২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮

দুুর্নীতিকে আরো নিরাপদ ও উৎসাহিত করবে

-

ফৌজদারি ও দুর্নীতির মামলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতার করতে সরকারের পূর্বানুমতির বিধান যুক্ত করে গতকাল সোমবার ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’র খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সরকারি কাজে কর্মচারীদের দুর্নীতি আরো উৎসাহিত করতে এমন বিধান রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আইনটি প্রণয়ন হলে দেশে সাংবিধানিক বৈষম্য সৃষ্টি হবে। কারণ এ আইনে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে পাশ কাটিয়ে শুধু সরকারি কর্মচারীদের একটি বিশেষ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে এ বিধান রাখা হয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য পড়া উচিত। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমাদের ছেলেমেয়ে, ভাইবোন ও আত্মীয়। তাদের আচরণ দেশের কল্যাণের জন্য হওয়া উচিত। তাদেরও দায়বদ্ধতা থাকা উচিত।
আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর এ বক্তব্য থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়মুক্তি দেয়া, বিশেষ সুবিধা দেয়া বা গ্রেফতারের আগে অনুমোদনের নেয়া কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। এটি সাধারণ নাগরিকদের সাথে বৈষম্য সৃষ্টি করে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, যদি গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সঠিক হয় তবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে পূর্বানুমতি গ্রহণের যে বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে, তা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের সততা, স্বচ্ছতা, উন্নততর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিতের পরিপন্থী ও উদ্বেগজনক হবে।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনজনিত কারণে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে চার্জশিট দেয়ার আগে গ্রেফতার করতে সরকারের অনুমতি গ্রহণের যে বিধান রাখা হয়েছে তা বৈষম্যমূলক ও সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী। বিশেষ করে সরকারি খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সরকারি অঙ্গীকারের সাথে ধারাটি এক দিকে সাংঘর্ষিক, অন্য দিকে এর মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। তাই ধারাটি বাতিল করতে হবে।
এ ছাড়া দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত পরিপূর্ণ খসড়া আইনটি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের আগে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সবার জন্য উন্মুক্ত করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সব অংশীজনের মতামত গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল নয়া দিগন্তকে বলেন, এ সরকারের আমলে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক লুটের মতো ঘটনা ঘটেছে। শেয়ার মার্কেট, রাস্তার নির্মাণকাজের ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আমরা যতটুকু জানি দুর্নীতির প্রক্রিয়ার সাথে সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ থাকে। তারা না থাকলে এমন বড় দুর্নীতি করা সম্ভব হয় না। এমন সময় যদি এ আইন করা হয় যেটাতে দুর্নীতিবাজদের ধরতে অগ্রিম অনুমোদন লাগবে তখন মনে হয় এটি দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি আরো সহজ করার জন্য এটি করা হচ্ছে। এটি দুর্নীতিকে আরো সহজ ও নিরাপদ করবে।
‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দক্ষ, জনবান্ধব, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক জনপ্রশাসন নিশ্চিতে খসড়া আইনটির বৈষম্যমূলক বিধান বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে টিআইবি বলেছে, এটি উন্নততর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিতের পরিপন্থী ও উদ্বেগজনক হবে।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষে বলেন, ওই আইন বাতিলের পাশাপাশি একই সাথে খসড়ায় মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় নিয়োগের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিতসহ অন্যান্য ইতিবাচক ধারা অন্তর্ভুক্তির সংবাদকে স্বাগত জানিয়েছে টিআইবি।
তিনি বলেন, যদি গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদটি সঠিক হয়, তবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত খসড়া ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেফতারে পূর্বানুমতি গ্রহণের যে বিধান সন্নিবেশিত হয়েছে, তা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের সততা, স্বচ্ছতা, উন্নততর পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন নিশ্চিতের পরিপন্থী ও উদ্বেগজনক হবে।
ড. জামান বলেন, দায়িত্ব পালনজনিত কারণে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হলে চার্জশিট দেয়ার আগে গ্রেফতার করতে সরকারের অনুমতি গ্রহণের যে বিধান রাখা হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক ও সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী। বিশেষ করে সরকারি খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সরকারি অঙ্গীকারের সাথে ধারাটি এক দিকে সাংঘর্ষিক, অন্য দিকে এর মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে খর্ব করার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। তাই ধারাটি বাতিল করতে হবে।
এ ছাড়া দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত পরিপূর্ণ খসড়া আইনটি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের আগে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সবার জন্য উন্মুক্ত করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ সব অংশীজনের মতামত গ্রহণের দাবি জানান ড. জামান।

 


আরো সংবাদ



premium cement