২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ভিআইপি হাজী’ কেবল নামেই!

হজ এজেন্সির অসাধু ব্যবসা
-

হজ এজেন্সিগুলো প্রতি বছরই কয়েক হাজার বাংলাদেশীকে ‘ভিআইপি’ মর্যাদায় বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে যায়। এ জন্য আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। কিন্তু বিশাল প্রত্যাশা নিয়ে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছে তারা দেখেন সবার জন্য সমান ব্যবস্থা। বাড়তি টাকা খরচ করে উন্নত সেবা নেয়ার সুযোগ থাকলেও অধিকাংশ হজ এজেন্সি এ কাজটি না করে যেনতেন উপায়ে উপরি টাকা হাতিয়ে নেয়। এ নিয়ে হাজীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হলেও অভিযুক্তদের দাবি, ‘ভিআইপি হাজী’ বলে কোনো কিছু নেই।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরিবারের সস্যদের নিয়ে চলতি বছর হজ করতে যান দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী-শিল্পপতি। সংশ্লিষ্ট এজেন্সির সাথে তার চুক্তি ছিল ভিভিআইপি সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। বিমানবন্দর থেকে লেটেস্ট মডেলের বিলাসবহুল গাড়িতে করে হোটেলে নেয়া হবে। থাকতে দেয়া হবে পাঁচতারকা হোটেলে। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনে এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াতে দেয়া হবে বিলাসবহুল গাড়ি। মিনা-মুজদালিফা-আরাফায় অবস্থানকালে দেয়া হবে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট। কিন্তু এর সবই ছিল কেবলই প্রতিশ্রুতি। নিজের এবং হজ এজেন্সি নাম উল্লেখ না করার শর্তে ওই ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, বিলাসবহুল তো দূরে থাকে, বিমানবন্দরে আমাদেরকে রিসিভ করতে এজেন্সির কোনো লোকই আসেনি। অন্য এক এজেন্সির গাড়িতে একটা ভাঙা বাসে করে আমাদের নিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হলো। আমাদের জন্য হুইলচেয়ার নিয়ে লোক থাকার কথা ছিল, কাউকেই পেলাম না। কোনোমতে হোটেলে গেলাম। হোটেলে আমাদের তিনটা অ্যাডাল্ট বেড দেয়ার কথা, দিয়েছে দুইটা। বাড়তি একটিা ¯িপ্রং বেড দেয়া হলো, যা থেকে পড়ে আমার ভাঙা পা আবার ভাঙল। হোটেল বুক করার কথা ১০ দিনের, করা হয়েছে নয় দিনের। বলুন তো দেখি, আরেক দিন আমরা কোথায় থাকি? রাস্তায়ও তো জায়গা নেই!
তিনি বলেন, ভোর রাত থেকে ডাকাডাকি করছে অথচ বাসের খবর নেই। মিনায় গিয়ে দেখি ৫০ জনের তাঁবুতে ১২০-১২৫ জন গাদাগাদি করে আছেন। বিশেষ বেড তো দূরের কথা, আমাদের জন্য কোনো জায়গাই নেই। বাথরুমে বিশাল লাইন। আরাফার অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও আরো ভালো হওয়ার দরকার ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, হজ উপলক্ষে সৌদি সরকার হাজার হাজার কোটি ডলার আয় করলেও আল্লাহর মেহমানদের প্রতি তারা উপযুক্ত ব্যবহার করে না। তবে সৌদি আরবের সাধারণ মানুষ হাজীদের সেবায় অনেক কিছুই করেন বলে জানান তিনি।
বিভিন্ন পর্যায়ের হাজী, এজেন্সি-মালিক এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, কাগজে-কলমে ভিআইপি হাজী বলতে কিছু না থাকলেও প্রতি বছরই হাজার হাজার হাজী বাড়তি টাকা দিয়ে হজ পালন করতে যান এবং প্রতারিত হন। বাড়তি টাকা খরচ করে ভালো গাড়িতে যাতায়াত করানো, তাঁবুতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং হুইল চেয়ারসহ সবকিছুই করা যায়। অভিযোগ রয়েছে, প্রতারণার আশ্রয় নেয়া অনেক এজেন্সি বাড়তি খরচ বাঁচাতে সৌদি মোয়াল্লেম কিংবা বাংলাদেশ মিশনের লোকদের কাছে ভিআইপি হাজীদের সম্পর্কে কোনো তথ্যই দেয়া না। ফলে হাজীরা উপযুক্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এজেন্সি-মালিক নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারিভাবে তিন লাখ ৩৮ হাজার ও তিন লাখ ৮৬ হাজার টাকার দু’টি হজ প্যাকেজ থাকলেও অনেক এজেন্সিই বাড়তি টাকা নিয়ে হাজীদের জন্য উন্নত সেবা নিশ্চিত করেন। সে ক্ষেত্রে হাজীপ্রতি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা নেয়া হয় বলে জানান তিনি। তবে অনেক এজেন্সি বায়তুল্লাহ শরিফের ৫০০ মিটারের মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখে দেড় হাজার মিটার দূরে। বুফে খাওয়ানোর কথা বলে হাজীদের নিয়ে যায়; কিন্তু খাবার রুমে পাঠিয়ে দেয় ডাল আর সবজি। রুমের মধ্যে অতিরিক্ত লোক রাখে, হারিয়ে গেলেও হাজীদের খবর রাখে না, উপযুক্ত গাইড নিয়োগ করে না, সাইট-সিয়িংয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়; কিন্তু করায় না। এমন কিছু এজেন্সির কারণে পুরো সেক্টরের বদনাম হয় বলেও দাবি করেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, হজ এজেন্সির অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অনেক বাংলাদেশী হাজী। পাহাড়-পর্বতবেষ্টিত মক্কা ও মিনায় পথ হারানো, প্রয়োজনীয় স্থানে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় রাত কাটানোর মতো গুরুতর অবহেলার ঘটনাও ঘটেছে অনেক বাংলাদেশী হাজির ভাগ্যে। বাংলাদেশ হজ মিশনের বারান্দায় গভীর রাতেও এসব হাজীকে থাকার জায়গা খুঁজে নিতে হয়েছে। হাজীদের কাবা শরিফের কাছাকাছি বাড়িতে না রাখাসহ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগে ৫০টি বেসরকারি হজ এজেন্সিকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ হজ মিশন ও সৌদি কর্তৃপক্ষ।
এ বছর বিশ্বের ১৬৮টি দেশের ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৭৫ জন মুসলমান পবিত্র হজ পালন করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশী হাজীর সংখ্যা একে লাখ ২৭ হাজার ২৯৮ জন। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ছয় হাজার ৭৯৮ জন হজে গেছেন। বাকিরা গেছেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। এ বছর ১০২ জন বাংলাদেশী হাজী মৃত্যুবরণ করেন বলে জানা গেছে। হজ এজেন্সিগুলোর অবহেলাসহ নানা কারণে এ বছর হজে যেতে পারেননি ৬০৬ জন। এ সময় কিছু এজেন্সির উদাসীনতার কারণে রিপ্লেসমেন্ট কোটাও পূরণ হয়নি বলে জানা গেছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরে আসবেন এবারের হাজীরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ছোট দেশ কাতার অর্থনীতি ও কূটনীতিতে যেভাবে এত এগোল আশুলিয়ায় ছিনতাইকারীর হামলায় আহত নারীর মৃত্যু ‘মুসলিমদের সম্পদ পুনর্বণ্টন’ অভিযোগ মোদির, এফআইআর সিপিএমের প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বিখ্যাত চালকবিহীনবিমানের আবিষ্কারক কটিয়াদীতে আসছেন গাজার গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পেকুয়ায় জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১৪ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ : টিআইবি লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ইরান সমর্থিত যোদ্ধা নিহত জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ

সকল