ধরবেন কি না। আমি জানতে চেয়েছি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর যে উৎসব, তারা জয়ী বা পরাজিত হলে কিভাবে পালন করবেন। এসব প্রশ্নের নোট তারা নিয়েছেন, পরে উত্তর দেবেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী সাংবাদিকদের বলেন, আমি মতবিনিময় সভায় একটি প্রশ্ন করেছি, ফ্রন্ট যদি জয়লাভ করে তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। সেই প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি। আমার মনে হয় এই ফ্রন্টের সবাইকে যারা নির্বাচন করছে তাদের বলতে হবে, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তারা যদি বিজয়ী হন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে। যেমন আমরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি সিস্টেম অনুসরণ করার চেষ্টা করি, ভারতে হোক, ব্রিটেনের হোক বা অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে সবাই কিন্তু আগে থেকে জেনে যান, এই দল বা এই জোট বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। সে বিষয়টা কিন্তু ফ্রন্টকে পরিষ্কার করতে হবে। সেটা তারা এখনো পরিষ্কার করেননি।
বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্পাদকদের স্বাগত জানিয়ে জাতীয় যুক্তফ্রন্টের নেতৃবৃন্দকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন বক্তব্য রাখেন।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, হলিডের সৈয়দ কামাল উদ্দিন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তৌফিক ইমরোজ খালিদী, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজের নুরুল কবীর, আমাদের নতুন সময়ের নাইমুল ইসলাম খান, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, দিনকালের রেজোয়ান সিদ্দিকী প্রমুখ সম্পাদক অংশ নেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের খবরের সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের আবু তাহের, ইনকিলাবের মুন্সি আবদুল মান্নান, নিউজ টুডের মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, ডেইলি স্টারের সাখাওয়াত হোসেন লিটন, যুগান্তরের মাসুদ করীম, সমকালের লোটন একরাম, সাপ্তাহিকের ২০০০ এর গোলাম মোর্তজাসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সিনিয়র সাংবাদিকরা অংশ নেন।
ভয়েস অ্যামেরিকার আমীর খসরু, রয়টার্সের সিরাজুল ইসলাম কাদির, এএফপির শফিকুল আলমও অংশ নেন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে।
বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের মধ্যে আরো অংশ নেন বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সুলতান মো: মনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ প্রমুখ।