২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কমলাপুরে টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন

বাসের টিকিট ছাড়া ফিরলেন অনেকেই
ঈদে অগ্রিম টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের ভিড় : নয়া দিগন্ত -

ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির তৃতীয় দিনে গতকাল ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের ব্যাপক সমাগম ছিল। এদিন টিকিট প্রত্যাশীদের লাইন কাউন্টারের সামনে থেকে শুরু হয়ে বাইরে চলে আসে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে কমলাপুর স্টেশনের কাউন্টারগুলোর সামনে টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল আগের দুই দিনের চেয়ে বেশি। বেলা বৃদ্ধির সাথে সাথে কাউন্টারের সামনে কিছুটা ফাঁকা হতে থাকে। তবে টিকিট প্রত্যাশীদের ভোগান্তিরও শেষ ছিল না।
অনেকেই অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাউন্টারের সামনে গিয়ে টিকিট চাইলে জানানো হয় টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তাদের দাবি, রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই বেশির ভাগ টিকিট নিজেরা বা অন্যের নামে কেটে রেখেছেন। ফলে লাইনে থাকা লোকজন কাক্সিক্ষত টিকিট না পেয়েই ফিরে গেছেন। গতকাল বিকেল ৪টায় ৩ নম্বর কাউন্টারের লাইনে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন অর্ধশতাধিক মানুষ। তাদেরই একজন জানান, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে কাউন্টারের সামনে গেলে ভেতর থেকে এক মহিলা কর্মচারী এসে একজনের সাথে মোবাইলে কথা বলতে থাকেন আর কম্পিউটারের সূবর্ণ এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে থাকেন। পরে আরো কয়েকজন লোক ভেতর থেকে এসে এভাবেই নিজেদের টিকিট আগে কেটে রাখেন। অথচ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানো লোকজন টিকিট না পেয়ে ফিরে যান।
এ দিকে কমলাপুর রেল স্টেশনে নারীদের দু’টি কাউন্টারের মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে লাইনে থাকা টিকিটপ্রত্যাশীদের। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ করেন কয়েকজন নারী। কয়েক হাজার টিকিটপ্রত্যাশীর মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশই ছিলেন নারী। কমলাপুরে আগাম টিকিট বিক্রির ছাব্বিশটি কাউন্টারের মধ্যে নারীদের জন্য বরাদ্দ মাত্র দু’টি। তার মধ্যে একটি কাউন্টার বেশির ভাগ সময় বন্ধ করে রাখায় লাইনে থাকা নারীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে নারী কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৭ ও ১৮ নম্বর কাউন্টার থেকে নারীদের টিকিট দেওার কথা থাকলেও ১৮ নম্বর কাউন্টারটি ছিল বন্ধ। আর ১৭ নম্বর কাউন্টার খোলা থাকলেও সেখানে ধীরগতিতে টিকিট বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই কাউন্টার থেকে ৭০ জনকে টিকিট দেয়া হয়। ততক্ষণে অপেক্ষায় থাকা নারীদের লাইন আরো দীর্ঘ হয়েছে। তাসনিম নামের এক টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, এখানে অনেকে গত রাতে, কেউ ভোররাতে এসেছেন। সবাই ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত। আশপাশে কোনো ওয়াশরুমও নেই যেখানে নারীরা যেতে পারেন। এরমধ্যে কাউন্টারে টিকিট দিচ্ছে খুব ধীরে। এভাবে আর পারছি না। আরো কয়েকজনের অভিযোগ, একজন একাধিক ব্যক্তির জন্য টিকিট কেনায় সময় বেশি লাগছে। সেই সাথে মাঝে মধ্যে কাউন্টারে বিক্রয়কর্মীও থাকেন না। কিছুক্ষণ পর পর উঠে চলে যান। তবে নারীদের এ অভিযোগ জানালে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বেলা ১১টার দিকে ১৮ নম্বর কাউন্টারটি খুলে দেন। এরপর টিকিট বিক্রিতে গতি আসে।
এ দিকে নারীদের মতো পুরুষেরাও টিকিট কিনেতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দ্রুতযান এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় কাউন্টারে এসেও বেলা ১০টা পর্যন্ত কাউন্টারে অপেক্ষা করে প্রত্যাশিত টিকিট পাননি ঠাকুরগাঁওয়ের আবুল কালাম আজাদ। হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, এসি, ননএসি কোনো টিকিটই পেলাম না। এখন দেখি অন্য কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। আগের দিনের মতো গতকালও টিকিট বিক্রির শুরুতেই এসি টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে জানানো হয় কাউন্টার থেকে।
লালমনিরহাট এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসান তাসদিক নামের একজন যাত্রী। লাইনের প্রথম দিকে থেকেও এসি টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, আধা ঘণ্টার মধ্যেই এসি টিকিট শেষ। লাইনের প্রথম দিকে থেকেও কাক্সিক্ষত টিকিট পেলাম না। আরো কয়েকজন টিকিটপ্রত্যাশীর সাথে কথা বললে একই অভিযোগ পাওয়া যায়।
আজ শনিবার দেয়া হবে ২০ আগস্ট যাত্রার অগ্রিম টিকিট। ওইদিনের টিকিট কেনার জন্য গতকাল দুপুর থেকেই কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে লাইনে অবস্থান নেন টিকিটপ্রত্যাশী অসংখ্য মানুষ। অনেকেই পত্রিকার কাগজ ফ্লোরে বিছিয়ে বসে পড়েন। কেউ কেউ শুয়ে বিশ্রামও নেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০ আগস্টের বেশির ভাগ টিকিটই শেষ হয়ে গেছে। ফলে আজকের টিকিটপ্রত্যাশীরা কাক্সিক্ষত টিকিট নাও পেতে পারেন।
কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, নারীদের জন্য মোট ৩টা কাউন্টার। একটা চলতি কাউন্টার থেকেও নারীদের টিকিট দেয়া হয়। এ কারণে অগ্রিম টিকিটের দুটো কাউন্টারের একটা বন্ধ রাখা হয়েছিল। চাহিদা বেশি থাকলে সেটা থেকেও টিকিট দেয়া হয়। গতকাল শুক্রবার ৩৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের ২৬ হাজার ৮৯৫টি টিকিট ছাড়া হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকিট দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
বাসের টিকিটের জন্য ভিড়
এদিকে ছুটির দিন থাকায় গতকাল শুক্রবার অনেকেই ছুটে গিয়েছিলেন বাস কাউন্টারগুলোতে; কিন্তু কাক্সিক্ষত দিন ও সময়ের টিকিট না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে বেশির ভাগ টিকিটপ্রত্যাশীকে। কেউ কেউ বিকল্প হিসেবে আশপাশের জেলার টিকিট নিয়েছেন। বিশেষ করে উত্তর-দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে এই সমস্যার মধ্যে বেশি পড়তে হচ্ছে। এ দিকে বাস কাউন্টারগুলো থেকে বলা হচ্ছে, বেশির ভাগ রুটের ১৮ থেকে ২১ তারিখের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। কিছু কিছু রুটের অল্পসংখ্যক টিকিট রয়েছে। গতকাল রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গাবতলী ঘুরে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল; কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে ৭ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন টার্মিনাল ও বাসের কাউন্টারগুলোতে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিনে কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় থাকলেও পরে তা কমে যায়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল অনলাইন ও বিভিন্ন অ্যাপস-ভিত্তিক কোম্পানি থেকে টিকিট সংগ্রহ করায় কাউন্টারে ভিড় কম হচ্ছে। কিন্তু গতকাল ছুটির দিন হওয়ায় হঠাৎ করেই কাউন্টারগুলোতে অগ্রিম টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় বেড়ে যায়। তাদের বেশির ভাগের চাহিদা ছিল ১৯, ২০ ও ২১ তারিখের টিকিটের। কিন্তু এই তারিখগুলোর টিকিট আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই টিকিট পাননি। আবার কেউ কেউ বিকল্প দিনেরও টিকিট নিয়েছেন।
গাবতলী বালুর মাঠে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও উপচেপড়া ভিড়। তবে বেশির ভাগ দিনের টিকিট না থাকায় হতাশ হয়ে অন্য বাসের কাউন্টারে যাচ্ছেন যাত্রীরা। আবার কেউ কেউ অন্য দিনের টিকিট সংগ্রহ করছেন।
শামসুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, তিনি যাবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কিন্তু দীর্ঘ সময় লাইনে থেকেও তিনি টিকিট পাননি। পরে বাধ্য হয়ে রাজশাহীর টিকিট নিয়েছেন। রাজশাহীতে নেমে সেখান থেকে চাঁপাইয়ে যাবেন। আবু কাউসার জানান, তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার ছুটি হবে ঈদের আগের দিন থেকে। তাই ঈদ যে দিন হবে তার আগের দিনের টিকিট কিনতে হবে তাকে। কিন্তু ঈদ ২১ তারিখ না ২২ তারিখ তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। অথচ ইতোমধ্যে সব তারিখের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তিনি কোন তারিখের টিকিট কিনবেন সেটাই বুঝতে পারছেন না। আরিফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, অনলাইনে টিকিট পাবেন বলে প্রথমে তিনি কাউন্টারে যাননি। এখন অনলাইন ও অ্যাপসগুলোতেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কাউন্টারে ছুটে গিয়ে সেখানেও কাক্সিক্ষত দিনের টিকিট না পেয়েই ফিরতে হচ্ছে তাকে।
হানিফ পরিবহনের জিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, চাহিদা বেশি থাকায় ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্টের টিকিট শেষ। ইতোমধ্যে কাউন্টারের সামনে নোটিশ টানিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। শ্যামলী কাউন্টার থেকে জানানো হয়, তাদের ১৯ ও ২০ তারিখের টিকিট শেষ। বাকি দিনগুলোর অল্পসংখ্যক টিকিট থাকলেও সেগুলো পেছনে। 


আরো সংবাদ



premium cement