২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

১০ অক্টোবর রায়

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
-

বহুল আলোচিত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় নি¤œ আদালতের বিচারকার্যক্রম শেষ হয়েছে। আগামী ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার উভয় পক্ষের আইনি যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।
একই সাথে বিচারক এই মামলায় জামিনে থাকা সাবেক ৩ আইজিপিসহ ৮ জনের জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামিদের জামিন বাতিল প্রসঙ্গে আদালত বলেন, আসামিরা জামিনে থাকলে বিচারে সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য আসামিদের জামিন বাতিল করা হলো।
গ্রেনেড হামলার দুই মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাদের সাক্ষ্যে ঘটনায় জড়িত সবার ব্যাপারে তথ্য এসেছে বলে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন এ মামলার শুনানি হয়। উভয়পক্ষের আইনি পয়েন্টে সমাপনী বক্তব্য শেষে গতকাল রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন বিচারক।
আদালত যা বলেন : রায়ের তারিখ ঘোষণার সময় আদালত বলেন, দীর্ঘদিন পর এ মামলার বিচারের শেষ দিকে আমরা এসেছি। এ মামলার বিচারে কোনো ফাঁক রাখার চেষ্টা করিনি। কখনো কাউকে অধিকার বঞ্চিত করিনি। প্রসিকিউটর ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কথা শুনেছি। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শেষ পর্যন্ত আইনি ব্যাখ্যা দিয়ে বিচারকাজে সহায়তা করেছেন। আমিও আইনি ব্যাখ্যা দিতে তাদের সময় দিয়েছি। আইনানুগভাবে আমিও সবকিছু করতে চেয়েছি। আসামিরাও বিচারকাজে সহায়তা করেছেন। বিচারকাজ আজ (গতকাল মঙ্গলবার) শেষ হচ্ছে। তাই আমাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতেই হবে।
আদালত আরো বলেন, এত দিন ধরে এখানে বিচারকাজ পরিচালনা করে এ আদালত বড় আপন হয়ে গেছে। এ আদালতের দরজা, জানালা, ফ্যান সবকিছু বড় চেনা। আর একদিন এখানে আসতে হবে। সেদিন আমি রায় ঘোষণা করব। এখন রায়ের দিন ধার্য করতে হবে এই বলেই বিচারক আগামী ১০ অক্টোবর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
এর আগে বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এ মামলায় জামিনে থাকা তিন আইজিপিসহ আট আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অন্য দিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে বন্দী আছেন। তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে এ মামলার বিচারকাজ চলছে।
সরকারি ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য : রায় ঘোষণার দিন ঠিক হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শেষ করে দেয়ার জন্য এ হামলা করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) প্রার্থনা করেন।
অন্য দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এ এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেয়া যায় না। সাজা দেয়ার মতো কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই।
আদালতে আসামি পক্ষে এস এস শাহজাহান ছাড়াও সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজ্জাক খান প্রমুখ শুনানিতে অংশ নেন। অন্যদিকে সরকারের কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল উপস্থিত ছিলেন।
যারা জামিনে আছেন : আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন ৮ জন। তারা হলেন, কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব:) সাইফুল ইসলাম ডিউক, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, সাবেক তিন আইজিপি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অব:) রুহুল আমিন, এএসপি (অব:) আবদুর রশিদ ও এএসপি (অব:) মুন্সি আতিকুর রহমান।
যাদেরকে পলাতক দেখানো হয়েছে : বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, এ টি এম আমিন, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, মোহাম্মদ হানিফ, আব্দুল মালেক, শওকত হোসেন, মাওলানা তাজ উদ্দিন, ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম।
ঘটনার বিবরণ : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানসহ ২২ জন নিহত হন। প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কয়েক শ’ নেতাকর্মী। তাদের অনেকে আজো শরীরে গ্রেনেডের স্পিøন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন যাপন করছেন।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই এ-সংক্রান্ত হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা দু’টির বিচার শুরু হয়। ৬১ জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার এসে অধিকতর তদন্ত করে। এরপর বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, সাবেক জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন আসামি করে ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এরপর দুই অভিযোগপত্রের মোট ৫২ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। অন্য মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ৪৯। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। কারাগারে রয়েছেন এ মামলার ২৩ জন আসামি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান

সকল