২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহাজোটের পরিধি বাড়তে পারে

-

ক্ষমতাসীন জোট অক্ষুণœ রেখে মহাজোটের পরিধি সম্প্রসারণ করা হতে পারে। এ নিয়ে জোট-মহাজোটের মধ্যে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবসম্পন্ন ছোট দলগুলোকে টার্গেটে নিয়েছে ক্ষমতাসীনেরা। ছোট দলগুলোর বড় নেতাদের মহাজোটে ভিড়িয়ে আগামী নির্বাচনে বড় ধরনের জয় ঘরে তুলেই আবার ক্ষমতায় যেতে চায় আওয়ামী লীগ।
জোটের একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে জানা গেছে, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী দলগুলোকে নিয়ে ২৩ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট গঠন হয়। এটি একটি আদর্শিক জোট। আর মহোজোট হলো নির্বাচনমুখী জোট। আদর্শের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হওয়ায় আগামীতে জোট সম্প্রসারণ করার নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহাজোট গঠন হওয়ায় তা সম্প্রসারণ হতে পারে। অবশ্য নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করা বা না করার ওপরও জোট সম্প্রসারণের বিষয়টি নির্ভর করছে। নেতাদের মতে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠন হয়েছে। সেখানে বিএনপিও আছে। এখন বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে নাকি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের ছায়াতলে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে সেটি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত মহাজোট সম্প্রসারণের বিষয়টিও স্পষ্ট হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত সমীকরণ এ মাসের শেষের দিকে না হলেও আগামী মাসে স্পষ্ট হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার জোট-বিএনএ, জাকের পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ইউনাইটেড পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল ও জোটের নেতারা ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে গত মাসেও একাধিকবার বৈঠক করে। ক্ষমতাসীন জোটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে জোটে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা কিংবা ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ নিয়ে অন্য কোনো ফরমেটে ওই সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো হবেÑ এটা চূড়ান্ত রূপ এখনো পায়নি। গত ১৮ জুলাই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনÑ এ দলগুলো মিলে নতুন একটি বাম রাজনৈতিক জোট গঠিত হওয়ার পরই ক্ষমতাসীন জোটের বাইরে থাকা গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, একামত আন্দোলন, জাগো দল, ইসলামিক ফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক জোটসহ ৯টি দলের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গত ২৪ জুলাই ওবায়দুল কাদের সিপিবির কার্যালয়ে দলটির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সাথে বৈঠক করেন। এর আগে কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমেদসহ আলোচিত বেশ কিছু নেতার সাথে তিনি ফোনে কথা বলেন। ফোনে কথা বলার পরই গত ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে বৈঠক করেন কাদের সিদ্দিকী। সম্প্রতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলেও সেখান থেকে বাদ পড়েছে যুক্তফ্রন্টের সামনের সারিতে থাকা বিকল্প ধারা। গুঞ্জন আছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরীর বিকল্প ধারা ভেঙে যাচ্ছে। আর তাদের ভেঙে যাওয়া একটি অংশ সরকারের সাথে যুক্ত হচ্ছে। তা ছাড়া বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কিছু দুর্বল ও অনিবন্ধিত দলের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের বৈঠক হওয়ার কথা জানা গেছে। এসব দল আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে না এলেও অন্তত বিএনপির পক্ষে যেন কথা না বলে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছেÑ এমনটিই আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্রগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল এনডিপি ও ন্যাপ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছে।
জোট-মহাজোট সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক ন্যাপের সহসাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, অনেক দলই ইতোমধ্যে যোগাযোগ করেছে সরকারি জোটে আসার জন্য। সেটা আলাপ আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। জোটের আরেক শরিক গণ-আজাদী লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস কে শিকদার নয়া দিগন্তকে বলেন, আলোচনা আছে। তবে এটি নির্ভর করছে জোট প্রধান শেখ হাসিনার ওপর। তিনি যদি মনে করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটের পরিধি বাড়ানো দরকার তাহলে বাড়বে।
বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, আমরা চাইলে তো হবে না, তারাও তো চাইতে হবে। তিনি বলেন, যদি এটা কোনো মেরুকরণের দিকে আগায়, কৌশলগত জোট হয় সেটা তো আর গোপন থাকবে না।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন এলেই ছোট দলগুলোর একটু কদর বাড়ে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। তিনি বলেন, ছোট দল নিয়ে জোট গঠন করলে লাভক্ষতি দুটোই আছে। যদি ওই দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে ভোটারদের মধ্যে এর প্রভাব পড়ে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ছোট দলগুলোকে নিয়ে জোটের রাজনীতি শুরু হয় ভারত বিভাগের পর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে। ওই সময় যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জয়লাভ করে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির সাথে আওয়ামী লীগ জোট গঠন করে। একানব্বই সালে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। তারপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও জাসদের সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট গঠন করে বিএনপি সরকার গঠন করে। এরপরই ২০০৬ সালে মহাজোট গঠন করে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বিএনপি ছোট ছোট দলগুলোকে একত্র করে বিএনপির আগের চার দলীয় জোটটি এখন ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন জোটে ১৪টি দলের বাইরে আছে জাতীয় পার্টি এবং এই দলটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক।


আরো সংবাদ



premium cement