২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ট্রাস্ট মামলার শুনানি

আদালতের প্রতি দুই আসামির অনাস্থা
-

রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। তবে শুরুতেই আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন এ মামলার অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান। তাদের অনাস্থা আবেদনে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তাকে আদালত হাজির না করা হলে আইন অনুযায়ী এ মামলার কার্যক্রম চলতে পারে না। তার অনুপস্থিতিতে বিচার চলার আদেশ আইনম্মত হবে না। এ আদালত থেকে তারা ন্যায়বিচার পাবেন না।
আদালতের প্রতি অনাস্থা দেয়ায় আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আদালতের প্রতি অনাস্থা দেখিয়ে তাদের আবেদনের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।
গতকাল পুরনো কেন্দ্রীয় করাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো: আখতারুজ্জামান উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। আদালত কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপনের শুনানি মুলতবি করেছেন। তা ছাড়া আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হলেও খালেদা জিয়া ও মনিরুল ইসলাম খানের জামিন বহাল রাখা হয়েছে।
গতকাল আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানা উল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। আগে তার চিকিৎসার আদেশ দেন। তাকে সুস্থ করেন। সরকার তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে না। কারাকর্তৃপক্ষও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিচ্ছে না। মানবিক কারণে দেশের যেকোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। দয়া করে তাকে সুস্থ করে তুলুন। আর সে পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন।
মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়া আপনার কাস্টডিতে আছেন। তার চিকিৎসা হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব আপনার। এই মামলা এত দ্রুত করতে হবে কেন। স্বাধীন বিচারকের আসন বলে আপনাকে তো কেউ চাপ দিতে পারে না। তার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। তিনি সুস্থ হলে আদালতে আসবেন। দয়া করে তার চিকিৎসাব্যবস্থার তদারকি করেন। দয়া করে মামলা মুলতবি করার আবেদন মঞ্জুর করেন।
এরপর প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তারা সব সময় চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিতে বলছে। তিনি (খালেদা জিয়া) জেলে আছেন। জেল কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়। খালেদা জিয়া অসুস্থ, যখন সুস্থ হবেন এবং যখন ইচ্ছা হবে আদালতে আসবেনÑ এমন ব্যবস্থা আইনে নেই। তিনি বলেন, আজ তো আসামি মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলামের যুক্তি উপস্থাপনের কথা। চ্যাপটার ২০-এ আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ নেই। তার পরও আমরা শুনছি। যেখানে সুযোগ নেই, সেখানে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তারা যুক্তি উপস্থাপন না করে সময় চাচ্ছে। আজ যুক্তি উপস্থাপন না করলে আগামীকাল অপেক্ষা করব। তারপরও না করলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম তখন বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর ৫৪০ ধারায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশ দিয়েছেন। ওই দিন বলেছি এই আদেশ আইনসম্মত হয়নি। এ রকম কোনো আইন নেই, কোনো আসামি কাস্টডিতে থাকলে তার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চালানো যায় না। আপনার আদেশ আইনসম্মত হয়নি। আমরা এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাব। আমরা ২০ কার্যদিবস সময় চাচ্ছি। আজকের কার্যক্রম মুলতবি করা হোক।
মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী আখতারুজ্জামান বলেন, ৫৪০ ধারায় আবেদন করার এখতিয়ার আছে আসামির। রাষ্ট্রপক্ষের এই সুযোগ নেই। আমার মক্কেল গত ২০ সেপ্টেম্বরের আদেশে সংক্ষুব্ধ। এজন্য তিনি হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করবেন। আমি ৩০ দিন সময় চাচ্ছি।
এরপর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, যুক্তি উপস্থাপনের তারিখ ধার্য আছে আজ, কাল ও পরশুদিন। তারা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করলে আপনি রায়ের জন্য তারিখ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এটা একধরনের বাইরের নির্দেশপ্রাপ্ত ষড়যন্ত্র। যুক্তিতর্ক চলমান থাকুক। তারা যুক্তি উপস্থাপন না করলে রায়ের জন্য রাখেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা একগুঁয়ে মনোভাব দেখালে আপনি রায়ের জন্য রাখেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন মুলতবি রাখার জন্য আসামিপক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ক্লায়েন্টের এই কোর্টের প্রতি আস্থা নেই। মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী আখতারুজ্জামানও তখন বলেন, আমরা ক্লায়েন্টেরও এই আদালতের প্রতি আস্থা নেই। তিনি আসামি মনিরুল ইসলাম খানকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার কী আস্থা আছে? জবাবে তিনি বলেন, আস্থা নেই। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। এরপর আসামি মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এবং মনিরুল ইসলামের আইনজীবীও আদালতের প্রতি লিখিত অনাস্থার আবেদন জমা দেন। মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতের প্রতি অনাস্থার একটি টাইপ করা আবেদন দেন। তখন আদালত বলেন, আপনি কী আগেই জানতেন যে মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর হবে? আপনি টাইপ করে কেন আনলেন?
এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আস্থা, অনাস্থা তাদের ব্যাপার। আপনি বাধ্য নন মুলতবি করতে ও মামলার তারিখ তিন দিন ধার্য আছে আমরা অপেক্ষা করব।
আদালত এ পর্যায়ে দুই আসামি আদালতের প্রতি অনাস্থা দেয়া তাদের জামিনের বিষয় কী হবে তা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান। জবাবে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আদালতের প্রতি অনাস্থা দিলে জামিনে থাকার সুযোগ নেই। এরপর আদালত আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার জামিন বাতিল করেনও। শুনানি আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করেন এবং আদালতের প্রতি দুই আসামির অনাস্থার বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আদেশের দিন ধার্য করেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলবে বলে আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেছিলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে খালেদা জিয়ার হাজিরা ডিসপেনসড উইথ (আদালতে হাজিরা মওকুফ) করা হলো। তার অনুপস্থিতিতে বিচার হবে। তার পক্ষে আইনজীবীরা ইচ্ছা করলে হাজিরা দিতে পারবেন। আদালত ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১০টা থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তি উপস্থাপনের তারিখ ধার্য করেন।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়া তার গুরুতর অসুস্থতার কথা তুলে ধরে আদালতে বলেছিলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার ফুলা পায়ে পুঁজ এসেছে। আপনাদের যা মনে চায় যতদিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন, আমি অসুস্থ, এ অবস্থায় বারবার আসতে পারব না। ন্যায়বিচার এখানে হবে না। এখানে আমি ন্যায় বিচার পাব না। সরকারের ইচ্ছায় এখানে বিচার হচ্ছে। আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। বিচারককে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার পা ফুলে গেছে। ডাক্তার বলেছে, পা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। আমার বাম হাত প্যারালাইজড, বাম পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে। হাঁটতে পারি না। এভাবে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে। ডাক্তারের রিপোর্ট দেখলে আপনা বুঝবেন আমি কতটা অসুস্থ। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন কোনো হাজিরা দিতে পারব না। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আমার সিনিয়র কোনো আইনজীবী আসেনি। এটা জানলে আমি আসতাম না। এখানে ন্যায়বিচার হয়নি, সরকারের ইচ্ছায় বিচার হচ্ছে। আমি এখানে ন্যায়বিচার পাবো না।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ বিচারক বাসুদেব রায় এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে এখনো যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন : দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি নেতাদের মুক্তির দাবিতে রিজভীর নেতৃত্বে নয়াপল্টনে বিএনপির মিছিল বৃষ্টির জন্য দেশবাসীর প্রতি ইস্তিস্কার নামাজ আদায়ের আহ্বান আমিরে জামায়াতের সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চুক্তি স্বাক্ষর করল তুর্কি, ইরাক, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ঢাকায় ‘হিট স্ট্রোকে এক ব্যক্তির মৃত্যু শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’ বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি

সকল