২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সঠিক কথা বলায় সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে সরকার : সুপ্রিম কোর্ট বার

-

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সঠিক কথা বলার কারণেই বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে দেশত্যাগ ও পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে সরকার। তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকরা স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারছেন না। দেশের মানুষ আজ অসহায়। সব বিচার বিভাগ এখন নির্বাহী বিভাগের ভয়ের মধ্যে রয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে রায় লিখতে ও ঘোষণা করতে পারছেন না। সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলনে রায় দিতে হচ্ছে তাদের।
গত ২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্ট বার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবেদীন এসব কথা বলেন। নির্বাচন সামনে রেখে ও সরকারকে বিপদে ফেলতে বিচারপতি সিনহা এরকম করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এটার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। আর তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন, তিনি একজন বিচারপতি। তিনি বিচার বিভাগকে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য কথা বলেছেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আপিল বিভাগের সে সময়ের বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা বিচারপতি সিনহাকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আপনার সঙ্গে এক এজলাসে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতে চান না। তার এরকম বক্তব্য ছিল সংবিধান পরিপন্থী। বিচারপতি এস কে সিনহা কোনো চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে চাননি। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে চাপ প্রয়োগ করে তাকে দেশ ত্যাগ এবং পরবর্তিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, আমরা সে সময় আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে বলেছি, প্রধান বিচারপতি সিনহা অসুস্থ নন। ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পূর্ব শর্ত হচ্ছে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা এবং আইনের শাসন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের চাপের মুখে রয়েছে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহার অন্তর্জ্বালা আছে। সেটা আছে, কারণ বাংলাদেশের বিচার বিভাগে তার অনেক অবদান আছে। সে কারণেই তার অন্তর্জ্বালা আছে। বিচারপতি সিনহা বলেছেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের পূর্ণ করায়ত্ত করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধান বিচারপতি থাকার সময়ই তিনি এ কথাগুলো বলেছিলেন। নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকারÑ দায়িত্ব পালনের সময় বিচারপতি এস কে সিনহা এমন কথা বলেননি বলে ওবায়দুল কাদের যে কথা বলেছেন তা সঠিক নয়। এস কে সিনহা বিচারপতি থাকা অবস্থায় এ কথাগুলো বলেছিলেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, বিচারপতি সিনহাকে পদত্যাগ করানোর পর এখন ভীতি সঞ্চার করানো হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের ওপর। দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়টিও বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়াগ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেয়া হয়েছে। আমরা বার বার বলেছি বেগম খালেদা জিয়ার এই মামলার সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। খালেদা জিয়া এই মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার যোগ্য। তারপরেও ওই মামলায় তাকে সম্পৃক্ত করা হয়ছে, রায় ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস বিচার বিভাগকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। চাপ প্রয়োগ করে এই রায় হাসিল করেছে সরকার। চাপের মুখে কারাগারের ভিতরে আদালত বসিয়ে খালেদা জিয়ার বিচার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি গোলাম রহমান ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সহসম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম মিয়া, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট মো: ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement