২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১০ বছর পর সাফ শিরোপা পুনরুদ্ধার মালদ্বীপের

মালদ্বীপ ২:১ ভারত
গোলের পর মালদ্বীপের খেলোয়াড়দের উল্লাস : মোহাম্মদ শরীফ -

এই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই ২০০৩ ও ২০০৯ সালে দুই দফা স্বপ্ন ভঙ্গ মালদ্বীপের। প্রথমবার বাংলাদেশের কাছে এবং পরে ভারতের কাছে ফাইনালে হেরে। গতকাল আর হাতাশায় ডুবতে হয়নি দ্বীপরাষ্ট্রটিকে। বরং যে ভারতের কাছে হেরে তাদের ২০০৮ এর অর্জন বিসর্জন দেয়া কাল সেই পুরনো প্রতিপক্ষকে ২-১তে হারিয়েই ১০ বছর বছর পর সাফ শিরোপা পুনরুদ্ধার করল দুই সহস্রাদিক দ্বীপের দেশটি। ২০০৮ এই ভারতকেই ১-০তে হারিয়ে কলম্বোর মাঠে প্রথম দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই আসরে শ্রেষ্ঠত্ব দেখায় মালদ্বীপ। সাফে এটি তাদের দ্বিতীয় শিরোপা। অন্য দিকে ভারত তৃতীয়বারের মতো হারল ফাইনালে। লক্ষণীয় বিষয়, গ্রুপ পর্বে কোনো গোল না দিয়ে এবং টসে জিতে সেমিতে আসে মালদ্বীপ। আর এখন তারা ফের সাফের সেরা। কাল ফাইনাল জেতার পর মালদ্বীপের ফুটবলারেরা কাতার বদ্ধ হয়ে মাঠেই সেজদা দেন। চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপ পাচ্ছে ৫০ হাজার ডলার এবং ট্রফি। ভারত পাচ্ছে ২৫ হাজার ডলার প্রাইজমানি।
গতকাল ফাইনালে ১৯ মিনিটের গোলেই পিছিয়ে পড়ে আসরের গতবারের এবং এই পর্যন্ত সাতবারের চ্যাম্পিয়নরা। মালদ্বীপের বিপক্ষে থ্রো পায় ভারত। সেই থ্রো কিয়ার করার পর ফাউল। ওই ফ্রি কিক থেকেই বল পান হাসান নাইজ। থ্রু পাস দেন ফরোয়ার্ড ইব্রাহিম মাহুদি হুসেইনকে। তিনি এই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঢুকে পড়েন ভারতের বক্সে। বিপক্ষ কিপার ভিশাল কেইথ পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে কঠিন করে দেন গোল করাটা। কিন্তু দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত প্লেসিং শটে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠান মালদ্বীপের এই ফরোয়ার্ড। এরপর ৪২ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানো সুযোগ নষ্ট করে দ্বীপরাষ্ট্রটি। আলী ফাসিরের ফ্রি-কিক বার ঘেঁষে যাওয়ায় তখন দ্বিতীয় গোল পায়নি মালদ্বীপ।
অবশ্য প্রথম থেকে আক্রমণে সক্রিয় ছিল ভারতই। আগের তিন ম্যাচে তিন গোল করা স্ট্রাইকার মানভীর সিং মিস করেন ১৮ ও ৪৭ মিনিটে। দুইবারই তার দু’টি হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৩২ মিনিটে শট মারেন বাইরে। ৭৯ মিনিটেও ব্যর্থ তিনি। এ ছাড়া ২৪ ও ৩০ মিনিটে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি আশিক কুরুনিয়া এবং ফারুক হাজি । মালদ্বীপের ক্রোয়েশিয়ান কোচ পিটার সেগার্ট ফাইনাল পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আমরা প্রথমে একটি গোল দিতে পারলে এরপর ব্যবধান বাড়বে। ৬৬ মিনিটে সেই কাজটিই করলেন আলী ফাসির। হামজা মোহাম্মদের ডিফেন্স চেরা থ্রু পাস থেকে বল পান আলী ফাসির। এরপর গতিতে ঢুকে পড়ে আগুয়ান গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে আস্তে বল ছেড়ে দেন পোস্টের উদ্দেশে। সে বল ভারতীয় ডিফেন্ডারের সব সচেষ্টা ব্যর্থ করে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় জালে। ৮৩ মিনিটে পরিকল্পিত কাউন্টার অ্যাটাক থেকে স্কোর লাইন ৩-০ করার সুযোগ হারান ইব্রাহিম ওয়াহেদ। ফাঁকায় বল পেয়েও তার নেয়া শট যায় পোস্টে বাতাস দিয়ে।
৯২ মিনিটে ভারত ব্যবধান কমায় সুমিত পাসির গোলে। ৯৪ মিনিটে আলী ফাসির বিপক্ষ কিপারকে একা পেয়েও বল তার হাতে তুলে দিয়ে ব্যর্থ হন ব্যবধান বাড়াতে। এরপরেই রেফারির খেলা শেষের বাঁশি এবং উল্লাস মালদ্বীপবাসীর।
টুর্নামেন্ট সেরা মালদ্বীপের গোলরক্ষক : মালদ্বীপ শুধু সাফের ট্রফিই জয় করেনি। সাথে তাদের দুই ফুটবলার জিতেছে দু’টি পুরস্কার। এবারের সাফের সেরা ফুটবলার হয়েছেন তাদের গোলরক্ষক মোহাম্মদ ফয়সাল। গ্রুপ পর্বে তিনি দুইবার পরাস্ত হলেও সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে মিলে মাত্র একবার তার পেছনে বল গেছে। ফলে তিনিই সেরা খেলোয়াড়ের ১০ হাজার ডলার পুরস্কার পান। তাদের ইব্রাহিম হুসেন হয়েছেন ফাইনাল সেরা। আর তিন গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা পুরস্কার পেয়েছেন ভারতের মানভির সিং। তিনি পেয়েছেন সাড়ে সাত হাজার ডলার। আর ফেয়ার প্লে-ট্রফি পেয়েছে ভুটানের ভান্ডারে।
এ দিকে গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপের বিপক্ষে ২-০তে জিতলেও ফাইনালে তাদের কাছে হারের কারণ ব্যাখ্যা করে ভারতের কোচ স্টিফেন কনস্টান্টিন বলেন, আমাদের অনভিজ্ঞ ফুটবলারেরা ফাইনালে আগের ম্যাচগুলোর মতো খেলতে পারেনি। তবে এদের ভবিষ্যৎ ভালো। এদের নিয়ে আমি গর্বিত। তিনি জানান, এই আসরে আমরা চারজন সিনিয়র ফুটবলার ছাড়া এসেছি। এটা আমাদের জন্য অভিজ্ঞতা। আর ফাইনালে আমরা গোল খেয়েছি দু’টি ছোট ভুলের জন্য। একই সাথে মালদ্বীপের ভালো খেলার প্রশংসা করেন তিনি।
অন্য দিকে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে ঢুকেই মাতিয়ে দিলেন মালদ্বীপের ক্রোয়েশিয়ান কোচ পিটার সেগার্ট। খুব উৎফুল্ল তিনি। এক অর্থে তারও প্রতিশোধ। এটা তিনি লুকানওনি। গত সাফে ফাইনালে তার দল আফগানিস্তান এই ভারতের কাছে হেরেছিল বাজে রেফারিংয়ের কারণে। আফগান ফুটবলাররা সেই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাকে ফোন দিয়েছিল বলে জানান তিনি। তাদের কথাও স্মরণ করলেন এই কোচ।
এরপর সেগার্ট যোগ করেন, ‘গত মার্চে আমি মালদ্বীপের দায়িত্ব নেয়ার পর ফুটবলারদের বলেছিলাম, আমি এসেছি সাফ জেতার জন্য। তখন কেউ কেউ হেসেছিল। এখন এই সাফল্য মালদ্বীপবাসীর জন্য।’ একই সাথে তথ্য দেন, প্রথম ক্রোয়েশিয়ান হিসেবে জয় করলাম চ্যাম্পিয়নশিপ।
তার মতে, আমরা ২০ ঘণ্টা ভারতের ম্যাচ ভিডিও দেখে তাদের ডান দিকের দুর্বলতা খুঁজে বের করি। ফাইনালে সে মোতাবেকই এই পজিশনে গতিসম্পন্ন ফুটবলার খেলিয়েছি। ফুটবলাররা দিয়েছে শতভাগ। আমার এই ফুটবলারদের বয়স অনূর্ধ্ব-২৩ এর মধ্যে এবং তারা সেমি প্রফেশনাল। জানান, আমরা কার্যকর ফুটবল খেলেছি, যা এবারের বিশ্বকাপে করেছে ফ্রান্স। তিনি যোগ করেন, গ্রুপ পর্বে ভিন্ন কৌশল ছিল। কিন্তু নকআউটে ভিন্ন কৌশল, ভিন্ন ফুটবলার। এটাই সাফল্যের নেপথ্য। তাদেরকে ফাইনালে লিড নেয়ার পর নির্দেশ দিয়েছি আরো এক গোল দিতে হবে, তা তারা করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement