২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সংসদ নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর

মনোনয়ন জমা শেষ : ১৯ নভেম্বর প্রত্যাহার : ২৯ নভেম্বর
জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা : পিআইডি -

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ২৩ ডিসেম্বর। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১৯ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২২ নভেম্বর। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী, গত ৩১ অক্টোবর একাদশ সংসদ নির্বাচনের ণগণনা শুরু হয়েছে। চলতি দশম সংসদের মেয়াদের শেষ দিন আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য কমিশনের ঘোষিত এই তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন হলে নির্ধারিত সময়ের ৩৫ দিন আগেই ভোট সম্পন্ন হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ওই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সংসদের বাইরে থাকা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের মিত্রসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সিইসি এমন একটি মুহূর্তে এই তফসিল ঘোষণা করলেন যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইসির সাথে বৈঠক করে তফসিল পেছানোর দাবি করে। তারা বলেছে, সরকারের সাথে সংলাপ চলছে, এর ফলাফল দেখে তফসিল ঘোষণা করা যেতে পারে। ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, সমঝোতার আগে তফসিল ঘোষণা করা হলে তারা নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করবে। অন্য দিকে জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের তফসিল না পেছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানায়।
তফসিলের পক্ষে-বিপক্ষে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তখন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ দফা (৩) উপদফা (ক)-এর বরাত দিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করেন সিইসি।
তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। ভবনের সামনে মোতায়েন করা হয় র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনী। ভবনের বিভিন্ন ফোরেও পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। পোশাকধারী নিরাপত্তা বাহিনীর বাইরেও সাদা পোশাকে সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন বলে ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তফসির ঘোষণা উপলক্ষে দেয়া বক্তব্যে সিইসি বলেছেন, ২০১৮ সাল নির্বাচনের একটি বছর। নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। সুশীলসমাজ মতামত প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে। জাতির এমন উচ্ছ্বসিত প্রস্তুতির মধ্যখানে দাঁড়িয়ে আমি প্রত্যাশা করব, অনুরোধ করব এবং দাবি করব, প্রার্থী এবং তার সমর্থক নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি মেনে চলবেন। প্রত্যেক ভোটার অবাধে এবং স্বাধীনভাবে বিবেকের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
তিনি বলেন, ভোটার, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, প্রার্থীর সমর্থক ও এজেন্ট যেন বিনা কারণে হয়রানির শিকার না হন বা মামলা-মোকদ্দমার সম্মুখীন না হন, তার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর ওপর কঠোর নির্দেশ থাকবে। দল ও মত নির্বিশেষে সংখ্যালঘু, ুদ্র নৃগোষ্ঠী, ধর্ম, জাত, বর্ণ, নারী ও পুরুষভেদে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে নুরুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে মতানৈক্য বা মতবিরোধ থাকলে রাজনৈতিকভাবে তা মীমাংসা করতে হবে। প্রত্যেক দলকে একে অন্যের প্রতি সহনশীল, সম্মানজনক এবং রাজনীতিসুলভ আচরণ করতে হবে। প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেন কখনো প্রতিহিংসা বা সহিংসতায় পরিণত না হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
ভাষণে সিইসি জানান, ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং প্রায় ৪০ হাজার ভোট কেন্দ্রের বাছাই কাজ শেষ হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় সাত লাখ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রাকারী বিভিন্ন বাহিনী থেকে ছয় লাখের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হবে। তাদের মধ্যে থাকবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও গ্রাম প্রতিরা বাহিনীর সদস্যরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘তাদের দতা, নিরপেতা ও একাগ্রতার ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে নির্বাচন তিগ্রস্ত হলে দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অসামরিক প্রশাসনকে যথা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন থাকবে।
সুুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন কিভাবে কাজ করবে, সেটির ব্যাখ্যা করে ভাষণে সিইসি বলেন, নিজ নিজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নির্বাচিত প্রতিনিধি ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সহায়তা করবেন। পোলিং এজেন্টরা ফলাফলের তালিকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। নির্বাচনী কর্মকর্তারা নিরপে দায়িত্ব পালনে অটল থাকবেন। নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন। আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী ভোটকেন্দ্র, ভোটার, প্রার্থী, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। গণমাধ্যমকর্মী বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ করবেন, পর্যবেকেরা নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা মেনে দায়িত্ব পালন করবেন এবং ইসি সবিচালয় সামগ্রিক পরিস্থিতি সার্বণিক পর্যবেণ ও তত্ত্বাবধানের আওতায় রাখবে।
এর আগে বেলা ১১টায় বৈঠক করে নির্বাচনের দিনণ ঠিক করে ইসি। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সিইসির কে বৈঠকটি হয়। দুপুরে কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, সব কিছু ঠিকঠাক, এখন শুধু অপো।
বৈঠক শেষে সিইসির কে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণটি রেকর্ড করা হয়। এ জন্য সকাল থেকে বিটিভি, বেতারের রেকর্ডিং টিম ইসিতে অবস্থান করে।
৬৪ জেলায় নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ শুরু : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম, আচরণ বিধিমালাসহ প্রাথমিক নির্বাচনী সামগ্রী ৬৪ জেলায় বিতরণ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেসের উপপরিচালক মো: সাখাওয়াত হোসেন জেলা নির্বাচন অফিসারদের হাতে এসব নির্বাচনী সামগ্রী তুলে দেন। মনোনয়ন ফরম ছাড়াও এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে আচরণ বিধিমালা, জামানত বই, রশিদ বই ও প্রতীকের পোস্টার। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রের জন্য এসব সরঞ্জাম গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। তারা নির্বাচনী সরঞ্জামগুলো পৃথক ব্যাগে করে প্রস্তুত করছেন।
ইসি সূত্রে আরো জানা গেছে, অন্যবারের মতো এবারো নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নিয়োগ করা হয়েছে। আর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন থানা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বা সহকারী কমিশনারকেও (ভূমি) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেবেন।
বাজেট ৭০২ কোটি টাকা : একাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে অংশগ্রহণমূলক ভোটগ্রহণের সম্ভাবনার মধ্যে ৭০২ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতি আসনের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ৭০২ কোটি টাকার মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যয় ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
ইসির সর্বশেষ প্রকাশিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন ও নারী পাঁচ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। ভোটকেন্দ্র ৪১ হাজার ১৯৯টি।
সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ : এদিকে তফসিল ঘোষণার পর আজ রাত থেকেই সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হতে যাচ্ছে। সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী আচরণবিধিমালা অনুসারে তফসিল ঘোষণার পর সভা-সমাবেশের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আসবে। জন চলাচলের বিঘœ সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনো সড়কে জনসভা এমনকি পথ সভাও করা যাবে না। মাইকের ব্যবহারও সীমিত করা হবে। শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে নির্বাচন বিরোধী যেকোনো ধরনের তৎপরতা। ভোটগ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের ২১ দিন ছাড়া কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারও নিষিদ্ধ থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ঈদের ছুটিতে ঢাকায় কোনো সমস্যা হলে কল করুন ৯৯৯ নম্বরে : আইজিপি সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নৈশ প্রহরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ৬ দাবিতে উত্তাল বুয়েট, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন মোরেলগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল

সকল