২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আদমজী ইপিজেডে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ : আহত অর্ধশত

-

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের সোয়াদ ফ্যাশন নামক রফতানিমুখী একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় পুলিশ তাদেরকে বাধা দিলে পুলিশের সাথে তাদের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তিন পুলিশসহ আহত হয়েছেন অর্ধশত শ্রমিক। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দেন।
এ দিকে বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকেরা সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ইপিজেড গেটসংলগ্ন শিমরাইল-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রাখায় সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টায় শ্রমিকেরা অবরোধ তুলে নিলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ৮টায় প্রথমে আদমজী ইপিজেডের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন সোয়াদ ফ্যাশনের শ্রমিকেরা। পরে পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় শ্রমিকেরা অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করেন এবং একটি কাভার্ডভ্যানে (চট্ট মেট্রো-ট-১১-০১৬৬) আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ও শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, সেখান থেকে সাতজন শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ। আহত শ্রমিকদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর বকেয়া বেতন, ছুটি ও ফান্ডের টাকা পরিশোধ না করায় এবং শ্রমিকদের না জানিয়ে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেয়ায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন। গতকাল তাদের বকেয়া বেতন দেয়ার কথা ছিল বলে জানান শ্রমিকেরা।
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ-৪ এর পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, সোয়াদ ফ্যাশনের শ্রমিকেরা পাওনা আদায়ের জন্য সকাল থেকে ইপিজেডের সামনে অবস্থান করতে থাকেন। আমরা তাদের শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে বলেছিলাম। কিন্তু এ সময় সোয়াদ ফ্যাশনের শ্রমিকেরা ইপিজেডের অন্য কারখানার শ্রমিকদের প্রবেশে বাধা দিতে থাকেন। আমরা তাদের অন্য কারখানার শ্রমিকদের বাধা দিতে নিষেধ করি। তখন সোয়াদ ফ্যাশনের শ্রমিকেরা রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর শুরু করেন। আমরা এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করি। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবদুস সাত্তার টিটু, পরিদর্শক (অপারেশন) আজিজুল হক, কনস্টেবল শিবলীসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ দিকে বেলা ১১টায় নাসিক প্যানেল মেয়র-২ মতিউর রহমান মতি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি আবদুস সামাদ বেপারি ও যুবলীগ নেতা হুমায়ুন কবিরসহ নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন। পরে বেপজা কর্তৃপক্ষ, শিল্প পুলিশ ও সোয়াদ ফ্যাশনের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য আগামী ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়। এ আশ্বাসের পর দুপুর সাড়ে ১২টায় শ্রমিকেরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করলে শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, সোয়াদ ফ্যাশনে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। ৫-৬ মাস ধরে ঠিকমতো বেতন পরিশোধ করছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। সেই সাথে বোনাস, ছুটি ও রিজার্ভ ফান্ডের টাকাও দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় এসব পোশাক শ্রমিক বাসা ভাড়াসহ সংসার চালানো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
সোয়াদ ফ্যাশনে কর্মরত শ্রমিক মোসাম্মৎ বেগম জানান, আমাদের সম্পূর্ণ পাওনা পরিশোধ না করে কর্তৃপক্ষ হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে কেন কারখানা বন্ধ করে দিলো? আমরা ঘর ভাড়া দেবো কোত্থেকে আর খাবার জোগাবো কোত্থেকে? এ ছাড়া আমরা এ মুহূর্তে কোথায় চাকরি পাবো?
আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে খুবই হতাশায় আছি। আমরা আমাদের সব পাওনা চাই। আমাদের চার মাস ১৩ দিনের সম্পূর্ণ বেতন দিতে হবে। এ জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement