২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অসচেতনতাকে ডেঙ্গু বৃদ্ধির জন্য দায়ী করছে সিটি করপোরেশন

ঢাকায় মশার উপদ্রব কমেনি। তাই মশাবাহিত রোগ চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। অথচ মশার প্রজননে সহায়ক কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরে আছে রাজধানীর অনেক জলাশয়। ছবিটি গুলশান লেক থেকে তোলা : নূর হোসেন পিপুল -

রাজধানীতে সারা বছরই মশার অত্যাচার চলছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মশা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে এ বছর ৪৭ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখেছে। দফায় দফায় বিশেষ কর্মসূচি পালন করছে তারা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। বরং দিনকে দিন মশার অত্যাচার বেড়েই চলেছে। এ কারণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে অতি সম্প্রতি। সিটি করপোরেশন বলছে, ময়লা পানিতে স্বাভাবিক মশার উৎপত্তি হলেও ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয়, যা মানুষের ঘর-অফিসেই রয়েছে। এ মশা শুধু ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের সচেতনতা।
গত বছর রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ দীর্ঘ রোগভোগ করেছেন। এ জন্য এবার আগে থেকেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশন মাঠে নেমেছে। দফায় দফায় বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে তারা। এমনকি বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও মশার লার্ভা ধ্বংস করা হচ্ছে। যে বাসায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে সেখানে ধ্বংস করার পাশাপাশি নাগরিকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এডিস মশার জীবাণু থাকলে ওই বাসার মালিককে সতর্ক করা হচ্ছে। এত কিছুর পরও কাজে আসছে না মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান। রাজধানীতে নতুন করে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। আস্তে আস্তে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে এ রোগ। বিভিন্ন হাসপাতালের বিছানায় এখন ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ ছাড়া এ সময়ে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে মোট তিন হাজার ৭১২ জন।
মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সারা বছর ফগার মেশিন দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ওষুধ ছিটিয়ে থাকে। এ ছাড়া ড্রেনগুলোতেও ওষুধ প্রয়োগ করে তারা। এর পরও মাঝে মধ্যেই বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয় সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গত ২৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত সংস্থাটির পাঁচটি অঞ্চলের ৫৭টি ওয়ার্ডে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রামের পাশাপাশি একটি জরিপও চালায়। জরিপে ধানমন্ডি, কলাবাগান, সেগুনবাগিচা ও মন্ত্রিপাড়া এলাকার ৪৫ শতাংশ বাড়িতেই ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। আর ডিএসসিসি এলাকায় গড়ে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায় প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ বাড়িতে।
ডিএসসিসির পক্ষ থেকে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে আবার ১৫ দিনব্যাপী বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলছে। এ অভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকা ও ড্রেনে ওষুধ প্রয়োগের পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়েও মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে।
এ জন্য স্থানীয় কাউন্সিলের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি কমিটির পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ সদস্যের একটি টিম কাজ করছে।
ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার দিনে মোট চার হাজার ৬৯১টি বাড়ি পরিদর্শন করে টিম। এসব বাড়ির মধ্যে ১৮৬টি বাড়িতে এডিস মশার জীবাণু পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অঞ্চল-২ তথা খিলগাঁও-বাসাবো এলাকা এবং অঞ্চল-৫ তথা সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী এলাকায় এডিস মশার জীবাণু সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এ দু’টি অঞ্চলের ৬.৭ ভাগ বাড়িতে এডিস মশার জীবাণু পাওয়া যায়। এ ছাড়া সব মিলিয়ে ৪ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গু রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
গত ৩ সেপ্টেম্বর পক্ষকালব্যাপী ক্র্যাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধনকালে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছিলেন, দু-তিন বছরের চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে এ জন্য আতঙ্কিত না হয়ে নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ৫৭টি ওয়ার্ডে একযোগে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলবে। আমাদের প্রতিনিধিরা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা পেলে তা ধ্বংস করে দিয়ে আসবে। পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন করবে। আপনার একটু সচেতনতা আপনার প্রিয়জনের জীবনকে রক্ষা করতে পারবে।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাহউদ্দীন গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা এ মওসুমেই তিন দফা বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালিয়েছি। মানুষের বাড়িতে গিয়ে জীবাণু ধ্বংসসহ সচেতন করছি। কিন্তু বারবার কারো বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয় না। তা ছাড়া অনেক বাড়ি মালিক আমাদের প্রতিনিধিদের বাধাও দেন। মশা নিয়ন্ত্রণে জনগণকেই আগে সচেতন হতে হবে। কারণ ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয়, যার উৎপাদনস্থল অফিস ও বাসাবাড়িতেই থাকে। তিনি বলেন, আমরা জনগণের কাছ থেকে যে সাড়া আশা করেছিলাম, তা পাচ্ছি না। এ জন্য আমরা অনেকটা হতাশ।
এ দিকে মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়ও দফায় দফায় বিশেষ কর্মসূচি চলছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের নেতৃত্বে এ-সংক্রান্ত কমিটি মশার ওষুধ প্রয়োগ ও জনগণকে সচেতন করতে কাজ করছে। কিন্তু তাতেও কমছে না মশার অত্যাচার। এ জন্য গতকাল থেকে ডিএনসিসি এলাকায় আবার বিশেষ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন, নগরবাসীকে সচেতন করতে যা যা করার তার সব কার্যক্রমই আমরা নিয়েছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতা কার্যক্রম চলছে। মশক কর্মীদের কাজে উদ্বুদ্ধ করতেও কাজ চলছে। তবে জনগণকে আরো সচেতন হতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement