২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সমাবেশের পর বিএনপিতে স্বস্তি শিগগিরই নতুন কর্মসূচি

সমাবেশের পর বিএনপিতে স্বস্তি শিগগিরই নতুন কর্মসূচি - ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে সমাবেশ করার পর স্বস্তি বোধ করছে বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। বহুদিন পর রাজপথে সমাবেশ করতে পারায় উচ্ছ্বসিত বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর রাজধানীতে কোনো সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। কিন্তু শুক্রবারের সমাবেশে শান্তিপূর্ণ ব্যাপক লোকসমাগমের মধ্য দিয়ে বিএনপির ঐক্যবদ্ধতা ফুটে উঠেছে। গত ছয় মাসে দলের পক্ষ থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা নয়া পল্টনে ৭ থেকে ৮ বার সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। তবে পুলিশের সায় না থাকায় সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। এতে রাজধানীতে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। এ জন্য সরকারের অনেক মন্ত্রী ও এমপি বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন করার কোনো মুরোদ নেই। এখন সমাবেশের লোকসমাগম প্রমাণ করে বিএনপির এখন নেতাকর্মী ও জনসমর্থন দুটোই রয়েছে। নেতাকর্মীদের মনোবল আরো চাঙ্গা করতে শিগগিরই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেবে বিএনপি, যাতে করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য হয়। বিএনপির সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ ফেসবুক লাইভ ও অন্যান্য মাধ্যমে লন্ডনে সরাসরি দেখেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ঢাকার নয়া পল্টনে সমাবেশ করেছিল বিএনপি। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি একটি মামলায় আদালত তাকে পাঁচ বছরের সাজা দিলে সেই দিন থেকে কারাবন্দী তিনি। তার মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে এলেও কোনো সমাবেশের অনুমতি পায়নি বিএনপি। সম্প্রতি তিনি গুরুতর অসুস্থ। ইউনাইটেড হাসপাতালে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। সেই দাবিতেই গত শুক্রবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি পায় দলটি। ওই স্বল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক লোকসমাগম হয় বিএনপির সমাবেশে।

শুক্রবারের সমাবেশে বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সংবলিত ব্যানার, প্লাকার্ড, ফেস্টুনসহ অংশ নেন। দুপুরেই সমাবেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে জমায়েত হন নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতারা দাবি করেছেন, সমাবেশে লক্ষাধিক লোকসমাগম হয়েছে। নয়া পল্টন এলাকার আশপাশে ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত এলাকা নেতাকর্মীদের পদভারে পরিপূর্ণ ছিল। সমাবেশে আসা সাধারণ নেতাকর্মীদের মুখে ছিল দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি। তারা বলছেন, নির্বাচনের আগে অবশ্যই বিএনপির চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শরীফুল আলম মনে করেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন পর্যায়ক্রমে আরো জোরদার করতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আরো জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে আন্দোলন কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্নভাবে নয় বরং ঐক্যবদ্ধভাবে নেতাকর্মীদের কাজে লাগাতে হবে। অবিলম্বে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কোনো অবস্থাতেই ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন আর হতে দেয়া যাবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সমাবেশে আসা ছাত্রদলের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে মাদার অব ডেমোক্র্যাসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করেছে অবৈধ সরকার। তারা আবারো একটি পাতানো নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু বেগম জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে কঠোর কর্মসূচি দিন। আগে দেশনেত্রীর মুক্তি, তারপর নির্বাচন।

ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান চৌধুরী পাপ্পু বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নেত্রীকে মুক্ত করে আনা হবে। বিএনপি গণতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বাসী, তাই কেন্দ্রীয় নেতারা যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেভাবেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। দেশের বর্তমান সঙ্কটময় মুহূর্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সমাবেশে বিএনপির বিপুল নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি তাদের আস্থা নেই। নেতাকর্মীর পাশাপাশি দেশবাসীর ভালোবাসা ও সমর্থন বিএনপির প্রতি রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর সমাবেশ করতে পেরে আমরা খুশি। হামলা-মামলার শিকার হয়েও সমাবেশে বিপুল নেতাকর্মীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক।
তিনি বলেন, সরকার দীর্ঘদিন সভা-সমাবেশ করতে না দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। দীর্ঘদিন পর সমাবেশ করতে পেরে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। সরকার যে মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে রেখেছে, আর এটা যে দেশের জনগণ বিশ্বাস করে তার প্রমাণ সমাবেশে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি। আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় তাও নেতাকর্মীরা বুঝতে পেরেছে। দুই-এক দিন আগে অনুমতি দিলে সমাবেশে আরো বেশি লোকসমাগম হতো। বিএনপি পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করবে। এভাবে দেশের জনগণের কাছে যাওয়া হবে। নতুন নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। এই সময়ের মধ্যেই সমাবেশে অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে এই অবৈধ সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। সরকার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে ফের একতরফা নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সে রকম নির্বাচন দেশের মাটিতে আর হবে না, হতে দেয়া হবে না। আসলে সমাবেশের পর সরকারের লোকেরা চিন্তায় পড়ে গেছে। তারা বিএনপির সমাবেশ দেখে উদ্বিগ্ন বলেই মনে হয়। কারণ এত হামলা-মামলা, গুম-খুনের পরও বিএনপির সমাবেশে যেভাবে লোকসমাগম হয়েছে তা রীতিমতো সরকারের মাথাব্যথার কারণ।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, লন্ডনে বসে শুক্রবারের সমাবেশ বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লাইভ ও অন্যান্য মাধ্যমে সরাসরি দেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই সমাবেশ দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে তিনি মনে করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যামবাজার ঘাটে লঞ্চে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট ‘আমার শিশু মেয়েটির যে সর্বনাশ সে করেছে’ বান্দরবানের ৩ উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজে মুসুল্লিদের ঢল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার : রিজভী চীনের দক্ষিণাঞ্চলীলের গুয়াংডংয়ে সর্বোচ্চ স্তরের বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মর্তুজা হাসান গ্রেফতার মুসলিম শ্রমিক হত্যায় হিন্দু নেতারা চুপ কেন : প্রশ্ন হেফাজত নেতা আজিজুল হকের সাভারে বুধবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে গাজা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে জনতার অবরোধ ভাঙতে টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি

সকল