২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ডলার সঙ্কট তীব্র হচ্ছে

বাড়তি চাপে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
-

পেট্রোবাংলার প্রতিমাসে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে ১০ কোটি ডলার। এর সাথে সরবরাহ ঋণের মাধ্যমে আমদানি করা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে ৫ কোটি ডলার। সাথে রয়েছে বিপুল পরিমাণ আমদানি দায়। সব মিলের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত হারে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সাথে আয় সমন্বয় না হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে রিজার্ভ কমতে শুরু করেছে। আজ বৃহস্পতিবার এশিয়ান কিয়ারিং ইউনিয়েনের (আকু) দায় পরিশোধ করতে হবে ১১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো কমে যাবে। পরিস্থিতি উন্নতি না হলে সামনে ডলার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পণ্য আমদানিতে প্রতি মাসেই ৪০০ কোটি ডলারের ওপরে ব্যয় হচ্ছে। যেমন, গত আগস্টে ৪০০ সাড়ে ১২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে, যা পরের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে বেড়ে ৪৪৭ কোটি ডলার হয়েছে। সেপ্টেম্বরে আমদানি বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ। কিন্তু ব্যয় অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। ফলে প্রতি মাসেই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আর এ ঘাটতি মেটানো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে। প্রতি মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে। ফলে প্রায় ফি মাসেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সামনে এ সঙ্কট প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এর অন্যতম কারণ হলো এলএনজি ও কুইক রেন্টাল আমদানি দায় পরিশোধ শুরু হওয়া।
জানা গেছে, গত এপ্রিল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। সব কর রেয়াত দেয়ায় আমদানি ও দেশীয় গ্যাসের সমন্বিত প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম পড়ছে ৪ দশমিক ১৪ ডলার। বর্তমানে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের বিক্রয় হচ্ছে দুই দশমিক ১৭ ডলার। সরকার নির্বাচনের আগে গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে না। ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু সামনে এলএনজির কারণে গ্যাসের দাম যে বাড়ানো হবে এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। এলএনজি আমদানির কারণে শুধু গ্রাহক পর্যায়েই চাপ বাড়ছে না, ইতোমধ্যে চাপ বেড়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। কারণ, প্রতি মাসেই এলএনজি আমদানির জন্য পরিশোধ করতে হচ্ছে ১০ কোটি ডলারের ওপরে। এটা আমাদের নিয়মিত আমদানি ব্যয়ের সাথে অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে। এর সাথে অতিরিক্ত যুক্ত হয়েছে সরবরাহ ঋণের মাধ্যমে কেনা কুইক রেন্টালের দায় পরিশোধ। জানা গেছে, সরবরাহ ঋণের মাধ্যমে তিন ব্যাংকের মাধ্যমে ২৯ কোটি ডলারের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমদানি করা হয়েছিল। জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও এইচএসবিসির মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমদানি করা হয়েছিল। সরবরাহ ঋণ হলো, বিদেশ থেকে পণ্য কিনে বিদেশেই কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তার দায় পরিশোধ করা। পরে শর্ত অনুযায়ী কিস্তিতে সংশ্লিষ্ট বিদেশী কোম্পানিকে সুদে-আসলে এর দায় পরিশোধ করা হয়। জানা গেছে, কুইক রেন্টাল আমদানির দায় ইতোমধ্যে পরিশোধ শুরু হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি এ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে ৫ কোটি ডলার করে। ফলে এলএনজি ও কুইক রেন্টাল বাবদ নিয়মিত আমদানি ব্যয়ের সাথে ১৫ কোটি ডলারের ওপরে ব্যয় শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্য ও বিলাসজাত পণ্যের আমদানি দায় বেড়ে গেছে। যেমন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভুট্টা উৎপাদন হলেও একটি কোম্পানি এক মাসেই ভুট্টা আমদানির জন্য বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার দায় সৃষ্টি করে। আর এর দায় পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার জন্য হাত পেতেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এভাবেই নানা প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে গেছে।
আর বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় মুদ্রাবাজারে সঙ্কট বেড়ে গেছে। এ সঙ্কট মেটাতে বেড়ে গেছে অস্থিরতা। এ সঙ্কটের সময় এক শ্রেণীর ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। ডলার সংস্থান না করেই বিপুল অঙ্কের আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলছে। আর এর দায় পরিশোধের সময় বাজার থেকে বেশি দরে ডলার কিনছে। ইতোমধ্যেই এর জন্য ৯টি ব্যাংককে শোকজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৩১ অক্টোবরে শোকজের জবাব দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো। কিন্তু জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১০৯ ধারা ক্ষমতা বলে জরিমানা করার সুপারিশ করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে গভর্নরের টেবিলে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নানা কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। প্রায় ৩ হাজর ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা কমতে কমতে ৩ হাজার ২১৭ কোটি ডলারে নেমেছে। আজ বৃহস্পতিবার এশিয়ান কিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধ করতে হবে ১১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ফলে রিজার্ভ ৩ হাজার কোটির ঘরে নেমে যাবে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় ঠেকাতে না পারলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বেড়ে যাবে। এর পাশাপাশি ডলারের সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
উল্লেখ্য, এশিয়ার ৯টি দেশ নিয়ে আকু গঠিত। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং ইরান। আকুর নীতিমালা অনুযায়ী এ দেশগুলোর যে কোনো প্রকার আমদানি-রফতানির দেনা পাওনা আকুর মাধ্যমে করতে হবে। সাধারণত, এসব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে এ লেনদেন সম্পন্ন হতো। আকু সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দু’টি মুদ্রা প্রচলন আছে। একটি মার্কিন ডলার, অপরটি ইউরো।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ

সকল