২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মালয়েশিয়ায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে শ্রমিক নেয়ার নতুন প্রস্তাব দিতে পারে বাংলাদেশ

-

‘এসপিপিএ সিস্টেম’ স্থগিত করার পর মালয়েশিয়া সরকার এখন কোন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চাচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অংশ নিতে আজ রোববার সন্ধ্যায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল কুয়ালালামপুর যাত্রা করার কথা রয়েছে। প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্র, আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকছেন।
এ দিকে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থান করা বাংলাদেশীসহ বিদেশীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযান গতকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন ও পুলিশের অভিযানে ধরা পড়ে অনেক বাংলাদেশী দেশটির বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে কোনো কোনো এলাকা থেকে অনেক বৈধ শ্রমিককেও ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির একান্ত সচিব (পিএস) মো: আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর নয়া দিগন্তকে জানান, মালয়েশিয়ায় চার দিনের এ সফরে মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের অপর সদস্যরা হচ্ছেনÑ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব ড. মনিরুস সালেহিন (কর্মসংস্থান), মন্ত্রীর একান্ত সচিব, উপসচিব মোহাম্মদ সাহিন (কর্মসংস্থান), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি ও একজন উপসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধি, আইন মন্ত্রণালয়ের অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব।
হুমায়ুন কবীর বলেন, এমওইউ মোতাবেক দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্টারের সাথে শ্রমবাজারের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর বৈঠক করবে।
নতুন পদ্ধতিতে শ্রমবাজার শুরু হলে শুধু ৫৬ রিক্রুটিং এজেন্সি কাজ করতে পারবেÑ মন্ত্রী মহোদয় কি ঢাকার কোনো মিডিয়ার কাছে এমন কথা বলেছেন কি না জানতে চাইলে হুমায়ুন কবীর স্পষ্ট বলেন, এটা একেবারেই একটা বোগাস কথা। অনেকে ইন্টারভিউ নিতে আসছেন। তখন মন্ত্রী তাদের বলেছেন, নতুন করে শ্রমবাজারে যাতে কোনো ধরনের সিন্ডিকেশন না হয়, সব এজেন্সিই যাতে সুন্দরভাবে কাজ করতে পারে, এমন প্রপোজাল তিনি মালয়েশিয়ায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে দেবেন। ৫৬ এজেন্সির কথা যারা বলছে, তারা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা বলছে।
গতকাল মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র নয়া দিগন্তকে বলেছেন, মালয়েশিয়া সরকার অনলাইন এসপিপিএ সিস্টেম স্থগিত করেছে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে। কুয়ালালামপুরে যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে সেখানে আলোচনার মধ্যে আমরা জানার চেষ্টা করব, তারা নতুন কোন পদ্ধতিতে লোক নিতে চাচ্ছে যদি তারা আগের সিস্টেম বাদ দিয়ে নতুন সিস্টেমে লোক নিতে চায় তাহলে কিছুটা সময় লাগবে। তাহলে ওই সময় পর্যন্ত ‘ম্যানুয়েলি পদ্ধতিতে’ শ্রমিক নেয়া অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেয়া হতে পারে।
গতকাল জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার একাধিক নেতা নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবারো ৩০-৫০ জনের সম্বন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা যদি হয় তাহলে আমরা আবারো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সবাইকে নিয়ে মাঠে নামব। কারণ সরকার জামানত নিয়ে লাইসেন্স দিয়েছে। গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করবে আর আমরা লাইসেন্সের মালিক হয়েও দালাল হিসেবে আর ব্যবসায় করতে চাই না। তবে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার নতুন নির্বাচিত একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, জনশক্তি রফতানি ব্যবসায় ক্লিন ইমেজের পাশাপাশি যাদের অফিস সাজানো গোছানো, অতীতের রেকর্ড ভালো, ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে, রয়েছে বিদেশে দক্ষ অদক্ষ শ্রমিক পাঠিয়ে সুনাম অর্জন করার রেকর্ড, এমন এজেন্সিগুলোকেই এবার নতুন ফরম্যাটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলছে গোপনে। তবে আগের যে দশ রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠিয়েছিল সেখান থেকে কয়েকটির নাম বাদ পড়তে পারে। অথবা লাইসেন্সের নাম বদল হতে পারে। এ ছাড়া নতুন ফরম্যাটে আরো ৩০-৪০টি এজেন্সির নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
এ দিকে এসপিপিএ সিস্টেম বন্ধ হওয়ার পর যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি তাদের বিষয়টিও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আলোচনায় উঠবে বলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে ঢাকায় মালয়েশিয়াগামী অপেক্ষমাণ শ্রমিকদের মধ্য থেকে শেষ পর্যন্ত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির ১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক না যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি রয়েছে। আর বাকি যে কর্মীরা অপেক্ষায় থাকবেন তাদের নভেম্বর মাসের মধ্যে ফ্লাইট না হলে না যাওয়ার সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ধরপাকড় অব্যাহত : গতকাল মালয়েশিয়া থেকে একাধিক বাংলাদেশী নয়া দিগন্তকে জানান, মালয়েশিয়ায় প্রতিদিন ইমিগ্রেশনের নেতৃত্বে অবৈধ অভিবাসী আটক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশী গ্রেফতার হয়েছে সে ব্যাপারে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী শুধু বলেছেন, অবৈধ বিদেশীদের আটক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বার্নামার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আটক বাংলাদেশীদের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে জানুয়ারি মাস থেকে ৩০ হাজার বিদেশী কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তার মধ্যে ছয় হাজার রয়েছে বাংলাদেশী। মালয়েশিয়ায় এ মুহূর্তে আনুমানিক ১০ লাখ বাংলাদেশী রয়েছে। এদের বেশির ভাগই অভিবাসী। তাদের অধিকাংশই কাজের অবস্থা নিয়মিতকরণের প্রযোজ্য প্রক্রিয়াগুলোর জন্য ৬ থেকে ১০ হাজার রিংগিট ব্যয় করলেও অনেকেই এখনো ওয়ার্ক পারমিট না পাওয়ার কারণে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
গতকাল মালয়েশিয়ার জহুরবারুর কুলাই থেকে মাদারীপুরের বাসিন্দা সুমন এ প্রতিবেদককে বলেন, মাহাথির মোহাম্মদ সরকার আসার পর থেকেই দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। তবে তিনি বলেন, অভিযানে বৈধ কেউ ধরা পড়লে তাদের কাগজপত্র যাচাই শেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement