২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফিরে যেতে রাজি নন রোহিঙ্গারা স্থগিত হলো প্রত্যাবাসন

প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করে টেকনাফের উংচিপ্রাং ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ : এএফপি -

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৫০ জনের প্রথম দলটির গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা কেউই দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছেন না। এ কারণে তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ঘাট দুটিতে গিয়ে সেখানে প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো রোহিঙ্গাকে দেখা যায়নি। টেকনাফের ঘাটে কয়েকজন আনসার সদস্য ট্রানজিট ক্যাম্পটি পাহারা দিচ্ছেন। নাফ নদীতে রোহিঙ্গা পারাপারের কোনো নৌকা বা ট্রলারও দেখা যায়নি।
গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসঙ্ঘ শরণার্থী সংস্থা অনেক চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজি করাতে পারেনি। যেসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান তাদেরকে নিয়ে আসার জন্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা গতকাল দুপুরে উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেলে ‘ন যাইয়ুম, ন যাইয়ুম’ (যাবো না, যাবো না) সেøাগান দিয়ে বিােভ করতে থাকে রোহিঙ্গারা। বিক্ষোভে অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা ‘এখন আমরা ফিরবো না, গণহত্যার বিচার চাই, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই, স্বদেশের জায়গা জমি ফেরত চাই’ বলে সেøাগান দিচ্ছে। তবে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা বলছে, তারা এখনই ফেরত যেতে প্রস্তুত নয়। রোহিঙ্গারা দাবি করছে, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নেই। জোর করে ফেরত পাঠালে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হবে।
গত ৩০ অক্টোবর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সম্মত হয় ১৫ নভেম্বর থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করার বিষয়ে। কিন্তু মিয়ানমারে নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি বিরাজ করায় রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরতে রাজি হচ্ছে না।
কুতুপালং ক্যাম্পে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, আমরা উনচিপ্রাং ক্যাম্পে গিয়েছিলাম এবং বেলা ২টা পর্যন্ত অপো করেছি কোনো রোহিঙ্গা ফেরত যেতে চায় কি না জানতে। কিন্তু কেউ ফেরত যেতে চায়নি। এরপর বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময় বাড়ানোর পরেও কেউ রাজি হয়নি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে তাদের ওপর নির্ভর করছে এবং আমরা তাদের ওপর জোর করব না। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কখন শুরু হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চাইবেন।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পয়েন্টের স্থলপথ দিয়ে গতকাল দুপুরে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। যেসব রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী তাদের নিয়ে দুপুরে নাইক্যংছড়ির ঘুমধুম পয়েন্টের স্থলপথ দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের ৩ দিনের রেশনসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ভৌত অবকাঠামোসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রত্যাবাসনের জন্য টেকনাফের কেরুনতলী ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পয়েন্টে দুটি ট্রানজিট ক্যাম্প প্রস্তুত। তারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে প্রত্যাবাসন শুরু হবে দিনের যেকোনো সময়। মিয়ানমারও প্রস্তুত আছে।
গত বছরের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় পালিয়ে আসা ও বর্তমান মিলে উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ সমঝোতা স্মারকে সই করে। এরপর প্রথম ধাপে ৮ হাজার জনের তালিকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ছাড়পত্র দেয় মিয়ানমার। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement