২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের ফিরতে হবে রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসেবে

পরিচয়পত্র থেকে নাগরিকত্ব বাদ
-

রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসেবেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরতে হবে। কক্সবাজারে নিবন্ধনের পর রোহিঙ্গাদের দেয়া পরিচয়পত্র থেকে ‘মিয়ানমার নাগরিক’ শব্দটি তুলে দেবে বাংলাদেশ সরকার। এর পরিবর্তে লেখা হবে ‘রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ’।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে সম্প্রতি মিয়ানমার সফর করা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এ ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারকে সম্মতি দিয়েছে। গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া চুক্তির ভাষা অনুযায়ী পরিচয়পত্রে এই সংশোধনী আনতে সম্মত হয়েছে প্রতিনিধিদল। চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের ‘রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
নেইপিডোতে গত ১০ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর দফতরের ইউনিয়ন মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিজ হাতে পূরণ করতে হবে। এনভিসির পাশাপাশি পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য বাস্তুচ্যুত মানুষদের ফিঙ্গার প্রিন্ট ও স্বাক্ষর নেয়া হবে। এনভিসিতে রোহিঙ্গাদের পরিচয় ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ থাকায় তা পূরণে রোহিঙ্গাদের আপত্তি রয়েছে।
এর আগে মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসেবে রোহিঙ্গাদের এনভিসি পূরণের আহ্বান জানান। এনভিসিতে পরিচয় ‘বাঙালি’ হিসেবে উল্লেখ থাকায় রোহিঙ্গারা প্রতিবাদ জানান।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি চায়। রাখাইন সঙ্কট নিরসনে জাতিসঙ্ঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনও সঙ্কটের মূল কারণ দূরীকরণে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। তবে মিয়ানমার সরকার আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক-কোনোভাবেই রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণের ঘোর বিরোধী। এর মাধ্যমে নাগরিক হিসেবে রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি কেড়ে নিয়েছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতাদের আমন্ত্রণ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী মিয়ানমারের আন্তঃধর্মীয় (ইন্টারফেইথ) নেতাদের কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। মিয়ানমার ইন্টারফেইথ ডায়ালগ গ্রুপের ডেপুটি চেয়ার উ মাং শিন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার মিয়ানমার টাইমসের খবরে বলা হয়, একটি স্বাধীন নাগরিক গ্রুপ হিসেবে মিয়ানমারের আন্তঃধর্মীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর জন্য মাহমুদ আলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই গ্রুপ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারবে।
এ দিকে গত সোমবার ঢাকায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাখাইন ফিরে যেতে রোহিঙ্গাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার জন্য বাংলাদেশে প্রতিনিধিদল পাঠাবে মিয়ানমার। বিশ্বের চাপে মিয়ানমারের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘকে অন্তর্ভুক্ত করা এ ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের যেনতেন নয়, বরং টেকসই প্রত্যাবাসন চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের অবকাঠামোগত প্রস্তুতি দেখে এসেছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সাথে গত ২৩ নভেম্বর চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। নেইপিডোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এ সময় চুক্তির শর্ত নিয়ে মিয়ানমারের সাথে দরকষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছে। চুক্তি সইয়ের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দফায় দফায় মিয়ানমারের নানাবিধ শর্তের বেড়াজালে নির্ধারিত সময়ের সাত মাস পরও তালিকাভুক্ত একজন রোহিঙ্গাও রাখাইনে ফিরে যেতে পারেনি।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমারকে আট হাজার ৩২ জনের তালিকা দেয় বাংলাদেশ। এই তালিকা থেকে মিয়ানমার এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গার ব্যাপারে ছাড়পত্র পাঠিয়েছে। বাকিদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশে কন্স্যুলার অ্যাকসেস চেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি। চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পরে আসা ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আসা সাত লাখ রোহিঙ্গাকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যোগ্য বিবেচনা করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল