২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পরামর্শক খাতে ব্যয় ১৫৫ কোটি টাকা

ড্রেন নির্মাণখরচ সড়কের দ্বিগুণ

-

প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে অর্থ পৌঁছে দিতে সরকার নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়ে তা দ্রুত অনুমোদন দিচ্ছে। উন্নয়নকাজে এসব ব্যয়ের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে মূল্যায়ন কমিটির। রাস্তা বা সড়ক নির্মাণের চেয়ে রাস্তার পাশের ড্রেন নির্মাণখরচ দ্বিগুণ। শুধু এক কিলোমিটার রাস্তা করতে যেখানে ব্যয় হবে এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা, সেখানে সেই রাস্তার ড্রেন নির্মাণে ব্যয় হবে দুই কোটি ৬১ লাখ টাকা। উপরন্তু এই সাধারণ রাস্তা-ড্রেন নির্মাণেও পরামর্শক লাগছে। পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ১৫৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বলে প্রকল্প প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে অনুমোদনের জন্য। এই প্রকল্পটি চলতি বছরের এডিপিতে অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিআরডি) প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের নগর ও নগর সন্নিহিত এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সাড়ে পাঁচ বছরের এই প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। এই অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। যেখানে এডিবির ঋণ থাকবে এক হাজার ২৬৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বেশির ভাগই সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এসব প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি এবং একনেক থেকে অনুমোদন পেয়ে যাচ্ছে। এই প্রকল্পটিও তা থেকে বাদ যায়নি। বলা হচ্ছে, সার্ভিস সেক্টরের প্রকল্প অর্থাৎ এই প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম সেবামূলক বিধায় সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। তবে প্রকল্পের স্কিমগুলো নির্বাচনে স্থানীয় জনগণের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বিদ্যমান পরিপত্র অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে কোনো প্রকল্প করা হলে তা সম্ভাব্যতার বিধান রয়েছে।
প্রকল্পের ব্যয়ের হিসাব থেকে দেখা যায়, এখানে মূল কার্যক্রম হলো দুই এলাকাতে ৩৫৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন করা, ড্রেন নির্মাণ ১৫৩ কিলোমিটার, ১ দশমিক ৭২২ কিলোমিটার ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এখানে এলজিইডি যে রাস্তা নির্মাণ করবে তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭২ কিলোমিটারের জন্য ৩৯০ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে নির্মাণব্যয় এক কোটি ৪৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। আর পৌরসভা নির্মাণ করবে ৮৫ কিলোমিটার রাস্তা। যার জন্য ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১৭ কোটি ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এতে কিলোমিটারে ব্যয় হচ্ছে এক কোটি ৩৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এলিজিইডি ৬৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করতে ব্যয় ধরেছে কিলোমিটারে দুই কোটি ৬১ লাখ টাকা। ফলে মোট ব্যয় হবে ১৬৭ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। পৌরসভাগুলো মোট ৮৯ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করতে ব্যয় করবে ২২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যেখানে কিলোমিটারে খরচ পড়ছে দুই কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এলজিইডি ও পৌরসভা দুটোরই ড্রেন নির্মাণব্যয় সড়ক নির্মাণের চেয়ে অত্যধিক বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অন্য দিকে প্রতি মিটার ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণে খরচ পড়ছে এলজিইডিতে ১০ লাখ ৩২ হাজার টাকার বেশি। আর পৌরসভাতে ৯ লাখ ৯ হাজার টাকা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে, তাতেও পরামর্শক খরচ ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যেখানে প্রতি মাসে পরামর্শকদের পেছনে ব্যয় হবে গড়ে দুই কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর এডিবি যে ঋণ সহায়তা দেবে পরামর্শক খাতের ব্যয়ের বড় অঙ্ক ওই ঋণ থেকে মেটানো হবে। অর্থাৎ সোয়া ৮৭ কোটি টাকা ঋণের অর্থ থেকে ব্যয় করতে হবে।
প্রকল্প এলাকাগুলো হলো- ঢাকা বিভাগের সাভার পৌরসভা ও উপজেলা, ধামরাই পৌরসভা, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, কালিয়াকৈর পৌরসভা, নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঞ্চন, তারাব, সোনারগাঁও পৌরসভা ও রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার উপজেলা, মানিকগঞ্জ ও সিংগাইর পৌরসভা, নরসিংদী পৌরসভা। খুলনা বিভাগের খুলনা সিটি করপোরেশন, চালনা পৌরসভা, যশোর, নওয়াপাড়া ও ঝিকরগাছা পৌরসভা এবং মংলা পৌরসভা।
পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছে, বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় অন্যান্য প্রকল্পের সাথে সঙ্গতি রেখে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় ধরা হয়। সরেজমিন প্রকল্প পরিদর্শনে দেখা যায়, বাজার দরের সাথে ব্যয় প্রাক্কলনে অনেক ফারাক। বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় অন্যান্য প্রকল্পের সাথে সঙ্গতি রেখে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, নির্বাচনের আগে এসব বড় ব্যয়ের প্রকল্প সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণের জন্য হয় তাহলে অবশ্যই ভালো। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকল্পের টাকা যদি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে চলে যায় তাহলে জনতুষ্টি হবে না। আর এটি হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি থাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement