২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
খুলনায় যুক্তফ্রন্টের জনসভায় ড. কামাল

দুর্নীতি ও লুটপাটে সরকারি দলের নেতারা জড়িত

-

গণফোরামের সভাপতি ও যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণ, ক্ষমতার মালিক জনগণ, প্রধানমন্ত্রী নন। কিন্তু জনগণের সেই অধিকার পদদলিত করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে যুক্তফ্রন্টের প্রথম জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক লুটের কোনো তদন্ত করেনি সরকার। এ জন্য আপনারা আসামি হতে পারেন। চার হাজার কোটি টাকাকে অর্থমন্ত্রী সামান্য বলায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অর্থের মালিক আপনি নন, জনগণ। দেশের সব স্তরে দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। সরকারি দলের নেতারা এর সাথে জড়িত। তাদের বিচার হয়নি। অনেকে লুটের টাকায় বিদেশে বাড়ি করেছেন। ওদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না। আপনারা মনে করবেন না আপনারা পালিয়ে রক্ষা পাবেন। আপনাদেরও বিচার হবে। পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাসদ সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একবারই এসেছে, আর আসবে না। জনগণের ভোটে সরকার গঠন করতে না দিলে দায়দায়িত্ব আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে। তিনি বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও ভোটের অধিকারের দাবিতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে স্বৈরাচারীরা পালানোর সুযোগ পাবে না।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সঙ্কট দেশের জনগণ ভোট দিতে পারবে কি না! খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেমন হয়েছেÑ তা আপনারা দেখেছেন। এটা পুলিশের দেশ। পুলিশ ছাড়া সরকার থাকবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার জন্য খুলনায় যে হোটেলে রুম বুক করা হয়েছিল তা পুলিশের নির্দেশে গত (সোমবার) রাতে বাতিল করা হয়। পরে স্থানীয় নেতাদের অনুরোধে পুলিশ কমিশনার হোটেল কর্তৃপক্ষকে রুম দেয়ার অনুমতি দেন। তিনি বলেন, সরকার নতুন ষড়যন্ত্রে নেমেছে। তার নাম ইভিএম। সরকার জানে মানুষ ভোট দিলে তারা জিততে পারবে না। তাই ওরা ষড়যন্ত্র করছে। আমরা লড়াইয়ের জন্য পথে নেমেছি। আমরা এ লড়াইয়ের শেষ দেখতে চাই।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার যখন ফ্যাসিস্ট হয়, তখন তারা কারো কথা শুনতে চায় না। শহীদুল আলম কথা বলেছেন বলে ভার্সিটির শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও তাকে কেরানীগঞ্জের জেলে থাকতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে পরিবর্তন দরকার। সে জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে।
যুক্তফ্রন্টের প্রথম জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা: একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার জন্য তিনি আসতে পারেননি।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির খুলনা জেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আ ফ ম মহসীন। বক্তৃতা দেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, সোনার বাংলা পার্টির সভাপতি শেখ আব্দুর নূর, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি দবির উদ্দিন জোয়ার্দ্দার, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, মাগুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল, জেএসডির সহসভাপতি আব্দুস সালাম, জেলা সাধারণ সম্পাদক কাওসার আলী সানা, স্থানীয় জেএসডি নেতা আব্দুল লতিফ, জিল্লুর রহমান, সুশাংশু সরকার ও অধ্যক্ষ শেখ আব্দুর খালেক প্রমুখ।
যশোর অফিস জানায়, গণফোরাম সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার অর্থবহ পরিবর্তনে গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি। দেশের গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা সুরক্ষার জন্য জনগণকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কেননা জনগণই হচ্ছে দেশের সব কিছুর মালিক। তাই দেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।
মঙ্গলবার সকালে খুলনা যাওয়ার পথে যশোর প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (জেএসডি) সভাপতি আ স ম রব বলেন, জাতীয় ঐক্যকে বিতর্কিত করতে বি. চৌধুরীকে ঘিরে যে অপপ্রচার হচ্ছে তা ঠিক নয়। তিনি আমাদের সাথে আছেন এবং থাকবেন। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যুক্ত ফ্রন্টের দাবিকে অসাংবিধানিক বলা হয়েছে। অথচ এর আগে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১২৭ দিন হরতাল করেছিল, ক্ষমতায় থেকে বাকশাল কায়েম করেছিল, বিনা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এসব কি সাংবিধাকি ছিল। তিনি বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারবে না। মতবিনিময়কালে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তার জাফরুল্লাহ, বিকল্প ধারার ব্যরিস্টার ওমর ফারুক, গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় শেষে নেতৃবৃন্দ খুলনার উদ্দেশে রওনা হন।

 


আরো সংবাদ



premium cement