২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ট্রাম্প ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় সরকার : শেখ হাসিনা

জাতিসঙ্ঘে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার চায় আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং সব রাজনৈতিক দল এতে অংশ নেবে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী জেরেমি হান্ট সোমবার সকালে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বৈঠকের পরে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
জেরেমি হান্ট বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে যুক্তরাজ্য।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাও চাই আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নেবে।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে আলোচনাকালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। তবে তারা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি আমরা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি এবং তাদের দেশে ফেরার জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে পারি তাহলে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরবে। তবে তেমনটি ঘটছে না।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নামে একটি দ্বীপে স্থানান্তরে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
জেরেমি হান্ট অচিরেই বাংলাদেশ সফরে তার আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো: নজিবুর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশন আয়োজিত গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ওয়ার্ল্ড ড্রাগ প্রোবলেম বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে অংশ নেন। অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশ নেয়ার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের পারস্পরিক স্বার্থে ব্যবসায়, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন নিয়ে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে এ ব্যাপারে তার সরকারের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আমি আপনাদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। উভয়ের পারস্পরিক স্বার্থে আপনাদের ব্যবসায়, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন নিয়ে বাংলাদেশে আসুন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার্স অব কমার্সের উদ্যোগে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে অনুষ্ঠিত মধ্যাহ্নভোজ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে সহজ বিনিয়োগ নীতি বিদ্যমান রয়েছে, যেখানে আকর্ষণীয় প্রণোদনা এবং সর্বোচ্চ মুনাফা লাভেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক কৌশলগত অবস্থান বাংলাদেশকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক আউট সোর্সিয়ের উদীয়মান কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ৪০০ কোটি মানুষের বাজারের একটি প্রবেশ দ্বার হতে পারে এবং দেশটির নিজেরও প্রায় ১৬ কোটি জনগণের একটি শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধনশীল বাজার রয়েছে।
সহিংসতার প্রেক্ষাপটে শিশু শিক্ষায় তিনটি বিষয় বিবেচনার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহিংসতায় আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে শিশু শিক্ষার চাহিদা মোকাবেলায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি মিয়ানমারে বিনিয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান যাতে রোহিঙ্গা শিশুরা তাদের জন্মভূমিতে ফিরে শিক্ষার অধিকারসহ অন্যান্য শিশু অধিকার ভোগ করতে পারে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে সভাকক্ষে ‘নারী ও মেয়েশিশু শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রথমত, সঙ্ঘাত, জাতিগত নিধন ও গণহত্যার ঘটনায় পালিয়ে আসা এসব শিশু প্রচণ্ড রকমের মানসিক আঘাত বহন করছে। তাদের মনো-সামাজিক চাহিদার বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে।’
দ্বিতীয়ত, পালিয়ে আসা এসব শিশু কোনো সাধারণ বিদ্যালয়ে নিজেদের অভ্যস্ত করতে পারবে বলে প্রত্যাশা করা যায় না। ‘সুতরাং, তাদের জন্য অনানুষ্ঠানিক ও জীবনধর্মী বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা জরুরি।’
তৃতীয়ত, বিতাড়িত রোহিঙ্গা শিশুরা বর্তমানে ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বসবাস করছে। এসব শিশুকে নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা ও জাতিগতভাবে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। এ শিক্ষা এক সময় দেশে ফিরে তাদের জীবনকে এগিয়ে নিতেও প্রস্তুত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভ্যর্থনায় প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যর্থনায় যোগ দিয়েছেন।
ট্রাম্প লোটে নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে বিশ্বনেতাদের সম্মানে এই অভ্যর্থনার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে যোগদানকারী বিশ্বনেতৃবর্গ জাতিসঙ্ঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement