২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কারাগারে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশ

-

ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার চলবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো: আখতারুজ্জামান ফৌজদারি আইনের ৫৪০ ধারায় আসামির অনুপস্থিতিতেই আদালতের বিচারকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সরকার পক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
আদেশে আদালত বলেছেন, খালেদা জিয়া আদালতে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে খালেদা জিয়ার হাজিরা ডিসপেনসড উইথ (মওকুফ) করা হলো। তার অনুপস্থিতিতে বিচার হবে। তার পক্ষে আইনজীবীরা ইচ্ছা করলে হাজিরা দিতে পারবেন। আদালত ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্টের রেফারেন্স দিয়ে বলেন, কোনো আসামি আদালতে অনুপস্থিত থাকলে তার বিচার করা যায়। আদালত বলেন, খালেদা জিয়া জামিনে আছেন, তার জামিন আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত মঞ্জুর করা হলো। ভারতের কয়েকটি রাজ্যের হাইকোর্টের রেফারেন্স দিয়ে আদালত আদেশে বলেন, আসামিপক্ষ আবেদন না করলেও আদালত আদেশ দিতে পারেন। কোনো পক্ষ আবেদন না দিলেও যায় আসে না। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী, একটি দলের চেয়ারপারসন। তার বিরুদ্ধে এই মামলা অতি জঘন্য প্রকৃতির মামলা নয়। কারা কর্তৃপক্ষের আজকের হাজিরা পরোয়ানায় বলা হয়েছে, তাকে (খালেদা জিয়াকে) আদালতে আসার ব্যাপারে জানানো হলে তিনি আদালতে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
আদেশে আদালত আরো বলেন, খালেদা জিয়া ইচ্ছা করে আদালতে আসেন না। গত ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের হাজিরা পরোয়ানায় বলা হয়েছে তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক। তিনি না আসায় অন্য আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিগত সাত বছর ধরে এ মামলা চলমান। পৌনে দুই বছর এই মামলার যুক্তি উপস্থাপনে ব্যয় হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে এসে বলেছেন, আমি বারবার আসতে পারব না। ফৌজদারি আইনের ৫৪০ ধারায় ব্যবস্থা না নিলে এ মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হবে। এ মামলার দুই আসামি প্রতিদিন হাজির হচ্ছেন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হননি। এমন অবস্থায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাকে জামিনে রেখে বিচার চলবে।
বেলা ১টা ৩০ মিনিটে আদেশ দিয়ে ২টা পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়। বেলা ২টা ১০ মিনিট থেকে দ্বিতীয়বার আদালতে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তি উপস্থাপন আংশিক হয়েছে উল্লেখ করে আগামী ২৪, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মামলার যুক্তি উপস্থাপনের সূচি ধার্য করেন এবং সে পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া ও এ মামলার অপর দুই আসামির জামিন মঞ্জুর করে বলেন, ওই সময় মামলার অন্য আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খানের বিষয়ে যুক্তিতর্ক হবে।
এ ছাড়া, বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ বলে উল্লেখ করে জরুরি ভিত্তিতে তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট কল করে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসার যে আবেদন করা হয়েছে সে ব্যাপারে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন আদালত।
এ দিকে, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার জন্য তার আইনজীবীরা সময় প্রার্থনা করলে সে বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দেননি।
বেগম খালেদা জিয়া তার গুরুতর অসুস্থতার কথা তুলে ধরে গত ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে বলেছিলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার ফোলা পায়ে পুঁজ এসেছে। আপনাদের যা মনে চায় যত দিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন। আমি অসুস্থ, এ অবস্থায় বার বার আসতে পারব না। ন্যায়বিচার এখানে হবে না। এখানে আমি ন্যায়বিচার পাবো না। সরকারের ইচ্ছায় এখানে বিচার হচ্ছে। আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। বিচারককে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার পা ফুলে গেছে। ডাক্তার বলেছে, পা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। আমার বাম হাত প্যারালাইজড, বাম পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, পা ফুলে গেছে। হাঁটতে পারি না। এভাবে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে। ডাক্তারের রিপোর্ট দেখলে বুঝবেন আমি কতটা অসুস্থ। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন হাজিরা দিতে পারব না। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। এখানে ন্যায়বিচার হয়নি, সরকারের ইচ্ছায় বিচার হচ্ছে। আমি এখানে ন্যায়বিচার পাবো না।
মামলার শুনানি : গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানা উল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা বুধবার বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি গত ৫ সেপ্টেম্বর আদালতে এসেছেন। তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক বলে কারা কর্তৃপক্ষ যে হাজিরা পরোয়ানা পাঠিয়েছে সে বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আপনার অধীনে আছেন। বেগম জিয়া বলেছেন, তিনি আসতে অনিচ্ছুক বলেননি। তার সাথে জেলার, ডেপুর্টি জেলার দেখা করেছেন, তাদের তিনি জানিয়েছেন তিনি অসুস্থ। সরকার একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছে। ডাক্তার তাকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে বলেছেন। তিনি অসুস্থ, তার চিকিৎসা দরকার। তিনি বলেছেন, ছেলের মৃত্যুবার্ষিকীতেও তিনি আদালতে এসেছেন। তিনি আদালতে আসতে চান। কারাগার কর্তৃপ আদালতের কাছে যে কথা বলেছে তা ঠিক নয়। সুস্থ হলে তিনি আদালতে হাজির হবেন। খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচার চলার আদেশ চেয়ে রাষ্ট্রপরে আইনজীবী যে আবেদন জমা দিয়েছেন তা তিনি দিতে পারেন না। আমাদের নিবেদন, তার জামিন বৃদ্ধি করেন। তিনি যাতে সুস্থ হয়ে আদালতের কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন সে জন্য আপনি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার নির্দেশ দেন। আগে তিনি সুস্থ হোন, তারপর তার বিচার করেন।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করলে তিনি বলেছেন, তিনি আদালতের প্রতি অনাস্থা দেখাননি। তিনি বলেছেন, তিনি অসুস্থ; আদালতে বসতে পর্যন্ত পারেন না। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও বলেছেন তিনি অসুস্থ।
এরপর আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্নার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ৫৪০ ধারায় আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারের বিষয়ে আইনি যুক্তি তুলে ধরতে চাইলে আদালত বলেন, আজ আদেশের জন্য আছে। আজ আর শুনব না। তখন আমিনুল ইসলাম বলেন, গত ১৩ সেপ্টেম্বর যেদিন রাষ্ট্রপক্ষ ৫৪০ ধারায় আবেদন করে, ওই দিনই আমাকে যুক্তি উপস্থাপন করতে বলেছেন। এই স্বল্পসময় প্রস্তুতি না নিয়ে আমি কী বলব। এইভাবে আদেশ দিলে তা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী হবে। আপনি না শুনে, আদেশ দিলে জাতির কাছে কী মেসেজ যাবে। আমিনুল ইসলাম একপর্যায়ে বলেন, তিনি ওই দিন পিটিশন চেয়েছেন, আর ওই দিনই আমাদের ওই বিষয়ে বক্তব্য দিতে হবে। প্রস্তুতি ছাড়া ওই দিনই কিভাবে বক্তব্য দেই? এরপর আদালত শুনানির অনুমতি দিলে আমিনুল ইসলাম বলেন, কারাগারে থাকা কোনো আসামির ক্ষেত্রে ৫৪০ ধারা প্রযোজ্য হবে না। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এ বিষয়ে একটি দৃষ্টান্তও দেখাতে পারবেন না।
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ৫৪০ (এ) ধারায় বলা আছে, আসামি অম হলে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে তার হাজিরা হবে। আমরা আসামিকে রিপ্রেজেন্ট করছি না। উনি কাস্টডিতে আছেন। উনাকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ আমাদের নাই। আমরা তাকে এখানে শুধু ডিফেন্ড করছি।
এরপর সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, বেগম খালেদা জিয়া জামিনে আছেন। তিনি গুরুতর অসুস্থ বলে আদালতে আসতে পারছেন না। এখানে ৫৪০ ধারায় আবেদন করার অধিকার রাষ্ট্রপক্ষের নেই। তিনি আসামির পক্ষে আবেদন দিতে পারেন না। তিনি বলেছেন, তাকে বাঁচাতে চাইলে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতে বলেন, আসামি আদালতে না এলে কী হবে সে বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার আছে। তারা জাদুর কাঠি এনেছে, যে সরকারের কাছে কিছু নেই। তিনি বলেন, এই মামলায় ব্যতিক্রম ধারা সৃষ্টি হচ্ছে। আসামি জেলে থাকলেও ৫৪০ ধারা প্রয়োগের সুযোগ আছে। তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ- হাসপাতালে যাবেন- চিকিৎসা করাবেন, তারপর বিচার হবে- এরকম হলে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।
এরপর মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, আদালত কোনো আইনজীবীকে খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার আদেশ দেননি। এ জন্য ৫৪০ ধারায় আদেশ দিতে পারেন না।
আদালতে মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী আখতারুজ্জামান বলেন, কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে ৫৪০ ধারা প্রযোজ্য নয়।
আদেশের পর কারাগারের সামনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, প্রসিকিউশন তাদের পিটিশনের পে তেমন কোনো যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। আদালত প্রসিকিউশনের প হয়ে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আদেশ দিয়েছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো।
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বিচারক এটার (৫৪০ ধারার) ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি স্বাধীনভাবে করলে হয়ত আদেশ ভিন্ন হতে পারত। মামলার পিপি মোশারফ হোসেন কাজল আদালতে কিছু বলেননি। কোনো সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করতে পারেননি। তারপরও তার নামে সব ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে রায় দিয়েছেন আদালত।
২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ বিচারক বাসুদেব রায় এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পে যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয়। তবে খালেদা জিয়ার পক্ষে এখনো যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফ্যাসিবাদের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালককে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ আ’লীগের চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু

সকল