২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মধ্যস্থতা করছে চীন

ত্রিপক্ষীয় বৈঠক বৃহস্পতিবার
-

আন্তর্জাতিক চাপে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মধ্যস্থতা করছে চীন। আগামী বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সাইডলাইনে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মন্ত্রীরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। এ বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক জনমতের চাপে কোণঠাসা মিয়ানমারের পাশে চীন কঠোর অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে রাখাইনে গণহত্যার জন্য দায়ী করা, রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং নৃশংসতা চালানোর জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত শুরু এবং জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের ক্ষুব্ধ অবস্থানের কারণে নিজ অবস্থান নমনীয় করতে বাধ্য হয়েছে চীন।
মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক প্রভাব রাখা চীন রোহিঙ্গা ইস্যুটি দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের জন্য বাংলাদেশকে তাগাদা দিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী এর দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে সময়ক্ষেপণসহ মিয়ানমারের নানাবিধ শর্তের কারণে নির্ধারিত সময়ের আট মাস পরও বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত একজন রোহিঙ্গাও রাখাইনে ফিরে যেতে পারেননি। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক চাপ সামাল দিতে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাবাসন শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করছে চীন।
বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করবে। এতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, মিয়ানমারের ইউনিয়নমন্ত্রী টিন্ট সোয়ে এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই অংশ নেবেন। এর আগে গত জুনে মাহমুদ আলীর বেইজিং সফরের সময় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই ধরনের বৈঠক আয়োজন করেছিলেন। এর পর মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল মিয়ানমার সফর করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেশটির প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখে এসেছে।
প্রত্যাবাসন শুরুতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে রয়েছে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি। নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার আস্থা পাচ্ছেন না। রাখাইনে নির্বিঘœ প্রবেশাধিকারের অভাবে জাতিসঙ্ঘও এ ব্যাপারে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের আশ্বস্ত করতে পারছে না।
এ ছাড়া মিয়ানমারের নাগরিকত্ব রোহিঙ্গাদের অন্যতম প্রধান দাবি। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিতে নারাজ। প্রত্যাবাসনের যোগ্যতা অর্জনের জন্য যাচাই-বাছাইকৃত রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) পূরণ বাধ্যতামূলক করেছে মিয়ানমার। কিন্তু এনভিসিতে জাতীয় পরিচয় ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ থাকায় তা পূরণে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা।
প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করতে আগামী মাসে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে। প্রতিনিধিদলটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করবে। নাগরিকত্ব দেয়ার প্রাথমিক শর্ত হিসেবে এনভিসিকে সামনে নিয়ে এসেছে মিয়ানমার।
যাচাই-বাছাই শেষে মিয়ানমার প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গার যে তালিকা বাংলাদেশকে দিয়েছে তাতেও সমস্যা রয়েছে। পরিবারভিত্তিক না করে এই তালিকা করা হয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে। অর্থাৎ তালিকায় একটি পরিবারের সব সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে পরিবারের কোনো সদস্যকে বাংলাদেশে ফেলে রেখে রোহিঙ্গারা রাখাইন যেতে চাইছেন না। নেইপিডো সফরকালে এ বিষয়টি সুরাহার জন্য মিয়ানমারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ।
গত মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন উত্থাপন করেছে মিয়ানমারের মানবাধিকার সংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধান মিশন। এ প্রতিবেদনের ওপর অনুষ্ঠিত বিতর্কে অংশ নিয়ে চীনের প্রতিনিধি বলেন, ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের কারণে রাখাইন সঙ্কট জটিল আকার ধারণ করেছে। এটির রাতারাতি সমাধান সম্ভব না। অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমার পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপ অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দ্রুততার সাথে প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে।
তবে অধিবেশনে রাশিয়ার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি। তথ্যানুসন্ধান দলের সূত্রের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে দেশটি। রাশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে রাখাইনে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার মানবাধিকার উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে সংলাপের মাধ্যমে ইস্যুটি মিয়ানমারের সাথে সুরাহা করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
চীনা কোম্পানি বেপজা অর্থনৈতিক জোনে ১৯.৯৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে মৃত মায়ের গর্ভে জন্ম নিলো নতুন প্রাণ দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ সমাবেশে কেউ মারা যায়নি : পুলিশ সুপার হামাসকে কাতার ছাড়তে হবে না, বিশ্বাস এরদোগানের জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিক নিরাপত্তার উদ্যোগ ভালো লেগেছে : সীতাকুন্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ১০ দেশের অংশগ্রহণে সামরিক মহড়া শুরু করল আরব আমিরাত গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর ২ হাজার ফিলিস্তিনি নিখোঁজ ৯ বছর পর সৌদি আরবে আসছে ইরানি ওমরা কাফেলা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের হামলার নিন্দা হেফাজতে ইসলামের ভর্তি পরীক্ষায় জবিতে থাকবে ভ্রাম্যমাণ পানির ট্যাংক ও চিকিৎসক মিয়ানমার থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশীরা কারা?

সকল