২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাণিজ্য বৃদ্ধিতে চার বাধা

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ
-

দণি এশিয়ায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মাত্র ৯ ভাগ অবদান রাখছে বাংলাদেশ। অথচ এ পরিমাণ দ্বিগুণ করা সম্ভব, যা মুদ্রার হিসাবে ১৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। প্রধান চারটি বাধায় বাংলাদেশের এ বাণিজ্য বাড়ছে না। এগুলো হলোÑ ট্যারিফ ও প্যারা ট্যারিফ, নানা ধরনের অশুল্ক বাধা, পণ্য পরিবহন খরচ এবং সীমান্তে আস্থার সঙ্কট বা অবিশ্বাস।
‘এ গ্লাস হাফ ফুল : দ্য প্রমিজ অব রিজিওনাল ট্র্রেড ইউনিয়ন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে বলা হয়, দণি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার; অথচ শুধু ভারতের সঙ্গেই এর চেয়ে বেশি ব্যবসায় করা সম্ভব। সেজন্য আন্তঃদেশীয় সমতা ও অবকাঠামো কাজে লাগানোর পরামর্শ দেয় বিশ্বব্যাংক।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল বিশ্বব্যাংক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে মূল বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের দণি এশিয়া বিষয়ক সমন্বয়ক ও প্রধান অর্থনীতিক সঞ্জয় কাঠুরিয়া। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার প্রমুখ।
প্রতিবেদনে সঞ্জয় কাঠুরিয়া চারটি প্রধান বাণিজ্য বাধা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃবাণিজ্য খুবই কম। বিশ্বের মোট বাণিজ্যের মাত্র ৫ ভাগ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য। যেখানে পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিকে বাণিজ্যের আকার ৫০ ভাগ। বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশ যে বাণিজ্য করছে, তার মাত্র ৮ ভাগ দক্ষিণ এশিয়ার সাথে।
এ বিষয়ে চিমিয়াও ফান উল্লেখ করেন, বহির্বিশ্বের সাথে বাণিজ্য, আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি, জ্বালানি ও বিনিয়োগে জোর দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতির বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে। রফতানি নীতিতে পক্ষপাত রয়েছেÑ উল্লেখ করে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সাথে বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশের বাণিজ্য নীতি উন্নয়নের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, অঞ্চলভিত্তিক বিশ্ববাণিজ্যে তুলনা করলে আমাদের দণি এশীয় বাণিজ্যে সুবিধা অনেক কম। আবার অবকাঠামো সমস্যার পাশাপাশি মানুষের সৃষ্ট সমস্যাও আছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবণতা ইউরোপ-আমেরিকানির্ভর হয়ে উঠছে। কারণ, সেখানে সুবিধা বেশি। তবে নিজেদের স্বার্থেই এ অঞ্চলের দেশগুলোর পারস্পরিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য উন্নয়ন করতে হবে। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে হবে। এ ল্েয সরকার কাজও করছে। এ েেত্র স্পর্শকাতর তালিকায় থাকা পণ্যের সংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া সাফটা-কে কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। এটি কার্যকরের মাধ্যমেও নতুন করে কানেক্টিভিটি বাড়ানো সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তঃদেশীয় সংযোগ বাড়ানো গেলে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর বর্তমান বাণিজ্য ২৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে তিন গুণ। অর্থাৎ ৬৭ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এ সম্ভাবনাময়ের পথে প্রধান বাধা হচ্ছে উচ্চ শুল্ক, আধা শুল্ক ও অশুল্ক বাধা, কানেক্টিভিটি খরচ এবং সীমান্তে আস্থার সঙ্কট। এসব কারণে সারা বিশ্ব যেখানে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করছে, সেখানে গত ২৫ বছরে এ অঞ্চলের বাণিজ্য এখনো ২৩ বিলিয়ন ডলারেই আটকে আছে।
পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার বাণিজ্য বাধা দূরীকরণে করণীয় সম্পর্কে বলেন, বিশ্ববাণিজ্যে দণি এশীয় অঞ্চলের বাণিজ্য অংশীদারিত্ব বাড়াতে শক্তিশালী ও বাস্তবধর্মী গবেষণা দরকার। এর মাধ্যমে বেরিয়ে আসা ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement