২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অশ্রু শোক শ্রদ্ধায় কিংবদন্তির বিদায়

জানাজায় মানুষের ঢল -

হাজারো মানুষের অশ্রু, শোক ও শ্রদ্ধায় বিদায় নিলেন ব্যান্ড ও গিটারের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু। তারই শেষ বিদায়ে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। তাদের কেউ ছিলেন ফুল হাতে, কেউ প্রতীক গিটার নিয়ে প্রিয় শিল্পীর জন্য লাইনে অপেক্ষা করছিলেন।
আইয়ুব বাচ্চুর জন্য দর্শকদের এমন অপেক্ষার চিত্র কিছু দিন আগেও ছিল ভিন্ন। মঞ্চের সামনে অপেক্ষায় থাকতেন হাজার হাজার দর্শক। তাদের প্রতীার অবসান ঘটিয়ে প্রিয় গিটার নিয়ে মঞ্চে উঠতেন আইয়ুব বাচ্চু। অমনি শ্রোতারা মুহুর্মুহু করতালির দিয়ে তাকে স্বাগত জানাত।
কিন্তু গতকাল সকাল ছিল তার ব্যতিক্রম। শোকাবহ পরিবেশে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল শহীদ মিনার। প্রিয় শিল্পীর জন্য সবার অপেক্ষা। সময় বাড়ার সাথে সাথে জনসমুদ্র ফুলে ফেপে উঠছিল। অবশেষে সকাল যখন সাড়ে ১০টা ছুঁইছুঁই তখন গিটার ছাড়াই কফিনে করে সেখানে পৌঁছলেন আইয়ুব বাচ্চু। স্কয়ার হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে রাখা কফিনে নিথর শুয়েছিলেন তিনি।
এরপর লাশ অ্যাম্বুলেন্স থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের একপাশে রাখা হয়। পেছনে কালো ব্যানার। তাতে লেখা, আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি। কফিন আগলে রাখেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, শাফিন আহমেদ, রবি চৌধুরী, মানাম প্রমুখ।
এরপর শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রিয় শিল্পীকে অশ্রু, শোক শ্রদ্ধায় বিদায় জানান সবাই। এ সময় কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, নাছির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা, কথাসাহিত্যিক ও সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, জাতীয় পার্টি, জাসাস, অভিনয় শিল্পী সঙ্ঘ, ডিরেক্টরস গিল্ডসহ আরো অনেক সংগঠন। ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কর্মী ও শিল্পীরা।
সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানোর এ পর্বের ব্যবস্থাপনায় ছিল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এরপর ঠিক ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে লাশ নিয়ে রওনা দেয়া হয় ঈদগাহের দিকে। সেখানে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ছিল মানুষের ঢল। এরপর মগবাজারে দ্বিতীয় ও চ্যানেল আই কার্যালয়ে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে লাশ স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা।
‘আর পাঁচ মিনিট, এক নজর দেখব’ : কথা ছিল আইয়ুব বাচ্চুর লাশ দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় ঈদগাহে। সেখানেই অনুষ্ঠিত হবে প্রথম নামাজে জানাজা।
সময় ঘনিয়ে আসতেই মাইকে লাশ নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তখনো বহু মানুষ লাইনে অপোয়। মাইকে ঘোষণা আসতেই দুই হাত তুলে অসংখ্য মানুষ চিৎকার করছে, ‘আর পাঁচটা মিনিট দিন, প্লিজ। এক নজর দেখবো।’ পরে মাইক থেকে বলা হলো, ‘আপনারা চলে যান জাতীয় ঈদগাহে। সেখানে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’ এরপর ঠিক ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে লাশ নিয়ে রওনা দেয়া হয় ঈদগাহের দিকে। হাজারো মানুষ শরিক হন এই নামাজে জানাজায়।
৩ জানাজা অনুষ্ঠিত : রাজধানীতে কিংবদন্তি শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর তিনটি নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম জানাজা শুক্রবার বাদ জুমা বেলা ২টায় জাতীয় ঈদগায় অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ভক্ত অনুরাগীদের অংশগ্রহণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রায় অর্ধেকটা পূর্ণ হয়ে যায়।
নামাজে জানাজা শুরুর আগে আইয়ুব বাচ্চুর ছোট ভাই জুয়েল সবার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু সব সময় বাবা-মায়ের প্রতি শ্র্রদ্ধাশীল ছিলেন। সবাইকে নিজের বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করতে বলতেন। এই প্রিয় মানুষ আর আমাদের মাঝে নেই। জীবনে চলার পথে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যদি আইয়ুব বাচ্চু কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকেন তাহলে সবাই তাকে মাফ করে দেবেন।
জাতীয় ঈদগাহে জানাজা শেষে বিকেল ৩টায় মগবাজারে কাজী অফিস গলিতে আইয়ুব বাচ্চুর গান তৈরির ‘স্টুডিও এবি কিচেন’-এ শেষবারের মতো তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাশ আবারো স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে নিয়ে রাখা হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রামে লাশ নেয়া হবে। সেখানে চতুর্থবারের মতো নামাজে জানাজা শেষে এনায়েত বাজারের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
আইয়ুব বাচ্চু বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাসায় অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement