২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ফের অস্থির শেয়ারবাজার

তিন দিনে দেড় শ’ পয়েন্ট সূচক হারাল ডিএসই
-

নতুন করে অস্থিরতা শুরু হওয়ার ফলে টানা দরপতনের শিকার হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিদিনই লেনদেনের শুরু থেকেই বিক্রয় চাপ দিন শেষে পতন ঘটাচ্ছে পুঁজিবাজার সূচকের। গত তিন দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটির অবনতি ঘটে প্রায় ১৫০ পয়েন্ট। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এ তিন দিনে হারিয়েছে তাদের প্রধান সূচকটির সাড়ে ৪০০ পয়েন্টের বেশি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই এমনটি ঘটছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা।
আগের দু’দিনের মতো গতকাল সোমবার লেনদেন শুরুর সাথে সাথে বিক্রয় চাপ সৃষ্টি হয়। পুঁজিবাজর বরাবরই সূচকের উন্নতি দিয়ে দিন শুরু হলেও গত তিন দিন তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যেন কত দ্রুত শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তারই প্রতিযোগিতা চলছিল। ফলে দিনের শুরু থেকে ব্যাপকভাবে শেয়ার দর হারাতে থাকে কোম্পানিগুলো। গত রোববার ঢাকা শেয়ারবাজারে ৭৬ শতাংশ ও চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ৮৩ শতাংশ কোম্পানি দর হারায়। গতকাল এ হার আরো বৃদ্ধি পায়। ঢাকায় দরপতন ঘটে ৭৯ শতাংশ কোম্পানির আর চট্টগ্রামে দরপতনের শিকার হয় ৮৪ শতাংশ।
সূচকের টানা এ অবনতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাজারের মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো। বাজারের এ অস্থিরতার কারণে বিদেশীরাও ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসছেন। ডিএসই থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে গত মাসেও অবশ্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হিসাবে শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয়ই বেশি। এখন এ ধরনের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর নেমে আসছে সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤œ অবস্থানে।
পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, সম্প্রতি রাজনীতিতে নতুন একটি জোট অত্মপ্রকাশের পর থেকে বাজার পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এটাতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে বিনিয়োগকারীরা সামনের দিনগুলোতে বাজার কোন দিকে মোড় নিতে পারে তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। ফলে তারা যত দ্রুত সম্ভব বাজার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। আর এর ফলে যে বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, তা সূচকের অবনতি ঘটাচ্ছে।
তিনি বলেন, দু-এক মাস ধরে বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করছেন বেশি। কারণ সারা বিশ্বেই এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি দেখলে বিদেশীরা ঝুঁকি নিতে চান না। তারা বরং আগেভাগেই মূলধন সংহত করার চেষ্টা করেন। এবং সাময়িকভাবে হলেও পুঁজি তুলে নিয়ে পরবর্তিতে ভালো সময়ে তা কাজে লাগাতে চান। এ কারণে এ সময় ভালো কোম্পানিগুলোও মারাত্মকভাবে দর হারাচ্ছে।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও বিশিষ্ট পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ মুসা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখেই অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে পুঁজিবাজারে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এমনকি বিদেশীরাও এ সময় ঝুঁকি নিতে চান না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে তৎপর তারা। আর এটাই বাজারে প্রতিনিয়ত বিক্রয়চাপ সৃষ্টি করছে। একই সাথে পতন ঘটছে পুঁজিবাজার সূচকের।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচকটি অবস্থান করছিল ৬ হাজার ৩৩৬ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে। এর পরই পতন ঘটতে থাকে সূচকের। দীর্ঘ সময়ের টানা দরপতন চলতে থাকায় মাত্র আট মাসের ব্যবধানে গত ৩ জুলাই সূচকটি হাজার পয়েন্টেরও বেশি হারিয়ে নেমে আসে ৫ হাজার ২৭৩ পয়েন্টে। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে অবশ্য পুঁজিবাজার সূচক ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। গত ২৮ আগস্ট সূচকটি ফের ৫ হাজার ৬১৯ পয়েন্টে পৌঁছে। জুলাই ও আগস্ট এ দু’মাস বাজারের ‘জেড’ শ্রেণী ও স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। এ সময় ভালো কোম্পানিগুলো ফের দর হারায়। কমতে থাকে বাজার সূচক। এ প্রবণতা রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাও বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের নেয়া উদ্যোগে বাজার যখন ফের কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসছিল, তখনই শুরু হলো নির্বাচন সামনে রেখে এ অস্থিরতা।
গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর প্রধান সূচকটি অবস্থান করছিল ৫ হাজার ৫০০ দশমিক ০৫ পয়েন্টে। আর গতকাল সোমবার দিনশেষে সূচকটি নেমে আসে ৫ হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে। তিন দিনে সূচকটির ১৪২ পয়েন্টেরও বেশি হারিয়েছে ডিএসই।

 


আরো সংবাদ



premium cement