২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মৃদু চোখ মেলে আল মাহমুদ বললেন শরীর ভালো না

-

তিনি ঘুমিয়ে আছেন। চেহারায় প্রশান্তির রেশ। পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতার ছাপ রয়েছে। গল্প, কাব্য, উপন্যাস রচনায় তাড়াও আর নেই। সুবহে সাদিকে ফজরের আজান কিংবা কুরআন তিলাওয়াতের মধুর ধ্বনিতে এখন আর ঘুম ভাঙে না তার। দিনরাত ঘুমের ঘোরেই কেটে যায়। কখন রাত আসে, দিন হয় এ নিয়ে তেমন কোনো ভাবনাও যেন নেই। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও আলোচনা সভায় বক্তৃতা রাখা কিংবা কাব্যাঙ্গনে ঝড় তোলা পঙ্ক্তি নিয়ে তিনি আর হাজির হতে পারেন না। একান্ত পারিবারিক পরিমণ্ডলেই দিবস যামিনী কাটিয়ে দেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। বার্ধক্য তাকে বাকরুদ্ধ ও স্থবির করে দিয়েছে। নিজ কাব্যে উল্লেখ করা ‘মেঘনা নদীর শান্ত মেয়ে তিতাসে’র মতো কবির জীবন আচরণ সম্পূর্ণ বদলে নিস্তরঙ্গ সরোবরে রূপ নিয়েছে ।
১১ জুলাইয়ে কবি আল মাহমুদ ৮৪ বছরে পা দেন। তারপর থেকে দেড় মাসে কবির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। এখন শয্যাশায়ী অবস্থায়ই তার সময় কাটে। বেশ ক’বছর আগেই তিনি সহধর্মিণীকে হারিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বড় মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ের ‘গোমতী-আয়েশা’ ভিলায় কবির বাসায় গেলে একদা তারুণ্যদীপ্ত কবিকে অত্যন্ত অসহায় মনে হচ্ছিল। চোখের জ্যোতি কমেছে আরো আগেই। তার প্রখর স্মৃতিশক্তি এখন শুধুই অতীত। কবির বড় ছেলে শরীফ মাহমুদ বললেন, ‘আব্বার অবস্থা ভালো নয়। এখন সময়টা প্রায় শুয়েই কাটে তার। খাবারের সময় আমরা উঠিয়ে বসিয়ে দিলে কিছুক্ষণ স্থিত থাকেন। তারপর আবারো শুয়ে পড়েন।’
শরীফ মাহমুদ বলছিলেন, কিছুদিন ধরে খাওয়া দাওয়া একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। সামান্য খেতেও অনীহা। দুধ, এক টুকরো রুটি কখনো সামান্য সুপÑ এই তার খাওয়া। তরল খাবার গিলতেও অসুবিধা হচ্ছে। খাবার দিলে মুখে নিয়ে বসে থাকেন। গলায় আটকে যাবে বলে ভয় পান। কবির জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ যোগ করলেন, অল্প একটু তরল খাবারও তিনি নিজে থেকে খেতে পারেন না। এতে দিনকে দিন তার শারীরিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এ প্রতিবেদক কবির কাছে গেলে তিনি সামান্য চোখ মেলেন। কবির বড় ছেলে তাকে ধরে বসিয়ে দেন। আধশোয়া কবির কানের কাছে কেমন আছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘শরীর ভালো না।’ আমায় চিনতে পেরেছেন? প্রতুত্তরে কিঞ্চিৎ মাথা নেড়ে আর কোনো শব্দ করেননি তিনি।
কবি আল মাহমুদের পারিবারিক চিকিৎসক ইবনে সিনা হাসপাতালের নিউরো মেডিসিনের প্রফেসর আবদুল হাইকে উদ্ধৃত করে শরীফ মাহমুদ জানান, গত মাসে আব্বাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন, বার্ধক্য ছাড়া তার শারীরিক তেমন কোনো সমস্যা নেই। খাওয়াদাওয়া আর শুশ্রƒষার উপদেশ ছাড়া তেমন কোনো ওষুধ দেননি তিনি। নিয়মিত যেসব ওষুধ সেবন করতেন সেগুলোই চালিয়ে যেতে বলেছেন। কবির পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, এখন তার যে অবস্থা তাতে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। কবি পরিবারও তাই ভাবছেন। কিন্তু তার অবনতিশীল শারীরিক অবস্থার কারণেই হাসপাতালে নিতে সাহস পাচ্ছে না। কবির বড় ছেলে তার বাবার আরোগ্য কামনায় দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন।
কবি আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল। সারা জীবন তিনি লিখেছেন। তার কাব্যপ্রতিভা তাকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গেছে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ’৭১-এর রণাঙ্গনের কাহিনী যেমন তিনি লিখেছেন, তেমনি দেশ বিভাগের করুণ অধ্যায় তুলে ধরেছেন নিজের উপন্যাসে। তার শিশুতোষ সাহিত্যও দুই বাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলাদেশের প্রকৃতি, প্রেম-বিরহ যেমন তার গল্প-কাব্যে স্থান পেয়েছে ঠিক তেমনি বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও কখনো আপস করেননি তিনি। কবি ও সাংবাদিক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও আধুনিক কথাসাহিত্যে তিনি অনন্য এক উচ্চ আসন লাভ করেছেন। কবি লিখেছেন ‘সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে কর্ণফুলীর কূলটায়-দুধভরা ওই চাঁদের বাটি ফেরেশতারা উল্টায়।’ তিনি সব সময় বলেছেন, কবিরা স্বপ্ন দেখায়। বেঁচে থাকার সাহস জোগানো একজন কবির বড় কাজ।


আরো সংবাদ



premium cement
অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন

সকল