২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এবারো পাসের হার জিপিএ ৫ কমেছে

এইচএসসির ফল প্রকাশ
এইচএসসিতে কাক্সিত ফল পেয়ে রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ভিকারুন নিসা নূন কলেজ শিক্ষার্থীদের উল্লাস : নয়া দিগন্ত -

এসএসসির পর এবারের এইচএসসিতেও ফল বিপর্যয় ঘটল। গতকাল এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা ২০১৮ সালের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলে পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমেছে। পাসের হার কমেছে গত বছরের চেয়ে ২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এ বছর পাস করেছে ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর এ হার ছিল ৬৮.৯১ শতাংশ। ৩৩.৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ বা ফেল করেছে এবারের পরীক্ষায়। দশ বোর্ড মিলে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। গত বছরের চেয়ে জিপিএ ৫ কমেছে ৮ হাজার ৭০৭ জন।
গতকাল বৃহস্পতিবার একযোগে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং আলিম, এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা), এইচএসসি (ভোকেশনাল) ও ডিপ্লোমা-ইন- বিজনেস স্টাডিজ (ডিআইবিএস) পরীক্ষা ২০১৮’র ফল প্রকাশ করা হয়েছে। দুপুরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে সব বোর্ডের ফল ঘোষণা করেন। এ সময় শিক্ষা সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ বোর্ড চেয়ারম্যানও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এবারের এইচএসসি ও সমমানের ফল তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবসহ বোর্ড চেয়ারম্যানরা। প্রধানমন্ত্রী এবার একটি মাত্র জেলা নেত্রকোনা জেলার প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে একটি করে সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, কারিগরি কলেজের সেরা শিক্ষার্থী, অধ্যক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে এইচএসসির ফল নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন। দুপুরের পর থেকে কলেজ ও কেন্দ্রগুলোতে ফলাফল পাওয়ার পর সারা দেশে এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক ও স্বজনদের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস করতে দেখা গেছে।
এ বছর কোনো শিক্ষার্থী পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। এবার এমন কলেজের সংখ্যা ৫৫টি। গত বছর ছিল ৭২টি। গত বছরের চেয়ে এ সংখ্যা কমেছে ১৭টি। ফলাফলের সব সূচকেরই অবনতি ঘটেছে এবার। তবে ফলাফলের এ হার ও সূচককে বিপর্যয় বলতে নারাজ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, দিন দিন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই পাসের হার বা জিপিএ ৫ কমছে। একে ইতিবাচকই বলছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ ছাড়া পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করায় এমনটি ঘটেছে।
গতকাল দুপুরে প্রকাশিত এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের যে তথ্য দেয়া হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এবার (২০১৮ সালে) সব বোর্ড মিলে পরীার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৭ জন। এর মধ্যে ছয় লাখ ৮০ হাজার ৮৪৮ জন ছাত্র এবং ছয় লাখ ৭ হাজার ৯০৯ জন ছাত্রী। আটটি বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৮ জন, মাদরাসা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় ৯৭ হাজার ৭৯৩ জন এবং এসএসসি ভোকেশনালে (কারিগরি) এক লাখ ১৮ হাজার জন শিার্থী পরীায় অংশ নিয়েছিল। এদের মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮০১ জন।
এ বছর পাসের হার হচ্ছে ৬৬.৬৪ শতাংশ। আগের বছর (২০১৭) পাসের হার ছিল ৬৮.৯১ শতাংশ। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ২৬২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। কমেছে ৮ হাজার ৭০৭ জন। আগের বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার কমেছে। এবার এ সংখ্যা ৪০০টি। গত বছর ছিল ৫৩২টি। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৫৫টি। গত বছর ছিল ৭২টি। এ বছর কমেছে ১৭টি। এ হচ্ছে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ২০১৮ সালের এইচএসসি আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সামগ্রিক চিত্র।
আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ করার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরূল ইসলাম নাহিদ ফলাফলের চিত্র সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ফলাফলের এ চিত্রের জন্য আমরা প্রস্তত ছিলাম। পরীক্ষায় কম বা বেশি পাস করানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। পরীক্ষার খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে এখন এবং শিক্ষার মান বাড়ছে। শিক্ষার মান বাড়াতেই এসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং হবে। এখানে কোনো কিছুকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই।
নাহিদ বলেন, পরীক্ষা গ্রহণের পর পরীক্ষকেরা সঠিকভাবে খাতা দেখেন না বলে এতদিন অভিযোগ ছিল। বলা হতো তারা খাতার ওজন দেখে নাম্বার দেন। এতে শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। কয়েক বছর ধরে পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এখন ১২ শতাংশ খাতা পুনঃমূল্যায়ন করা হয়। নতুন পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়নের জন্য পরীক্ষকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষকের খাতা পুনঃমূল্যায়নই নয়, প্রশ্নে নমুনা উত্তরও দেয়া হয়ে থাকে পরীক্ষকদের। ফলে খাতা সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছে।
৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ও জিপিএ ৫ : ৮টি সাধারণ শিা বোর্ডের মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি এবার বরিশাল বোর্ডে। এ বোর্ডে পাস করেছে ৭০ দশমিক ৫৫ শতাংশ পরীক্ষার্থী। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৭০ জন। আর সবচেয়ে কম পাসের হার দিনাজপুর বোর্ডে ৬০.২১ শতাংশ। অর্থাৎ এ বোর্ডে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। তবে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৯৭ জন। এ ছাড়া ঢাকা বোর্ডে পাস করেছে ৬৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৯৩৮ জন। রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৬৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে চার হাজার ১৩৮ জন। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬০ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৯ জন। কুমিল্লা বোর্ডে পাস করেছে ৬৫ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৪৪ জন। চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬২ দশমিক ৭৩ শতাংশ পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬১৩ জন। সিলেট বোর্ডে ৬২ দশমিক ১১ শতাংশ পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৭৩ জন। এই ৮টি বোর্ডের মধ্যে মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৫ হাজার ৫৬২ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগ থেকে পেয়েছে ২৮ হাজার ৯৩৫ জন।
মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে গড় পাসের হার : মাদরাসা বোর্ডের পাসের হার ৭৭ দশমিক ০২ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৮১৫ জন। কারিগরি বোর্ডের পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৬৬৯ জন। মানবিক, ইসলাম শিক্ষা, সংগীতে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭২৬ জন। ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার ৬৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ হাজার ৫৮১ জন।
শত ভাগ পাস ও শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে : এবারের ফলাফলে সব বোর্ডে মিলে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান ৪০০টি। গত বছর ছিল ৫৩২টি। এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১৩২টি। আর কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার গত বছরের চেয়ে কমেছে। এবার শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৫টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৭২টি। এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১৭টি। ফলাফলে এ দু’টি সূচক কমাকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার মানের উন্নতির লক্ষণ।
পাসের হার মেয়েরা ও মেধায় ছেলেরা এগিয়ে : পাসের হারের বিবেচনায় এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছে। তবে মেধায় ছাত্ররা এবারো এগিয়ে। এবার মোট ৬ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৮ জন ছাত্র অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে পাস করেছে চার লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৮ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫ হাজার ৫৮১ জন। ৬ লাখ ৭ হাজার ৯০৯ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৮৪৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৬৮১ জন।


আরো সংবাদ



premium cement