২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে প্রধানমন্ত্রীর ৩ প্রস্তাব

-

এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কট অবসানে তিনটি প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সঙ্কটের ভুক্তভোগী দেশের সরকার প্রধান হিসেবে সোমবার নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে প্রস্তাবগুলো দেন তিনি।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছনোর পরদিনই এই বৈঠকে যোগ দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিডিনিউজ।
সুপারিশগুলো
প্রথমত, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন ও নীতি বাতিল এবং বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করার প্রকৃত কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নাগরিক সুরা ও অধিকার নিশ্চিত করে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে একটি ‘সেইফ জোন (নিরাপদ অঞ্চল)’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তৃতীয়ত, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের সুপারিশের আলোকে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচাতে হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানে নিপীড়নের মুখে গত বছরের অগাস্ট থেকে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই নিপীড়নকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে দেখছে জাতিসঙ্ঘও।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে মিয়ানমার এই শরণার্থীদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার েেত্র গড়িমসি দেখাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার পাশাপাশি নিজ দেশে তাদের নিরাপত্তার সাথে বসবাস নিশ্চিতের উপর জোর দিচ্ছে; যদিও মিয়ানমার এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তাদের নাগরিক হিসেবে মানতেই নারাজ।
প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা’র জন্য মিয়ানমারের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের সুপারিশ করেছে জাতিসঙ্ঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন, যার কড়া প্রতিক্রিয়াও এসেছে দেশটির সেনাপ্রধানের কাছ থেকে।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশানার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির সভাপতিত্বে সোমবারের বৈঠকে সঙ্কট অবসানে তিন প্রস্তাব তুলে ধরা হলো বাংলাদেশের প থেকে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যেখানে তারা শতাব্দী ধরে বসবাস করত, সেখান থেকে তাদের জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে।’
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিলেও ভিন্ন দেশে এই নাগরিকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার কথাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেন তিনি।
‘মিয়ানমারের আরাকানের এই বিপুল নাগরিকদের স্থান দেয়ার বিরূপ প্রভাব আমাদের সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির ওপর পড়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল সরকার হিসেবে আমরা আমাদের সীমানা খুলে দিয়েছি এবং জোরপূর্বক স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা কেবল তাদের জীবনই বাঁচাইনি, আমরা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছি।
‘আমরা চাই রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের মূল ভূমিতে ফিরে যাক।’
রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাদের প্রত্যাবর্তন না হওয়ায় আমরা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি।
‘ভূমির স্বল্পতা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পরিবেশের ওপর প্রভাবের কারণে আমরা তাদের ভাসানচর নামে একটি নতুন দ্বীপে স্থানান্তরিত করতে যাচ্ছি। সেখানে তাদের আরো ভালো জীবনযাত্রা নিশ্চিত হবে।’
রোহিঙ্গাদের সাহায্যে জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসার প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি একই সাথে বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো, জাতিসঙ্ঘের ২০১৮ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্লান বাস্তবায়নের জন্য ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার হলেও মাত্র ৩৩ শতাংশ তহবিল নিশ্চিত করা হয়েছে।’
রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সাহায্য ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো দায়িত্বশীল মনোভাব দেখাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোকেই এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো মানবতার ডাকে সাড়া দিয়েই তা করে।’
উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
‘বিশ্বকে অবশ্যই ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রত্যেক উদ্বাস্তু তার নিজের দেশে নিরাপদে ফেরত চায়। মিয়ানমার থেকে উৎখাত হওয়া মানুষগুলোকে নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে তাদের ঘরে ফিরে যেতে হবে।’
সোমবার এই বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেন।
এই বৈঠকে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement