২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গভীর উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

-

রোহিঙ্গাদের অকালীন প্রত্যাবাসনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। উদ্বাস্তুদের ফিরে যাওয়ার জন্য মিয়ানমারের রাখাইনে এখনো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নিÑ জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের এ সমীক্ষার সাথে যুক্তরাষ্ট্র একমত পোষণ করেছে।
গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে রোহিঙ্গাদের অকালীন প্রত্যাবাসনের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর উদ্বেগের কথা অবহিত করা হয়েছে। শরণার্থী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদাসম্পন্ন। ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, ক্যাম্পে আবদ্ধ রাখা যাবে না।
এতে বলা হয়, পরিস্থিতি বুঝতে রাখাইনের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্ণ প্রবেশাধিকার থাকতে হবে, যাতে শরণার্থীরা মিয়ানমার ফিরে যেতে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সঙ্কটের মূল কারণ মোকাবেলায় মিয়ানমারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। মুসলিম সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব অর্জনের যাচাইপ্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ ও কার্যকর। তাদের অবাধ চলাচলের স্বাধীনতা ও জীবিকার সুযোগ থাকতে হবে।
গত ৩০ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার যৌথ কার্যকরী গ্রুপের (জেডব্লিউজি) বৈঠকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য বাংলাদেশ যাচাই-বাছাই করা দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দেয়। জেডব্লিউজি বৈঠকে নেতৃত্ব দেয়া মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সাথে দেখা করে তাদের প্রত্যাবাসনে উৎসাহিত করেন।
জানা গেছে, দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের রয়েছে ৪৫০ জন। হিন্দু সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের সম্মতির কথা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে জানিয়েছে। আর মুসলিম সম্প্রদায়ের রোহিঙ্গারা এখনো দোটানায় রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের দেয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআর তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়ার কথা।
মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আই গত রোববার ইয়াঙ্গুনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ১৫ নভেম্বর থেকে প্রত্যাবাসন শুরু করার ব্যাপারে দুই দেশ প্রায় এক মাস আগেই সম্মত হয়েছে। নির্ধারিত দিনে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য মিয়ানমার প্রস্তুত রয়েছে। প্রত্যাবাসন শুরু হলে প্রতিদিন ১৫০ শরণার্থী মিয়ানমার ফিরে আসেত পারবে।
মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনের প্রধান গত মাসে নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদের দেয়া ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন নিরাপদ নয়। এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন শুরু করা হলে রোহিঙ্গারা আবারো দমন-পীড়ন, এমনকি গণহত্যার সম্মুখীন হতে পারে। এর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেডব্লিউজি বৈঠকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণার পর জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারেক জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘকে অবহিত করেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেছেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসঙ্ঘের সাথে কোনো মতপার্থক্য নেই। জেডব্লিউজির প্রতিনিধিদের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের তালিকা হস্তান্তরের দিনই জাতিসঙ্ঘকে তা অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের জন্য ইউএনএইচসিআরকে কাজ শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সাথে চুক্তি করেছে। তাই প্রথম থেকেই এ প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘ জড়িত ছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement