২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বুলগেরিয়ার অনেক গ্রাম জনশূন্য হয়ে গেছে

জনসংখ্যা কমানোর ভয়ঙ্কর ফল-৩
বুলগেরিয়ার একটি এলাকার একমাত্র লোক - ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত জনসংখ্যা কমছে ইউরোপের বুলগেরিয়ায়। ১৯৯০ সালের পর থেকে ইতোমধ্যে এ দেশটির জনসংখ্যা পাঁচ ভাগের এক ভাগ কমে গেছে। মানুষের অভাবে বুলগেরিয়ার অনেক গ্রাম, অনেক বাড়িঘর পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। কোনো কোনো পাড়া ও গ্রামে মাত্র এক থেকে ১৩ জন মানুষ রয়েছেন নিঃসঙ্গ অবস্থায়। ১৯৮৯ সালে বুলগেরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ৯০ লাখ। বর্তমানে তা কমে হয়েছে ৭০ লাখ ৮৫ হাজার। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০৫০ সালে এটা মাত্র ৫২ লাখে নেমে আসবে। আর বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে বুলগেরিয়া হবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত জনসংখ্যা হ্রাসের দেশ।
গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের বিবিসি নিউজে বুলগেরিয়ার জনসংখ্যা হ্রাস বিষয়ে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

বুলগেরিয়ার পশ্চিম প্রদেশ পানিকের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে ৩০ বছর বয়সী স্টয়ান এভটিমভ বলেন, তার সব বন্ধু, যাদের সাথে তিনি বড় হয়েছেন তারা অনেক আগে কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে শহরে। এ গ্রামের ইভান নামে আরেক তরুণ জানান, আমরাও হয়তো আর এ গ্রামে থাকতে পারব না। বিয়ের জন্য এখানে কোনো মেয়ে পাওয়া যাবে না। কেবল শহরে কাউকে পাওয়া যেতে পারে। গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া আমার জন্য খুবই কষ্টের এবং কঠিন হবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো সেটাই করতে হবে। বুলগেরিয়ায় জনসংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে প্রধান দুটি কারণ হলো কাজের সন্ধানে তরুণদের দেশ ত্যাগ এবং নি¤œ জন্মহার।

স্টেফকা বলেন, সর্বশেষ ১২ বছর আগে পানিক গ্রামে একটি শিশু জন্ম নিয়েছিল। সেই ছোট শিশু এবং তার মা এখন সাইপ্রাসে থাকে। স্টেফকার দুই সন্তানও শহরে চলে গেছে। স্টেফকা একটি দোকান চালান এবং তার আশঙ্কা মানুষের অভাবে তার দোকানও বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রামের অন্য সব দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুল, অফিস এমনকি বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।

কালোটিনসি গ্রামের ৭০ বছর বয়সী বয়ান বলেন, এক সময় আমাদের গ্রামে ৬ শ’ মানুষ বাস করত। এখন আছে মাত্র ১৩ জন। বাকিদের কেউ মারা গেছে আর কেউ শহরে চলে গেছে।
এসমিরভ গ্রামে পাহাড়ি একটি পথের পাশে অপেক্ষা করছে বৃদ্ধাগ্রানি। ওই সড়কে তিনি ছাড়া আর কেউ বাস করেন না। তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন একটি ভ্রাম্যমাণ দোকানের। একটি গাড়িতে করে একটি দোকান সপ্তাহে এক দিন আসে এ এলাকার মানুষের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির জন্য। এ ছাড়া তাদের জিনিসপত্র কেনার আর কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, একসময় এ গ্রামে মানুষে ভরপুর ছিল। তরুণ থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ ছিল। আমি যেখানে বসে আছি এখানে অনেক মানুষের বিচরণ ছিল। এ ব্যাপারে নাচের উৎসব হতো। এখন এ গ্রামে কেউ নেই। আমি যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি এ রাস্তার পাশে অনেক ঘর ছিল, অনেক মানুষ ছিল। এখন আমি ছাড়া আর কেউ এখানে বাস করে না।

আপনার কি একা লাগে নাÑ এ প্রশ্ন করতেই চোখের পানি ফেলে এ বৃদ্ধা বলেন, অবশ্যই আমি নিঃসঙ্গ এবং এটা খুবই কষ্টের।
ভ্রাম্যমাণ যে দোকানটি গ্রামে আসে সেটি আটানাস ও লিলি দম্পতি পরিচালনা করেন। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্রের সাথে কিছু ওষুধও তারা আনেন। গত ১০ বছরে কোনো দিন তারা নিয়ম করে গ্রামে আসা বাদ দেননি এমনকি শীতের সময় রাস্তায় বরফ জমলেও তারা আসেন। ভ্রাম্যমাণ দোকানি লিলি বলেন, গ্রামে কিছু লোক আছে। তারা সবাই আমাদের বন্ধু হয়ে গেছেন। তারা চেষ্টা করেন গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য কিছু করার। যেহেতু মানুষ খুব কম তাই বিক্রি এবং লাভও খুব কম।

লিলি বলেন, আমাদের ক্রেতারা সবাই বাড়ির সামনে নির্দিষ্ট সময়ে দাঁড়িয়ে থাকেন আমাদের অপেক্ষায়। শীতের সময় আমরা যখন কোনো বাড়ির সামনে আমাদের পরিচিত ক্রেতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে না দেখি তখন আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি। একবার আমরা এসে দেখি একটি বাড়িতে একজন মাত্র মানুষ ঘরে পড়ে আছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বুলগেরিয়ার জনসংখ্যা বাড়াতে সরকার বিনামূল্যে নানা ধরনের সেবাসহ অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে আদি জনগোষ্ঠীর যারা বিদেশে চলে গেছে তাদের গ্রামে ফেরাতে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ আসছে না। এ সত্ত্বেও বুলগেরিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ভ্যালেরি সিমোনভ বিদেশীদের বুলগেরিয়ায় স্থান দেয়ার ব্যাপারে কঠোর বিরোধী। বিদেশীরা যাতে তাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তিনি তুরস্ক সীমান্তে ১৬০ মাইল দীর্ঘ বেড়া নির্মাণ করছেন। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালে বুলগেরিয়া মাত্র ৫০ জন অভিবাসী গ্রহণ করেছে যারা উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে গিয়েছে।

কালোতিনসি গ্রামের বয়ান বলেন, আমাদের পরিত্যক্ত করা হয়েছে। সবাই আমাদের পরিত্যাগ করছে। শাসক থেকে শুরু করে ঈশ্বর পর্যন্ত। রাজনীতিবিদেরা আমাদের জন্য কিছু করবে না। তারা আছে তাদের স্বার্থ নিয়ে। গ্রামের মানুষ বিশেষ করে বয়ষ্কদের বিষয়ে তাদের কোনো নজর নেই। এমনকি তরুণদের বিষয়েও তাদের নজর নেই। কারণ তারা যায় বিদেশে। তাই আমাদের আশঙ্কা বুলগেরিয়া নামক দেশটি এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

গত ১১ জুন লন্ডনের ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বুলগেরিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গরিব। বুলগেরিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল। এখানার ব্রাটসা একসময় একটি সমৃদ্ধ শিল্পনগরী ছিল। এখন সে গৌরব হারিয়েছে শহরটি। কাজের জন্য দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। আর লোকজন বলছে কাজ নেই। তারা খুবই অসুখী। প্রতি বছর দুই হাজার করে মানুষ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। শহরের মেয়র কালিন কালিনভ বলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে শহরটি প্রায় জনশূন্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি

সকল